ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মাহমুদুর রহমান জনি

‘বর্ণমালা’য় বঙ্গবন্ধু

প্রকাশিত: ০৩:৪৫, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

‘বর্ণমালা’য় বঙ্গবন্ধু

তাজা রক্তে রঞ্জিত রাজপথ, মিছিলে মিছিলে প্রকম্পিত, স্লোগানে স্লোগানে সেদিন মুখরিত ছিল সারা বাংলা। মায়ের ভাষা বাংলাকে ছিনিয়ে আনতে সেদিন প্রাণ দিয়েছিল কিছু সাহসী যুবক। যাদের প্রাণের বিনিময়ে আজ স্বাধীন বাংলার মাটিতে গর্বভরে হাঁটতে পারি আমরা। ধারণ করতে পারি আমি বাঙালী, বাংলা আমার মা। এই ভাষাকে ছিনিয়ে আনতে যাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, মেধা, ত্যাগ আর সীমাহীন ভালবাসা ছিল তাদেরই একজন তারুণ্যের প্রতীক যুবক শেখ মুজিবুর রহমান। অসামান্য মেধা আর নেতৃত্বের গুণে এগিয়ে নিয়েছিলেন প্রাণের ভাষা আন্দোলন। আজন্ম মাতৃভাষাপ্রেমী এই মহান নেতা ১৯৪৭ সালে ভাষা আন্দোলনের সূচনা পর্ব এবং পরবর্তী সময় আইন সভার সদস্য এবং রাষ্ট্রপতি হিসেবে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করেন। তিনি মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলা ভাষার উন্নয়ন ও বিকাশে কাজ করে গেছেন এবং বাংলা ভাষা ও বাংলাভাষীদের দাবির কথা বলে গেছেন। অদ্যাবধি ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদান নিয়ে প্রকাশিত প্রবন্ধ, নিবন্ধ ও বইপত্রে অনেক তথ্যকে বাদ দেয়া হয়েছে। আবার কোন কোন ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে খাটো করে দেখানো হয়েছে। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এ আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের সত্যতা প্রমাণিত হয়। দেশ বিভাগের পর নবগঠিত দুটি প্রদেশের মধ্যে পূর্ব বাংলার প্রতি তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী ভাষাসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করে। বৈষম্য, নিপীড়ন, বঞ্চনা আর ব্যথিত হৃদয় নিয়ে বাংলার মানুষ শুরু করেছিল ভাষার জন্য আন্দোলন। সেই আন্দোলনের পূর্ব প্রস্তুতি সভা কলকাতার সিরাজউদ্দৌলা হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। পরবর্তী করণীয় বিষয় নির্ধারণে পাকিস্তানে একটি অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক আন্দোলন ও সংগঠন করার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে প্রক্রিয়ার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন তরুণ শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৪৭ সালের ৬ ও ৭ সেপ্টেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত পূর্ব পাকিস্তানের কর্মী সম্মেলনে গণতান্ত্রিক যুবলীগ গঠিত হয়। ওই সম্মেলনে ভাষা বিষয়ক কিছু প্রস্তাব গৃহীত হয়। গৃহীত প্রস্তাবনাগুলো সেদিন পাঠ করেন ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান। প্রস্তাব উত্থাপনে সেদিন এই ছাত্রনেতা বলেছিলেন, ‘বাংলা ভাষাকে পূর্ব পাকিস্তানের’ লেখার বাহন ও আইন আদালতের ভাষা করা হউক। সমগ্র পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা কি হবে তৎসম্পর্কে আলাপ-আলোচনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ভার জনসাধারণের উপর ছাড়িয়া দেয়া হউক। এবং জনগণের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গৃহীত হউক।’ এভাবেই ভাষার দাবি প্রথমে উচ্চারিত হয়েছিল। (সূত্র : ‘ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর ভূমিকা’ গাজীউল হক, ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু গবেষণা কেন্দ্র, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৪) তরুণ মুজিব ভারত থেকে তৎকালীন পূর্ব বাংলায় প্রত্যাবর্তন করার পর সরাসরি ভাষা আন্দোলনে শরিক হন। ভাষা আন্দোলনের শুরুতে তমদ্দুন মজলিসের রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন সংক্রান্ত কার্যক্রমে তিনি অংশগ্রহণ করেন। শেখ মুজিবুর রহমান এই মজলিসকে রাষ্ট্রভাষা সংক্রান্ত বহু কাজে সাহায্য ও সমর্থন করেন (সূত্র : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, কৃত- মযহারুল ইসলাম পৃ. ১০৪)। তিনি ১৯৪৭ সালে রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে বাংলা ভাষার দাবির সপক্ষে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযানে অংশগ্রহণ করেন এবং বিভিন্ন মিটিং মিছিলে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালের ৫ ডিসেম্বর খাজা নাজিমুদ্দিনের বাসভবনে মুসলিম লীগ ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক চলাকালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে অনুষ্ঠিত মিছিলে অংশগ্রহণ করেন এবং নেতৃত্ব দান করেন। ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে সমকালীন রাজনীতিবিদসহ ১৪ জন ভাষাবীর সর্বপ্রথম ভাষা-আন্দোলনসহ অন্যান্য দাবি সংবলিত ২১ দফা দাবি নিয়ে একটি ইস্তেহার প্রণয়ন করেছিলেন। ওই ইস্তেহারে ২১ দফা দাবির মধ্যে দ্বিতীয় দাবিটি ছিল রাষ্ট্রভাষা সংক্রান্ত। ঐতিহাসিক এই ইস্তেহারটি একটি ছোট পুস্তিকা আকারে প্রকাশিত হয়েছিল, যার নাম ‘রাষ্ট্রভাষা-২১ দফা ইস্তেহার- ঐতিহাসিক দলিল’। ওই পুস্তিকাটি ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক প্রামাণ্য দলিল হিসেবে স্বীকৃত। এই ইস্তেহার প্রণয়নে শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান ছিল অনস্বীকার্য এবং তিনি ছিলেন অন্যতম স্বাক্ষরদাতা। এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পাকিস্তান সৃষ্টির তিন-চার মাসের মধ্যেই পুস্তিকাটির প্রকাশনা ও প্রচার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অধিবাসীদের জন্য পাকিস্তান নামের স্বপ্নসম্পৃক্ত মোহভঙ্গের সূচনার প্রমাণ বহন করে। পুস্তিকাটি যাদের নামে প্রচারিত হয়েছিল তারা সবাই ছিলেন পাকিস্তান আন্দোলনে সম্পৃক্ত নিবেদিতপ্রাণ কর্মী। এদেরই একজন ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। পরবর্তীকালে যিনি বঙ্গবন্ধু হিসেবে বাংলাদেশ সৃষ্টিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন’ (রাষ্ট্রভাষা-২১ দফা ইস্তেহার- ঐতিহাসিক দলিল, শায়খুল বারী)। ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে সর্বাত্মক সাধারণ ধর্মঘট পালিত হয়। এই ধর্মঘটে নেতৃত্ব দেন বলিষ্ঠ ছাত্রনেতা শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন পুলিশী নির্যাতনের শিকার হয়ে গ্রেফতার হন। এটাই ছিল ভাষা আন্দোলনের ইতিহাসে প্রথম সফল হরতাল। ‘আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার নিমিত্তে শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জ হতে ১০ মার্চ ঢাকায় আসেন।’ ১১ মার্চের হরতাল কর্মসূচীতে যুবক শেখ মুজিব এতটাই উৎসাহিত হয়েছিলেন যে, এ হরতাল ও কর্মসূচী তার জীবনের গতিধারা নতুনভাবে প্রবাহিত করে। সেদিন রাজপথে শেখ মুজিব রক্তাক্তও হয়েছিলেন। স্বাধীন পাকিস্তানের রাজনীতিতে এটিই তাঁর প্রথম গ্রেফতার। এ সময় আন্দোলন সংগ্রামের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পরিষদের প্রতিনিধি পাঠিয়ে শেখ মুজিবসহ অন্যান্য ছাত্রলীগ নেতার মতামত আনা হতো। শেখ মুজিবুর রহমান তখনও ছাত্রলীগের মাথার ওপর বটবৃক্ষের মতো ছায়া হয়ে থাকায় কামারুদ্দিন সাহেব তার সঙ্গে দেখা করে পরামর্শের দায়িত্ব পান। (সূত্র : ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস, সাইফুর রহমান সোহাগ, পৃষ্ঠা-৭৩) ১৯৪৮ সালের ১৫ মার্চ রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের সঙ্গে তদানীন্তন পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের সাত দফা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। চুক্তি স্বাক্ষরের পূর্বে জেলখানায় আটক ভাষা আন্দোলনের কর্মী রাজবন্দীদের চুক্তিপত্রটি দেখানো হয় এবং অনুমোদন নেয়া হয়। অনুমোদনের পর চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। কারাবন্দী অন্যদের সঙ্গে শেখ মুজিবও চুক্তির শর্ত দেখেন এবং অনুমোদন প্রদান করেন। এই ঐতিহাসিক চুক্তির ফলে সর্বপ্রথম বাংলাভাষা শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। চুক্তির শর্ত মোতাবেক শেখ মুজিবসহ অন্য ভাষা সংগ্রামীরা কারামুক্ত হন। এই চুক্তির ফলে একটি প্রতিষ্ঠিত সরকার দেশবাসীর কাছে নতি স্বীকারে বাধ্য হয়েছিল। ১৯৪৮ সালের ১৬ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় আন্দোলনকে বেগবান করার লক্ষ্যে এক সাধারণ ছাত্রসভায় সভাপতিত্ব করেন সদ্য কারামুক্ত শেখ মুজিবুর রহমান। সভা শেষে পূর্ববাংলা আইন পরিষদ ভবন অভিমুখে এক মিছিল বের হয়। ১৭ মার্চ দেশব্যাপী শিক্ষায়তনে সফল ধর্মঘটে ব্যাপক সাড়া মেলে। যেখানে শেখ মুজিব একজন বলিষ্ঠ প্রত্যয়সম্পন্ন এবং অসম সাহসী যুবনেতা হিসেবে ছাত্র সমাজে ধীরে ধীরে স্বীকৃতি লাভ করতে থাকেন। শেখ মুজিব, তাজউদ্দীন আহমদ, মোহাম্মদ তোয়াহা, নঈমুদ্দিন আহমদ, শওকত আলী, আবদুল মতিন, শামসুল হক প্রমুখ যুবনেতার কঠোর সাধনার ফলে বাংলা ভাষার আন্দোলন সমগ্র পূর্ব বাংলায় একটি গণআন্দোলন হিসেবে ছড়িয়ে পড়ল। জনসভা, মিছিল আর স্লোগানে সমগ্র বাংলাদেশ যেন কেঁপে কেঁপে উঠতে লাগল। রাস্তায়, দেয়ালে-দেয়ালে পোস্টার- ‘রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই’ দাবি আদায়ের জন্য ভাষা সংগ্রাম কমিটি অক্লান্তভাবে কাজ করে যেতে লাগল। এই ভাষা সংগ্রাম কমিটির সঙ্গে ওতপ্রোত সম্পর্কে যারা নিরলস কাজ করেছেন, সেই সব ছাত্রনেতার মধ্যে মুজিব ছিলেন অন্যতম।’ (ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গবন্ধু, পৃ. ৩)। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের বিস্ফোরণ পর্বে শেখ মুজিব জেলে ছিলেন। একদিকে আন্দোলন চলছে, অন্যদিকে রাজপথে কতটা প্রয়োজন, তাও অনুভব করতে লাগল ছাত্রলীগ। শুধু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নয়, বাংলা ভাষার প্রশ্নে সমর্থনকারী সব সংগঠনই শেখ মুজিবের নেতৃত্ব অনুভব করতে লাগল। তিনি মেডিক্যালের কেবিনে বসে আন্দোলনের অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন। (সূত্র : ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস, পৃষ্ঠা-৯০)। ব্যক্তিগতভাবে রাজনৈতিক ময়দানে অনুপস্থিত থাকলেও জেলে বসেও নিয়মিত আন্দোলনকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করতেন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে যারা গুরুত্বপূর্ণ নেতৃত্বে ছিলেন, যেমন- আবদুস সামাদ আজাদ, জিল্লুর রহমান, কামরুজ্জামান, আবদুল মমিন তারা সকলেই একবাক্যে স্বীকার করেছেন যে, বঙ্গবন্ধু জেলখানা থেকে এবং পরে হাসপাতালে থাকাকালীন আন্দোলন সম্পর্কে চিরকুটের মাধ্যমে নির্দেশ পাঠাতেন। শেখ মুজিব ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৬ তারিখ ফরিদপুর জেলে যাওয়ার আগে ও পরে ছাত্রলীগের একাধিক নেতার কাছে চিরকুট পাঠিয়েছেন। (ভালবাসি মাতৃভাষা- পৃষ্ঠা : ৬২) বঙ্গবন্ধুর বাংলা ভাষার প্রতি গভীর দরদ ও অসীম রাজনৈতিক প্রত্যয়ের ফলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে বাংলাকে সমর্থন করে বিবৃতি দেন। ওই বিবৃতিটি ১৯৫২ সালের ২৯ জুন সাপ্তাহিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯৫২ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় মওলানা ভাসানীর একটি বিবৃতি প্রকাশিত হয়। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বাংলা ভাষার পক্ষে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর মত পরিবর্তনে মুজিব সক্ষম না হলে শুধু ভাষা আন্দোলন নয়- আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ত।’ শেখ মুজিবের মতো দূরদর্শী নেতার পক্ষেই এটা সম্ভব ছিল। ১৯৫২ সালের পরও বঙ্গবন্ধু বাংলা ভাষাকে ছেড়ে যাননি। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দান, সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু, সংসদের দৈনন্দিন কার্যাবলী বাংলায় চালু প্রসঙ্গে তিনি আইন সভায় গর্জে ওঠেন এবং মহানায়কের ভূমিকা পালন করেন। শেখ মুজিবুর রহমান আমৃত্যু বাংলা ভাষার একনিষ্ঠ সেবক হিসেবে বাংলা ভাষার উন্নয়ন বিকাশে এবং সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলনের সফল, সার্থক ও যোগ্য নেতা ছিলেন বলেই ভাষা সমস্যার ভার তার ওপর অর্পিত হয়েছিল। এই মহান নেতা বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষার স্বীকৃতি আদায় এবং বাংলা ভাষা ও বাংলাভাষীদের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বাংলাভাষায় ভাষণ দিয়ে যে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করেছেন তা ইতিহাসের পাতায় চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বিশ্বসভায় বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার এটাই ছিল প্রথম সফল উদ্যোগ। ১৯৭২ সালের সংবিধানে তিনি বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণ করেন। যেটি পৃথিবীর ইতিহাসে প্রথম বাংলা ভাষায় প্রণীত সংবিধান। বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের মূল নায়ক ও স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব ভাষা-আন্দোলনেরই সুদূরপ্রসারী ফলশ্রুতি।’ (দৈনিক সংবাদ, ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭৫)। এটা ঐতিহাসিক সত্য যে, বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার এই ধারাবাহিক আন্দোলনের পথ ধরেই এসেছে আমাদের প্রাণপ্রিয় স্বাধীনতা। এই মহান আন্দোলনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহান স্থপতির ভূমিকা পালন করে আমাদের একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে পৃথিবীর বুকে আত্মপ্রকাশের সুযোগ করে দিয়েছেন। ‘বাংলাদেশ’ নামক এ ভূখ-ের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর অবদানকে ঐতিহাসিক প্রয়োজনেই স্বীকার করতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে অস্বীকৃতি বা অবমূল্যায়ন মানেই আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য সর্বোপরি আমাদের জাতিসত্তা ও অস্তিত্বকেই অস্বীকৃতি। তাই ‘বর্ণমালা’য় বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্ব মিশে থাকবে ততদিন, যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা যমুনা গৌরি বহমান। লেখক : ছাত্রনেতা
×