ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে শর্করা স্বল্পতার বিপদ

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ডায়াবেটিস রোগীর রক্তে শর্করা স্বল্পতার বিপদ

৪৭ শতাংশ টাইপ ২ ডায়াবেটিক ও ৭৩ শতাংশ টাইপ ১ ডায়াবেটিক জীবনে কোন না কোন সময় রক্তে শর্করা কমে যাবার অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন বা হতে পারেন। রোগীদের কাছে এই সমস্যাটি ‘হাইপো’ হওয়া বা ‘সুগার নিল হয়ে যাওয়া’ নামে পরিচিত। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে হাইপোগসøাইসেমিয়া। হাইপোগসøাইসেমিয়া ডায়াবেটিক রোগীদের একটি জরুরী ও ভীতিকর অবস্থা। যেহেতু শর্করা হচ্ছে মস্তিষ্কের একমাত্র শক্তি সরবরাহকারী উপাদান; তাই কয়েক মিনিট এই সরবরাহ বন্ধ থাকলে রোগী অজ্ঞান বা অচেতন হয়ে যেতে পারে, মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে এমনকি রোগী চিরদিনের জন্য কোমায় চলে যেতে পারে বা মৃত্যু হতে পারে। হাইপোগসøাইসেমিয়া রোগীর কর্মক্ষমতা নষ্ট করে, আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরায়, হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় ও ভুলে যাওয়া বা বুদ্ধিবৃত্তির ক্ষয়কে ত্বরান্বিত করে। তাই যেকোন ডায়াবেটিক রোগীরই উচিত হাইপোগসøাইসেমিয়ার কারণ ও লক্ষণগুলোকে শনাক্ত করার এবং প্রতিরোধ করার যথাযথ প্রশিক্ষণ অর্জন করা। শর্করা কমে যাবার কারণ সময়মত খাবার খেতে দেরি করা, ভুলে যাওয়া বা এক বেলার খাবার বাদ দেয়া, নির্দিষ্ট পরিমাণের চেয়ে কম খাওয়া। ওষুধ বা ইনসুলিনের মাত্রা অতিরিক্ত হয়ে যাওয়া। হঠাৎ করে অতিরিক্ত পরিশ্রম বা ব্যায়াম করা। ডায়াবেটিসের সঙ্গে কিডনি ও যকৃতের জটিলতা। লক্ষণগুলো চিনে নিন বুক ধরফড় করা, কাঁপুনি, প্রচ- ঘাম, বিভ্রান্তি, মনোযোগে ঘাটতি, চোখে ঝাপসা দেখা, মাথা ব্যথা। অস্বাভাবিক আচরণ, অচেতন হয়ে পড়া ও খিচুনি। করণীয় কী শর্করা কমে যাবার লক্ষণ টের পাবার সঙ্গে সঙ্গে সম্ভব হলে গ্লকোমিটার যন্ত্রের সাহায্যে রক্তে শর্করা মেপে নিন। যদি ৩.৯ মিলিমোল বা তার নিচে চলে গিয়ে থাকে তবে হাইপোগ্লাইসেমিয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া যায়। গ্লুকোমিটার না থাকলেও কেবল লক্ষণ বিবেচনা করেই সঙ্গে সঙ্গে চিনির সরবত, জুস, মিষ্টিদ্রব্য, চকোলেট ইত্যাদি খেয়ে নিন। এতে রক্তে শর্করা আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যাবে। তবে যতক্ষণ ওষুধ বা ইনসুলিনের কার্যকারিতা রয়েছে ততক্ষণ পর্যন্ত বার বার শর্করা কমে যাবার প্রবণতা থেকে যাবে। তাই একটু পর পর কিছু খাবার গ্রহণ করুন। হাইপোগ্লাইসেমিয়ার কারণ অনুসন্ধান করুন ও প্রতিকারের চেষ্টা করুন। নতুন করে ওষুধ বা ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক করার জন্য চিকিৎসকের সঙ্গে পরার্মশ করুন। তবে উপরের এই কাজগুলো আপনি তখনই করতে পারবেন যদি আপনি পূর্ণমাত্রায় সচেতন থাকেন। তা না হলে রোগীর স্বজন বা পাশের মানুষটিকেই এইসব পদক্ষেপ নিতে হবে। রোগী অচেতন হয়ে পড়লে শিরায় গ্লুকোজ দেবার জন্য অতিদ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। প্রতিরোধ ডায়াবেটিস চিকিৎসার মূলমন্ত্র হলো সুশৃঙ্খল জীবনযাপন। ঠিক সময়মতো ও পরিমাণ মতো খাদ্য গ্রহণ করুন। কখনই এক বেলার খাবার বাদ দেবেন না। মূল খাবারের মধ্যবর্তী সময়গুলোতে হাল্কা নাস্তা খাবার অভ্যাস করুন। বাইরে যাবার সময় সঙ্গে কিছু বহনযোগ্য খাবার রাখুন। নিয়মিত রক্তে শর্করা পরিমাপ করে সে অনুযায়ী ওষুধ বা ইনসুলিনের মাত্রা ঠিক করার জন্য পরামর্শ নিন। বিশেষ ক্ষেত্রে, যেমন শারীরিক অসুস্থতা, বমি, ডায়রিয়া, জ্বর, অরুচি বা বয়োবৃদ্ধদের বেলায় বিশেষ সচেতনতা দরকার। রাতে শর্করা কমে যাবার প্রবণতায় ঘুমানোর আগে হাল্কা কিছু খাওয়া এবং রাতের ওষুধ ও ইনসুলিনের মাত্রা পুনর্বিবেচনা করুন। খালি পেটে অনেক ব্যায়াম করবেন না। যাদের বার বার এই সমস্যা হয় তাদের জন্য দীর্ঘস্থায়ী ওষুধের চেয়ে ক্ষণস্থায়ী ওষুধ এবং সাধারণ ইনসুলিনের চেয়ে আধুনিক নতুন প্রজন্মের এ্যানালগ ইনসুলিন নিরাপদ। এতে সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। ডা. তানজিনা হোসেন হরমোন ও ডায়াবেটিস বিভাগ বারডেম হাসপাতাল
×