ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় আসছে এবারের বাজেট

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় আসছে এবারের বাজেট

এম শাহজাহান ॥ প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন ও সমতাভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার পথে যাত্রা শুরুর পর এবার উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন নিয়ে নতুন বাজেট দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ছোট থেকে বড়, ধনী থেকে গরিবসহ দেশের সবাইকে ভাল রাখার প্রয়াস থাকবে আগামী বাজেটে। পুরোপুরি দারিদ্র্যবিমোচন ও কর্মসংস্থানে ব্যাপকভিত্তিতে শিল্পায়নের বিকাশ ঘটানোর উদ্যোগ নেয়া হবে। এলক্ষে চলতি বাজেটের চেয়ে আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটের আকার বাড়ানো হচ্ছে। বাজেটের সম্ভাব্য আকার করা হতে পারে ৪ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি বাজেটের চেয়ে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা বেশি। বড় অঙ্কের এই বাজেট বাস্তবায়ন ও অর্থসংস্থানে জোর দেয়া হবে রাজস্ব আদায়ে। এখন পুরোদমে বাজেট তৈরির কাজ করছে অর্থমন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশ ধরা হলেও আগামী অর্থবছরে তা নির্ধারণ করা হচ্ছে ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। রূপকল্প-২১ বাস্তবায়নে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে প্রবৃদ্ধি দুই অঙ্কের ঘরে নিয়ে যাওয়ার একটি পরিকল্পনা রয়েছে। নতুন অর্থবছরের এডিপির আকার সব কিছু মিলিয়ে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি চলে যেতে পারে। আগামী ১ জুন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে এই বাজেট প্রস্তাবনা উপস্থাপন করবেন। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়গুলো বাজেট বাস্তবায়নের অগ্রগতি এবং আগামী বাজেটে কি কি বিষয় করতে চায় সে সংক্রান্ত প্রস্তাব অর্থমন্ত্রণালয়ে পাঠাতে শুরু করেছে। অর্থমন্ত্রণালয়ের বিদায়ী সিনিয়র সচিব মাহবুব আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, বাজেট তৈরির কাজ আগেই শুরু করা হয়েছে। এখন পুরোদমে কাজ চলছে। ইতোমধ্যে মন্ত্রণালয়গুলো বাজেট নিয়ে তাদের নিজস্ব মতামত ও প্রস্তাব পাঠাতে শুরু করছে। এছাড়া স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে বসা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ, বিশেষজ্ঞ এবং গবেষকদের সঙ্গে বাজেট নিয়ে আলোচনা শুরু করা হয়েছে। সবার পরামর্শ ও মতামত নিয়ে আগামী অর্থবছরের জন্য একটি ভাল বাজেট ঘোষণা করা হবে। এদিকে, ররিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস), পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই), ইকনোমিক রিসার্চ গ্রুপ (ইআরজি) এবং অর্থনীতি সমিতির অর্থনীতিবিদ ও গবেষকদের সঙ্গে আগামী বাজেট নিয়ে মতবিনিময় করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। একই স্থানে দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ ও পেশাজীবীদের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী আলোচনায় বসবেন ৯ মার্চ বেলা সাড়ে ১২টায়। অন্য বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও আগামী বাজেট তৈরির জন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান, সাংবাদমাধ্যম, পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনা শুরু করেছেন অর্থমন্ত্রী। শীঘ্রই এনবিআরের পক্ষ থেকে সংস্থাটির চেয়ারম্যান ব্যবসায়ী ও স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে প্রাক বাজেট আলোচনা শুরু করবেন। এছাড়া ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইতেও বিভিন্ন এ্যাসোসিয়েশন ও চেম্বার থেকে প্রস্তাব পাঠানো হবে। এসব প্রস্তাবনা পরে এনবিআরের হাতে তুলে দেয়া হবে। এসব বৈঠকের সুপারিশের প্রতিফলন দেখা যাবে আগামী বাজেটে। এভাবে বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে অর্থমন্ত্রী আগামী ১১ মে পর্যন্ত এই আলোচনা চালিয়ে যাবেন। এছাড়া নতুন অর্থবছর থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হবে। সে লক্ষ্যেই কাজ করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর। এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন হলে ভ্যাট জিডিপি বাড়বে দেড় শতাংশ। আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হচ্ছে। এ লক্ষ্যে এনবিআর প্রস্তুতি সম্পন্ন করে এনেছে। তিনি বলেন, আমরা জনগণকে ভ্যাট আইন জানাতে চাই। এক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যম বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির প্রাক্কলন করা হচ্ছে সাড়ে ৫ শতাংশ। বাজেটের ঘাটতি থাকবে জিডিপির অংশ হিসেবে ৫ শতাংশ। এছাড়া বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি কমিয়ে আনার পদক্ষেপ থাকবে। বর্তমান বাজেটে এই ভর্তুকি রয়েছে ২৩ হাজার কোটি টাকা। এটি কমিয়ে ২০ হাজার কোটি টাকা করা হতে পারে। আগামী অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের প্রাক্কলন করা হতে পারে ২ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি, চলতি অর্থবছরে যা ছিল ২ লাখ তিন হাজার ১৫২ কোটি টাকা। জানা গেছে, আগামী বাজেটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার খাতগুলো হচ্ছে-শিক্ষা ও স্বাস্থ্য। এর পরই মানবসম্পদ উন্নয়নে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হবে। ভবিষ্যত প্রজন্মকে এগিয়ে নিতে এবারের মতো শিশুদের জন্য আলাদা বাজেট প্রণয়ন করা হবে। নারী অধিকার রক্ষা এবং অর্থনীতির মূল ধারায় নারীদের নিয়ে আসতে আবারও জেন্ডার বাজেট ঘোষণা করবে অর্থমন্ত্রণালয়। পদ্মা সেতুসহ দ্রুত সময়ে বাস্তবায়িত করা হবে মোট ১০টি প্রকল্প। ভূমিকম্পের মতো দুর্যোগ থেকে রক্ষায় যন্ত্রপাতি ক্রয়ে বাজেটে বাড়তি বরাদ্দ রাখা হবে। এজন্য বিল্ডিং কোড পরিবর্তন করবে সরকার। এছাড়া আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। এলক্ষ্যে বাজেট ঘাটতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে। জ্বালানি তেলের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সমন্বয় করা হতে পারে যাতে মূল্যস্ফীতি হ্রাস পায় এবং মুদ্রার বিনিময় হার কাক্সিক্ষত পর্যায়ে থাকে। এছাড়া আসছে বাজেটে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে ৬টি খাতে আর তা হলো-স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়নসহ সার্বিক মানবসম্পদ উন্নয়ন, বিদ্যুত, জ্বালানি, সড়ক, রেলপথ ও বন্দরসহ ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন, কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন ও কর্মসৃজন প্রকল্প, সরকারী সেবা প্রদানে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন, জলবায়ু মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জন এবং বহির্বিশ্বের অর্থনৈতিক সুযোগ অধিকতর ব্যবহার ও প্রবাস আয় বৃদ্ধি এবং নতুন নতুন রফতানি বাজার অনুসন্ধান। এছাড়া নতুন বাজেটে যে বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে তা হচ্ছে-চল্লিশটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জেন্ডার বাজেট রিপোর্ট প্রণয়ন, স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণ ও এ সংক্রান্ত একটি নতুন ধারণাপত্র প্রণয়ন এবং শিশু বাজেট ও ডিজিটাল বাংলাদেশের পথে অগ্রযাত্রা হালনাগাদ করা। পাশাপাশি পদ্মা সেতুসহ ১০ মেগা প্রকল্পের জন্য আগামী বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানো হচ্ছে। উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনে চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে ১০টি মেগা প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
×