ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ মিডিয়া!

প্রকাশিত: ০৩:৪০, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ট্রাম্পের প্রতিপক্ষ মিডিয়া!

হোয়াইট হাউসে ঘটেছে মার্কিন ইতিহাসের নজিরবিহীন ঘটনা। শুক্রবার প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ব্রিফিং রুমে একটি নিয়মিত প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সরাসরি টিভিতে সম্প্রচার হওয়ার কথা থাকলেও আকস্মিক সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে এটি পরিণত করা হয় ক্যামেরাবিহীন ব্রিফিংয়ে। ঘটনার শেষ হয়নি এখানেই। অনতিপরেই সেই অনুষ্ঠানে সিএনএন, বিবিসি, গার্ডিয়ান, নিউইয়র্ক টাইমস, লস এ্যাঞ্জেলেস টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট, পলিটিকোর মতো বিশ্বখ্যাত গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা থাকতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেয়া হয়। তাদের বলা হয় হোয়াইট হাউসের তথ্য কেন্দ্র থেকে সংবাদ সংগ্রহ করে নিতে। অবশ্য সিবিএস, ব্লুমবার্গ, রয়টার্সের মতো ১০টি প্রতিষ্ঠানকে সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য থাকতে বলা হয়। তবে কতিপয় সংবাদপত্রকে নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদে তারাও ব্রিফিং বয়কট করে চলে যান সেখান থেকে। ঠিক কী কারণে হোয়াইট হাউস অকস্মাৎ এমন কঠোর ও কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। অবশ্য সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্টসহ দায়িত্বশীল গণমাধ্যমের পক্ষ থেকে হোয়াইট হাউসের এমন অভব্য আচরণের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়েছে, সংবাদপত্র অপছন্দের প্রতিবেদন ছাপলেই তারা এভাবে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখায়। আমরা প্রতিবেদন প্রকাশে অনড় থাকব। এর আগে রক্ষণশীল রাজনীতিকদের এক অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সংবাদমাধ্যম মিথ্যা খবর প্রচার করে উল্লেখ করে তাদের আখ্যায়িত করেছিলেন গণশত্রু হিসেবে। ঘটনা যা-ই ঘটুক না কেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথা হোয়াইট হাউসের দীর্ঘ ইতিহাস ও ঐতিহ্যের প্রেক্ষাপটে এমন ঘটনা নজিরবিহীন। এমন সিদ্ধান্তকে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর আঘাত হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন সাংবাদিক সংগঠনগুলো ও সমালোচকরা। ট্রাম্পের এহেন আচরণ অবশ্য নতুন নয়। সত্যি বলতে কী, নির্বাচনের প্রচারাভিযানের সময় থেকেই ট্রাম্পের শিবির নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট. বাজফিড, সিএনএনসহ কয়েকটি পত্রিকা ও সংবাদমাধ্যমের ওপর জারি করেছিল নিষেধাজ্ঞা। কেননা, এসব গণমাধ্যম সমর্থন করেছিল ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে। মার্কিন রাজনীতিতে অপেক্ষাকৃত নবাগত ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্প বরাবরই রাগী, জেদী, একগুঁয়ে, নারীকাতর, বর্ণবিদ্বেষী, ধর্মবিদ্বেষী, অভিবাসন, এমনকি মুসলিমবিদ্বেষী হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে তিনি মার্কিন মুলুক থেকে সব অবৈধ অভিবাসী, বিশেষ করে মুসলিমদের বিদায় করবেন বলে অঙ্গীকার করেছিলেন। ট্র্যাজেডি হলো ট্রাম্প নিজেই একজন অভিবাসী, যার দাদা যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিল জার্মানি থেকে। এমনকি তার স্ত্রী মেলানিয়াও তাই, জন্মসূত্রে যিনি একজন সেøাভেনিয়ান। সেক্ষেত্রে এহেন একজন একগুঁয়ে বর্ণ ও ধর্মবিদ্বেষীকে কোন গণমাধ্যম কোন অবস্থাতেই সমর্থন করতে পারে না। যেখানে স্বাধীন ও অবাধ সংবাদপত্র রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে স্বীকৃত। যা হোক ধারণা করা গিয়েছিল যে, অন্তত প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর ট্রাম্প তার সুর বদলাবেন। কার্যত দেখা গেল ট্রাম্প তার অবস্থান থেকে একটুও নড়েননি। রাতারাতি তিনি সব অবৈধ অভিবাসী ও মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। অবশ্য দেশব্যাপী তীব্র গণবিক্ষোভ ও প্রতিবাদের মুখে সে দেশের উচ্চ আদালত অবিলম্বে তা স্থগিত করে দেয়। গণমাধ্যমও এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়। দেশে দেশে দেখা দেয় তীব্র প্রতিক্রিযা। এহেন তীব্র প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ট্রাম্প যে গণমাধ্যমের ওপর ক্ষিপ্ত হবেন তাতে আর বিচিত্র কী! এরই বহির্প্রকাশ ঘটেছে হোয়াইট হাউস সাংবাদিক সমিতির বার্ষিক নৈশভোজ প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে। তবে শেষ পর্যন্ত গণমত ও গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশি দূর যেতে পারবেন বলে মনে হয় না। অন্তত ইতিহাস তা-ই বলে।
×