ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিফাতের স্বামীর ১০ বছর জেল, তিন আসামি খালাস

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সিফাতের স্বামীর ১০ বছর জেল, তিন আসামি খালাস

রাবি সংবাদদাতা ॥ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী গৃহবধূ ওয়াহিদা সিফাত হত্যা মামলায় সিফাতের স্বামী মোঃ আসিফ পিসলিকে ১০ বছরের কারাদ- এবং অন্য তিন আসামিকে খালাস দিয়েছে আদালত। সোমবার ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৩ এর বিচারক সাঈদ আহম্মেদ আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। আদালতের রায়ে হতাশা প্রকাশ করেছে সিফাতের পরিবার ও বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। তারা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপীল করবেন বলে জানিয়েছেন। সিফাতের মা ফারজানা বানু মোবাইলে বলেন, আসামিরা সবাই প্রভাবশালী। আমরা তাদের কাছে হেরে গেছি। এ রায়ে আমরা হতাশ। আমরা অবশ্যই উচ্চ আদালতে আপীল করব। তিনি আরও বলেন, আমার মেয়েকে হত্যার সব আলামত আছে। শরীরের জখম ছিল। ওরা আমার মেয়ের হাতটিও ভেঙ্গে দিয়েছিল। প্রথম ময়নাতদন্তে সেগুলো প্রকাশ করা হয়নি। দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করে পরে সেগুলো প্রকাশ করা হয়েছে। আসামিরা বরাবরই প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছিল। সব প্রমাণাদি আছে, নথি আছে। এরপরেও এমন রায়ে আমরা হতাশ। সিফাতের সহপাঠী মেহেরুল সুজন বলেন, কয়েক দফা ময়নাতদন্তের পর মৃত্যুর কারণ আঘাতজনিত অর্থাৎ ‘হত্যা’ বলা হলেও এ রায়ে আমরা সন্তুষ্ট হতে পারছি না। যেহেতু আদালত বলছে, এ ঘটনায় রহস্য উদঘাটন করা হয়নি সেহেতু আদালত যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে প্রকৃত রহস্য উদঘাটন করবে এটাই আমাদের প্রত্যাশা। বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পা-ে বলেন, সিফাতের দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে ‘হত্যা’ হিসেবে অনেকটা প্রমাণিত হওয়ার পরেও এ ধরনের রায় আমাদের হতাশ করেছে। এ দ-ে আমাদের সন্তুষ্ট হওয়ার কোন কারণ নেই। রায়ে হতাশা প্রকাশ করে বিভাগের শিক্ষার্থী অধরা মাধুরী, রাইসা জান্নাত ও ফারুক খান বলেন, আদালতের প্রতি আমাদের যথেষ্ট আস্থা রয়েছে। কিন্তু দুই বারের ময়নাতদন্তে দুই ধরনের প্রতিবেদন দাখিল করেও চিকিৎসককে খালাস দেয়া আমাদের হতাশ করেছে। এ রায় পুনর্বিবেচনায় নিয়ে দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি। মামলার নথি থেকে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ২৯ মার্চ সন্ধ্যায় মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় এ্যাডভোকেট হোসেন মোহাম্মদ রমজানের বাড়িতে রহস্যজনক মৃত্যু হয় গৃহবধূ ওয়াহিদা সিফাতের। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন ছিল। প্রথমে সিফাত আত্মহত্যা করেছে বলে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন দাবি করলেও দ্বিতীয় দফার ময়নাতদন্তে এটি হত্যাকা- বলে প্রমাণ হয়। এ ঘটনায় ওই বছরের ২ এপ্রিল রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া থানায় সিফাতের চাচা মিজানুর রহমান খন্দকার সিফাতের স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ির নাম উল্লেখ করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০ ধারায় যৌতুকের দাবিতে হত্যা ও সহায়তা করার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের মর্গে করা প্রথম ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে চিকিৎসক জোবাইদুর রহমান উল্লেখ করেন, সিফাত আত্মহত্যা করেছিলেন। তবে দ্বিতীয় ময়নাতদন্তে হত্যার প্রমাণ মেলে বলে জানানো হয়। রংপুর মেডিক্যাল কলেজে করা দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়, আঘাতজনিত কারণে সিফাতের মৃত্যু হয়েছিল। সিফাতের শ্বশুর রমজান রাজশাহী আদালতের একজন আইনজীবী এবং বিচারকের প্রতি অনাস্থা সৃষ্টি হওয়ায় বাদীপক্ষের আবেদনের ভিত্তিতে গত বছরের ১২ জুলাই মামলাটি রাজশাহী থেকে ঢাকার দ্রুতবিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। এর আগে গত বছরের ২৩ মার্চ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আহম্মেদ আলী চারজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। দ-প্রাপ্ত আসিফ পিসলি বাদে মামলার খালাস পাওয়া অন্য আসামিরা হলেন সিফাতের শ্বশুর হোসেন মোহাম্মদ রমজান, শাশুড়ি নাজমুন নাহার নাজলী এবং প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জোবাইদুর রহমান। এই তিন আসামি আগে থেকেই জামিনে ছিলেন। আর সিফাতের স্বামী ছিলেন কারাগারে। তবে রায় ঘোষণার সময় সব আসামিই আদালতে হাজির ছিলেন।
×