ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শুভ্র মণ্ডল

আমাদের শুভ রায়ের গল্প ...

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

আমাদের শুভ রায়ের গল্প ...

পাঁচ বছর বয়সে ঢাকায় সিদ্ধেশ্বরীর একটি বিদ্যালয়ে নার্সারিতে শুভ রায়কে ভর্তি করানো হয়ছিল। কিন্তু তার বাবা অশোক নাথ রায়র পেশাগত কারণে ১৯৭৪ সালে তাদের উগান্ডায় চলে যেতে হয়। সেখানে অশোক নাথ রায় চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেন। মা রতœা রায় গৃহিণী। দাদা নগেন্দ্র দে ছিলেন বোয়ালখালীর কানুনগোপাড়া কলেজের ইংরেজীর অধ্যাপক। উগান্ডার জিনজা সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুল থেকে সেকেন্ডারি পাস করেছেন শুভ রায়। এরপর যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান শুভ। কম্পিউটার বিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ওহাইওর মাউন্ট ইউনিয়ন কলেজ (বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব মাউন্ট ইউনিয়ন) থেকে। তিনি ১৯৯৫ সালে কেস ওয়স্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটি থেকে ত্বরিত প্রকৌশল ও ফলিত পদার্থবিজ্ঞানে মাস্টার্স এবং ২০০১ সালে ত্বরিত প্রকৌশল ও কম্পিউটার বিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের বায়ামেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে প্রজেক্ট স্টাফ হিসেবে যোগ দেন। ১৯৯৮ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের বায়া-মাইক্রো-ইলেক্ট্রো-মেকানিক্যাল সিস্টেমস ল্যাবরেটরিরসহ পরিচালক হিসেবে কাজ করেন। ২০০০ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের স্পাইন রিসার্চ ল্যাবরেটরিতে কাজ করেন। ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ক্লিভল্যান্ড স্টেট ইউনিভার্সিটির ফলিত বায়ামেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামের সহকারী অধ্যাপক এবং কেস ওয়েস্টার্ন রিজার্ভ ইউনিভার্সিটির ত্বরিত প্রকৌশল ও কম্পিউটার বিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন ২০০২ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের বায়ামেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী স্টাফ হিসেবে কাজ করেন। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত তিনি ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক লার্নার কলেজ অব মেডিসিনের মলিকুলার মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০০৯ থেকে তিনি ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের নেফ্রোলজি বিভাগের এডজাংক্ট সহকারী স্টাফ হিসেবে কর্মরত। শুভ বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম কিডনি তৈরি করেছেন। এই কিডনি তৈরি চিকিৎসা বিজ্ঞানে অসামান্য কীর্তি হিসেবে গণ্য হচ্ছে। শুভ রায় মাইক্রো ইলেকট্রো মেকানিক্যাল সিস্টেম টেকনোলজি ডেভেলপিং স্পেশালিস্ট। এর আগে ম্যাসাচুসেটসের ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির টপ হানড্রেড ইনোভেটর ২০০৩ এ্যাওয়ার্ড পান তিনি। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার স্কুল অব ফার্মাসি এ্যান্ড মেডিসিনের বায়ো-ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড থেরাপিউটিক সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শুভ রায় প্রথমে ৪০ জন সহকর্মী নিয়ে কৃত্রিম কিডনি তৈরির কাজ শুরু করেন। তারা কৃত্রিম কিডনি তৈরি করে তা প্রাণীর দেহে প্রতিস্থাপন করে সফল হয়েছেন। আগামী পাঁচ বছরে আরও ব্যাপকভাবে বিভিন্ন প্রাণীর দেহে পরীক্ষার পর এটি মানবদেহে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন ওই দলের প্রধান শুভ রায়। মানবদেহে দুটি কিডনি রয়েছে, সেখানেই যে কোন এক দিকে কফি কাপের আকৃতির এই কৃত্রিম কিডনিকে বসিয়ে দেয়া যাবে। এই কিডনিকে পরিচালনা করবে হার্ট থেকে আসা রক্তই। সাধারণ সুস্থ কিডনির মতোই এই রক্তকে ফিল্টার করবে কৃত্রিম কিডনি। শুধু তাই নয়, শরীরে রক্তচাপকেও নিয়ন্ত্রণ করবে এই কৃত্রিম কিডনি। হিমো-ডায়ালিসিসের যে চালু পদ্ধতি রয়েছে, তাতে আমাদের শরীরের দুটি কিডনি বয়ে চলা রক্তস্রোত থেকে শুধুই বিষ বা দূষিত পদার্থগুলোকে ছেঁকে (ফিল্টার) বের করে নেয়। কিন্তু শরীরে বসানো ওই কৃত্রিম কিডনির গায়ে আলাদা একটি ‘মেমব্রেন’ বা স্তর (লেয়ার) থাকবে। সেটা খুব ভেবে-চিন্তে রক্তস্রোত থেকে বিষ বা দূষিত পদার্থগুলোকে বেছেবুছে নেবে। তার সঙ্গে থাকবে একটি বায়ো-রিএ্যাক্টরও। সেই বায়ো-রিএ্যাক্টরটা বানানো হয়েছে কিডনির সুস্থ, সবল কোষগুলো দিয়ে। সেগুলোই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার ডায়ালিসিসের সময় রক্তস্রোতের সামনে থাকবে। এটা স্বাভাবিক কিডনির চেয়ে অনেক দ্রুত ও দক্ষতার সঙ্গে ডায়ালিসিসের কাজটা করতে পারবে আমাদের শরীরে।’ লখো মানুষের মৃত্যু হয় কিডনির অসুখে, আর কিডনির সেই অসুখগুলোর জন্য মূলত দায়ী দুটি জিনিস। ডায়াবেটিস আর উচ্চ রক্তচাপ।গত পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান থেকে দেখা গিয়েছে, আমাদের দেশে কিডনির অসুখে যাদের মৃত্যু হচ্ছে, তাদের অন্তত ৮০ শতাংশেরই মৃত্যুর মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ডায়াবেটিস আর হাইপার-টেনশন।
×