ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনা বিভাগের ১০ জেলার পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

খুলনা বিভাগের ১০ জেলার পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ টানা ৩৬ ঘণ্টা জনদুর্ভোগের পর খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার হয়েছে। যদিও সোমবার দুপুরে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হয় কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। ঢাকাসহ সারাদেশের সঙ্গে এ বিভাগের সড়কপথের যোগাযোগ সচল হয় আবারও। রবিবার সকাল ৬টা থেকে ধর্মঘট শুরু হয়। এদিকে ধর্মঘটের কারণে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়েছে ১০ জেলার যাত্রীদের। বিশেষ করে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসা যাত্রীদের ভোগান্তি হয়েছে অবর্ণনীয়। খোলা আকাশের নিচে রাত কাটিয়েছেন অনেকেই। চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের একটি বাসের চালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদ-াদেশ দেয়ার প্রতিবাদে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন দক্ষিণ-পশ্চিম আঞ্চলিক কমিটি খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয়। ধর্মঘটের কারণে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার কোথাও থেকে যাত্রী বা পণ্যবাহী কোন পরিবহন ছেড়ে যায়নি। সোমবার সকাল থেকে গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জসহ তিনটি জেলা ধর্মঘটে যোগ দেয়। এতে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েন। ২০১১ সালে মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ, সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় গত বুধবার আদালত বাসচালককে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়। দ-াদেশ ঘোষণার পর থেকে চুয়াডাঙ্গায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন স্থানীয় পরিবহন শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহে শ্রমিকরা বিক্ষোভ সমাবেশ এবং রাস্তা অবরোধ করেন। চিকিৎসা শেষে ভারত থেকে আসা কানু গোস্বামী জানান, ধর্মঘটের বিষয়টি মোটেই জানা ছিল না। রবিবার সকালে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেনাপোলে পৌঁছি। তারপর ধর্মঘটের খবর পাই। তিনি জানান, গ্রীন লাইন ও সোহাগের কাউন্টারে দিনভর বসে থাকার পর বিকেলে জানানো হয় ধর্মঘট প্রত্যাহারের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। তারপর কাউন্টারে থাকা সব যাত্রীকে বের করে দেয়া হয়। আরেক যাত্রী জানান, বেনাপোলে রবিবার থেকে হাজার হাজার মানুষের ভিড়। বেশিরভাগ যাত্রীই ঢাকার। অন্যান্য জেলারও কমবেশি রয়েছেন। তিনি বলেন, রবিবার বিকেলে বেনাপোলে কোন হোটেলে থাকার ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়নি। কোথাও রুম খালি নেই। খাবারের হোটেলেও ছিল দীর্ঘ লাইন। খোলা আকাশের নিচে অসংখ্য যাত্রী রাত কাটিয়েছেন। ঢাকার যাত্রীরা জনকণ্ঠকে জানান, সোমবার সকালে ব্যাটারিচালিত অটোরিক্সায় যশোরের উদ্দেশে ঝুঁকি নিয়ে অনেকেই রওনা দেন। রাস্তায় বিভিন্ন পয়েন্টে শ্রমিকদের অবরোধ। কয়েক দফা গাড়ি ভাংচুরের চেষ্টা হয়েছে। যশোরে এসে বিমানের কোন টিকেট পাওয়া যায়নি। রেলস্টেশনে গিয়েও কোন টিকেট মিলেনি। এরপর যশোর থেকে ট্রেনে ঈশ্বরদী গিয়ে বাসে ঢাকা রওনা দেয়ার কথা জানান এক যাত্রী। আরেক যাত্রী মিঠু জানান, যশোরে আসার পর দুপুরে খবর পাওয়া যায় ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। কিন্তু সন্ধ্যার আগে ঢাকার বাস ছাড়বে না। এরপর অপেক্ষা। ১০টার বাসে টিকেট কেটে রওনা দেয়ার কথা জানান তিনি। জনদুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রেখে সোমবার দুপুর ১২টায় খুলনা সার্কিট হাউসে প্রশাসনের সঙ্গে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সভায় ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয় বলে জানান খুলনা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লব ও খুলনার ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার ফারুক হোসেন। সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে দুপুরের পর খুলনা জেলায় ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। এছাড়া বিভাগের বাকি ৯ জেলায় সন্ধ্যা ৭টা থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়। নিরাপদ সড়ক চাইয়ের (নিসচা) খুলনা জেলা সাধারণ সম্পাদক এসএম ইকবাল হোসেন বিপ্লব সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে বাস মালিক ও শ্রমিকরা অযৌক্তিকভাবে ধর্মঘট করছে। এ ধর্মঘট আদালত অবমাননার শামিল। তিনি বলেন, শুধু তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের ঘটনাই নয়, বড় বড় দুর্ঘটনার জন্য দায়ী চালকদের সাজা হলে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে। জামিরের মুক্তির দাবিতে রায় ঘোষণার দিন থেকেই চুয়াডাঙ্গায় অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট শুরু হয়। এরপর নয় জেলার মধ্যে রয়েছেÑ খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মাগুরা, মেহেরপুর ও কুষ্টিয়া। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন খুলনার অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (সার্বিক) মোহাম্মদ ফারুক হোসেন। এ সময় খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদ, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) সুবাস চন্দ্র সাহা, খুলনা জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহবুব হাকিম, ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ, র‌্যাব-৬-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ এনায়েত হোসেন মান্নান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ নূর-ই-আলম, খুলনা বিভাগীয় ট্রাক-বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল গাফ্ফার বিশ্বাস, খুলনা বিভাগীয় ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী মোঃ সরওয়ার হোসেন ও মহিষপুরা-খুলনা আন্তঃজেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মহাদেব দাস উপস্থিত ছিলেন। সভায় ধর্মঘটের কারণে জনগণের ভোগান্তি, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যবৃদ্ধি, কৃষিপণ্য নষ্ট হয়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন নাগরিক সমস্যা তুলে ধরে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এছাড়া সাজাপ্রাপ্ত বাসচালকের বিষয়ে আইনগতভাবে মামলা মোকাবেলার পরামর্শ প্রদানের জন্য শ্রমিক নেতাদের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। প্রশাসনের অনুরোধের প্রেক্ষিতে মোটর শ্রমিক নেতৃবৃন্দ কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের সঙ্গে তাৎক্ষণিক কথা বলে জনস্বার্থে পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারে সম্মত হন। পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারে সম্মত হওয়ায় খুলনা বিভাগীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিবহন শ্রমিক নেতাদের আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ জানানো হয়।
×