ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

খরস্রোতা পুনর্ভবা এখন মরা খাল

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

খরস্রোতা পুনর্ভবা এখন মরা খাল

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ নওগাঁর সীমান্তবর্তী সাপাহার উপজেলার ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষে বয়ে যাওয়া এক কালের খরস্রোতা পুনর্ভবা নদীতে পানি নেই। চৈত্রের কাঠফাটা খরা শুরুর আগেই নদীটি এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। পানির পরিবর্তে বুকভরা বালি নিয়ে নদীটি এখন মরা খাল হয়ে শুধুই তার স্মৃতি বহন করে চলেছে মাত্র। জানা গেছে, নদীটি ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর ও মালদহ জেলার মধ্যবর্তী স্থান দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ভারতের গঙ্গারামপুর থেকে বামন গোলা ও তপন থানার বটতলী এবং লক্ষ্মীনারায়ণ গ্রামের কোল ঘেঁষে বাংলাদেশের সাপাহার উপজেলার পাতাড়ী, হাঁড়িপাল, আদাতলা, কলমুডাঙ্গা ও পোরশা উপজেলার দুয়ারপাল, নিতপুরের কোল ঘেঁষে গোমস্তাপুর হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার মহানন্দা নদীতে মিলিত হয়েছে। এলাকার প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, এককালে বারো মাসই বহমান ছিল এই পুনর্ভবা নদী। ব্রিটিশ ও পাকিস্তান শাসনামলে এলাকার সব রাস্তাঘাটগুলো অবহেলিত অবস্থায় থাকায় সে সময়ে এই নদীই ছিল বিভিন্ন শহরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র পথ। নদীর বুক চিরে ছোট-বড় নানা রকম নৌকা দিয়ে মানুষ প্রয়োজনের তাগিদে এক স্থান থেকে অন্যস্থানে যাতায়াত করে থাকত। এমনকি নদীতে বিয়ের বরযাত্রীদের নৌকার বহরও চোখে পড়ত। এক সময় এ নদীতে চলতো মালবোঝাই ছোট-বড় নৌকা, লঞ্চ, স্টিমার। নৌকায় করে মানুষ তাদের উৎপাদিত ফসল ধান, গমসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য বহন করত চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রহনপুর হাটে। অনেকেই বিভিন্ন কাজে এ পথে নৌকা যোগে রহনপুরে গিয়ে ট্রেন যোগে রাজশাহী, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে গিয়ে থাকত। সে সময় পাতাড়ীর কাবলীর ঘাটসহ বিভিন্ন ঘাটে ঘাটে নৌকা ভিড়ত। অতীতে এলাকায় কোন গভীর, অগভীর নলকূপ না থাকায় ঠাঁঠাঁ বরেন্দ্র এলাকায় এ নদীর পানি সেচ কাজে ব্যবহার করে এলাকার মানুষ শত শত একর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফসল উৎপাদন করত। বর্তমানে দেশের শহর বন্দরসহ গ্রামাঞ্চলের প্রায় সর্বত্রই উন্নয়নের ছোঁয়াসহ নদীর উজানে ভারতীয় অংশে ভারত সরকারের বাঁধ নির্মাণের ফলে পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হওয়ায় কালের আবর্তনে হারিয়ে গেছে নদীর শাসনব্যবস্থা আর নদীও হারিয়ে ফেলেছে তার নাব্য। এখন অতি সহজে মানুষ বাস, ট্রাক যোগে স্বল্প সময়ে পৌঁছে যাচ্ছে তাদের গন্তব্যে। সহজেই তারা তাদের বিভিন্ন মালামাল পরিবহন করতে পারছে। এখন নদীপথের প্রয়োজন অনেকটাই ফুরিয়ে যাওয়ার ফলে সীমান্ত এলাকার এই পুনর্ভবা নদীটি হারিয়ে ফেলেছে তার অতীত ঐতিহ্য। বর্ষাকালে বৃষ্টির পানির তোড় ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে নদীটি তার পূর্ণ যৌবন ফিরে পেলেও চৈত্র মাস আসতে না আসতেই নদীটি মরা খালে পরিণত হয়ে বুকভরা বালি নিয়ে শুধুই স্মৃতি হয়ে থাকে। খরা মৌসুমে হঠাৎ কেউ দেখলে মনেই হবে না এটি একটি নদী। বর্তমানে সীমান্ত ঘেঁষা এই পুনর্ভবা নদীটি ড্রেজিং ব্যবস্থায় সংস্কার করে তার নাব্যকে ফিরিয়ে আনলে নদীটি ফিরে পেত তার পূর্ণ যৌবন। সেই সঙ্গে কৃষিকাজে ব্যবহার হতো তার পানি। উপকৃত হতো নদীপাড়ের হাজার হাজার মানুষ। বর্তমান সরকার সীমান্তবর্তী এ অঞ্চলের জনসাধারণের কষ্টের কথা চিন্তা করে এই নদীর বুকে কলমুডাঙ্গা ও হাপানিয়া ঘাটে দুটি ব্রিজ নির্মাণ করেছে। বর্তমানে নদীটির উত্তরে দেশের অভ্যন্তরে উৎপত্তিস্থল উত্তর পাতাড়ী গ্রাম থেকে দক্ষিণে প্রায় ২ কিলোমিটার দেশের অভ্যন্তরে নদীর পূর্ব পাড়ে বাঁধ নির্মাণের প্রক্রিয়া চলছে।
×