ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গার্মেন্টে সংস্কারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ছোট কারখানা

প্রকাশিত: ০৪:০৬, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

গার্মেন্টে সংস্কারে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ছোট কারখানা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ তৈরি পোশাক খাতে সংস্কার ও আধুনিকায়নে ছোট কারখানাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে একটি গবেষণায় উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির আরবান ল্যাবের উদ্যোগে পরিচালিত এই গবেষণায় পোশাক খাতের সমস্যা ও সম্ভাবনা খুঁজে দেখেন গবেষক মাহমুদ হোসেন। যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রানসিসকো স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক মাহমুদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে তৈরি পোশাক খাতে সংস্কার, আধুনিকায়ন ও অন্যান্য নিয়ম-কানুন মানতে গিয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ছোট কারখানাগুলো। সংস্কার, আধুনিকায়ন করতে গিয়ে কারখানা বন্ধ, শ্রমিক ছাঁটাই, পুঁজি হারিয়ে ফেলছে উদ্যোক্তারা। উদ্যোক্তা হারিয়ে যাওয়া এ খাতের জন্য বড় একটি সমস্যা। এ বিষয়গুলোর দিকে নজর দিতে হবে। ২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর এ্যাকর্ড, এ্যালায়েন্স ও ন্যাশনাল এ্যাকশন প্লানের সংস্কারমূলক উদ্যোগের পর পোশাক খাতের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হয় গবেষণায়। এছাড়া অগ্নিনিরাপত্তা, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা নিয়ে কারাখানা মালিকদের বিভিন্ন উদ্যোগ, নিরাপত্তার বিষয়ে মানদ- (কমপ্ল্যায়েন্স) পূরণ করতে কারখানা মালিকদের পদক্ষেপ বিষয়ে ২৭টি প্রশ্নবোধক অনুসন্ধানের মাধ্যমে করা হয় এই গবেষণা। কারখানার আকার, উৎপাদন সক্ষমতা, অর্থিক ব্যাপ্তি, রফতানির হারকে বিবেচনায় নেয়া হয় গবেষণায়। ৩৩টি কারখানায় খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ৪৪ শতাংশ কারখানা এইচএ্যান্ডএমের কাছে পণ্য সরবরাহ করার সুযোগ পাচ্ছে। এছাড়া ওয়ালমার্টে ১৯ শতাংশ, প্রাইমার্কে ১৯ শতাংশ এবং ভিএফ কর্পোরেশনে ১৬ শতাংশ কারখানা পণ্য সরবরাহের সুযোগ পায়। মধ্যম ও বড় আকারের কারখানাগুলো পণ্য রফতানি থেকে ভাল উপার্জন করতে পারলেও ছোট পরিধির একটি কারখানাকে নেগেটিভ গ্রোথ বা লোকসান গুনতে দেখা যায়। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বলা হয়, ওয়ালমার্টের পণ্য উৎপাদনকারী কারখানাগুলো সংস্কার ও অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজে এগিয়ে আছে। বড় লেনদেন করা কারখানাগুলো কমপ্ল্যায়েন্স ইস্যুতে বেশি অর্থ খরচ করার প্রবণতা দেখাচ্ছে। উচ্চ আয়ের কারখানাগুলো আগ থেকেই এসব শর্ত পূরণের মধ্যে রয়েছে। অনুষ্ঠানে নারী উদ্যোক্তা ও মোহাম্মদী গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রুবানা হক, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির উপাচার্য আনোয়ারুল হক শরীফ, বিআইএসির প্রধান নির্বাহী তৌফিক আলী, বিআইডিএস’র সিনিয়র রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ, সিপিডির পরিচালক ফাহমিদা খাতুন, নগর ও পরিবেশবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব, বিজিএমইএ’র ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহমুদ হাসান খান বাবু, শ্রমিক নেত্রী নাজমা আক্তার বক্তব্য রাখেন। রুবানা হক বলেন, আলোচনায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসলেও কারখানা স্থানান্তরের চ্যালেঞ্জ নিয়ে তেমন আলোচনা নেই। এটি বর্তমান সংস্কার প্রক্রিয়ার বড় চ্যালেঞ্জ। নাজনীন আহমেদ বলেন, শ্রমিকরা ন্যায্য বেতনের পাশাপাশি মালিকপক্ষের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলতে চায়। মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক আন্তরিকতাপূর্ণ হলে রাগ-ক্ষোভের জায়গা কমে যায়। সেজন্য মালিক-শ্রমিকের মধ্যে সুসম্পর্ক খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক সংলাপের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে এই গবেষক বলেন, কারখানা মলিকরা কীভাবে লাভ করবে, কীভাবে সেই লাভ মালিক শ্রমিকদের মধ্যে বণ্টন হবে- বায়ারসহ আন্তর্জাতিক পক্ষ তার সমাধান দিতে পারে। বিজিএমইএর সহ-সভাপতি মাহমুদ হাসান বাবু বলেন, এ্যাকর্ড-এ্যালায়েন্সের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে যেই স্ট্যান্ডার্ডের কথা বলা হচ্ছে, প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান কিংবা কম্বোডিয়ায় তা হচ্ছে না। সম্ভবত বাংলাদেশের বাজার বড় হওয়ার কারণে এবং তৈরি পোশাক নিয়ে এই দেশের উচ্ছাকাক্সক্ষা দেখে তারা কঠিন শর্ত চাপাচ্ছে। গত ১০ বছরে ক্রেতাদের কাছ থেকে অনেক শর্ত পেয়েছি। কিন্তু তারা সুনির্দিষ্ট একটি মানদ- ঠিক করে দিচ্ছে না। একেক সময় একেক ধরনের শর্ত তৈরি হচ্ছে।
×