ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

এমপি লিটন হত্যা

কিলারদের সঙ্গে মোবাইলে সারাক্ষণ যোগাযোগ রাখত কাদের খান

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

কিলারদের সঙ্গে মোবাইলে সারাক্ষণ যোগাযোগ রাখত কাদের খান

নিজস্ব সংবাদদাতা, গাইবান্ধা, ২৭ ফেব্রুয়ারি ॥ গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সরকারদলীয় এমপি মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যায় কাদের খান কিলারদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে কিলিং মিশন বাস্তবায়ন করেছে। এমনকি তিনি বগুড়ায় নিজ বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে তার গাড়িতেই কিলারদের ঢাকার বাসে তুলে দিয়ে নিরাপদে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। পুলিশের কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে কাদের খান নিজেই এসব তথ্য দিয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। এছাড়া লিটন হত্যার পর গত ৬ মাসে কাদের খানের প্রায় ১০ হাজার ফোনালাপ ট্র্যাকিং করে পুলিশ আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানতে পেরেছে, যা তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করা হয়নি। জানা গেছে, কাদের খান নিজ বাড়িতে নিজের লাইসেন্সবিহীন অবৈধ পিস্তলের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে মেহেদী হাসান, শামীম ম-ল, শাহীন, রানাকে নিয়ে যে কিলার গ্রুপটি গড়ে তুলেছিল তারা মাদকাসক্ত ছিল এবং সুন্দরগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছিনতাই ও রাহাজানি করে বেড়াত। এসব ছিনতাইয়ের ঘটনায় কাদের খানের ওই অবৈধ পিস্তল এবং তার দেয়া বুলেটই ব্যবহৃত হতো। যে কারণে কাদের খান তার লাইসেন্স করা পিস্তলে ব্যবহারের জন্য ক্রয়কৃত ৪০ রাউন্ড বুলেটের সঠিক হিসাব পুলিশকে দিতে পারেনি। পিস্তল ও বুলেট জব্দ করার সময় সে মাত্র ১০ রাউন্ড বুলেট জমা দেয়। বাকি ৩০ রাউন্ড বুলেটের হিসাব সে দিতে পারেনি। এর মধ্যে শুধু ৫ রাউন্ড বুলেট এমপি লিটনের খুনে ব্যবহৃত হয়েছে এবং ১ রাউন্ড তার বাড়িতে প্রশিক্ষণকালে অসাবধানতাবশত মিস ফায়ার হয়। সে হিসেবে ২৪ রাউন্ড বুলেট প্রশিক্ষণসহ ছিনতাই ও রাহাজানি কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। এমপি লিটনের কিলাররা গত ১ ডিসেম্বর গাইবান্ধা-সুন্দরগঞ্জ সড়কে ধোপাডাঙ্গায় ফাইম নামে এক যুবকের কাছ থেকে তার মোবাইল ও টাকা ছিনতাই করে। কাদের খানের বাড়িতে এখনও পুলিশ ॥ সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ছাপড়হাটি ইউনিয়নের পশ্চিম ছাপড়হাটি খানপাড়া গ্রামের বাড়িতে এখনও পুলিশ ঘিরে রেখেছে। কাউকেই সেখানে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। এদিকে সুন্দরগঞ্জ ও পার্শ্ববর্তী এলাকার উৎসুক মানুষ প্রতিদিন কাদের খানের বাড়ি দেখতে ভিড় জমাচ্ছে। সেই সঙ্গে তারা কাদের খানের সম্পর্কে নানা বিরূপ মন্তব্য এবং ঘৃণা প্রকাশ করছে। একজন জনপ্রিয় এমপি লিটনকে খুন করায় তারা জাতীয় পার্টির প্রতিও তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছে। সোমবার সরেজমিনে ওই এলাকা পরিদর্শন করে এসব তথ্য জানা গেছে। হত্যার তথ্যদাতা এখনও পলাতক ॥ এমপি লিটন হত্যার অন্যতম সমন্বয়ক কট্টর লিটনবিরোধী গ্রুপের অন্যতম আওয়ামী লীগ নেতা চন্দন কুমার সরকার এখনও পলাতক রয়েছে। এছাড়া আরেক সমন্বয়ক সুবল চন্দ্র পুলিশের নজরদারিতে থাকলেও তারা এখনও গ্রেফতার এড়িয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তবে মোবাইল ফোনে রাজনৈতিক নেতাসহ বিভিন্ন স্তরের বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে জোরালো তদবির অব্যাহত রেখেছে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এমপি লিটন হত্যায় কিলিং মিশনে জড়িত গ্রেফতার হওয়া মেহেদী হাসান, শামীম ম-ল, শাহীন, রানা ও কাদের খানের গাড়িচালক আবদুল হান্নানের স্বীকারোক্তিতে এ দুইজন এমপি লিটনের বাড়ি এবং তার অবস্থান সম্পর্কে মোবাইল ফোনে তাদের তথ্য দিয়েছে। এছাড়াও তারা নানাভাবে সহযোগিতা এবং উৎসাহ দিয়েছে বলে তারা তাদের স্বীকারোক্তিতে উল্লেখ করেছে। জেলখানায় কাদের খান ॥ কর্নেল (অব) ডাঃ আবদুল কাদের খান আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দেয়ার পর শনিবার রাতেই তাকে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়। ডিভিশন না হওয়ায় তাকে সাধারণ হাজতি হিসেবে সেলে রাখা হয়েছে। সাধারণ হাজতি ও কয়েদির মতোই তাকে সকালের নাস্তা, দুপুর ও রাতের খাবার দেয়া হচ্ছে। জেলখানায় বেশিরভাগ কাদের খান বিমর্ষ এবং অস্থির অবস্থায় কখনও বসে আবার কখনও হাঁটাহাঁটি করে সময় কাটাচ্ছে। রাতেও তার নির্ঘুম সময় কাটছে বলে জানা গেছে।
×