ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকা আমার ঢাকা

প্রকাশিত: ০৩:৩৯, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ঢাকা আমার ঢাকা

রাজধানী ঢাকা যে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠছে, এ কথা গত তিন দশক ধরেই নগরবাসী শুনে আসছে। কেউ গা করেনি, উপলব্ধিও নয়। বরং এ কাজে সহায়তা করে আসছেন বলা যায় কোন না কোনভাবে। মানুষে মানুষে গিজগিজ, যানবাহনের চাপ, দালানকোটা তথা হাইরাইজ ভবনের ভিড়ে বিশুদ্ধ বাতাস দূরে থাক, আকাশ দেখাও যায় না। এসব নানাবিধ কারণ জনজীবনে নাভিশ্বাস তুলেছে। ভুক্তভোগী প্রায় সবাই। ভোর থেকেই শুরু হয় নগরবাসীর প্রতি মুহূর্তের জন্য সংগ্রাম। রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা ট্রাফিক জ্যাম। কত কর্মঘণ্টা যে বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে এভাবে প্রতিদিন প্রায় সকলের, সেসব পরিসংখ্যানে হয়ত মিলবে। কিন্তু বাস্তবে তো নগরবাসী জানে, রাস্তায় প্রতি পদে পদে বিপদ তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়, এমনকি গৃহকোণেও। এই যানজটে বাড়ছে আর্থিক ক্ষতি। এক হিসাবে এই ক্ষতির পরিমাণ বছরে কুড়ি থেকে ত্রিশ হাজার কোটি টাকা। মানুষের কাজের গতিও হয়ে পড়ছে শ্লথ। এসব স্থবিরতার ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে হলে ঢাকার ওপর চাপ কমানো যে দরকার, তা বিশেষজ্ঞরা উপলব্ধি করলেও নগরবাসীর সম্ভবত এ বিষয়ে ভ্রƒক্ষেপ নেই। নগর পরিবহন কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি যাতায়াতের ক্ষেত্রে। আবার একই সড়কে নানা ধরনের যানবাহন চলে। অপ্রশস্ত এসব সড়কে হরেক কিসিমের যানবাহন জট বাড়ায়। সবকিছু রাজধানীকেন্দ্রিক হওয়ার কারণে সারাদেশ থেকে মানুষ ছুটে আসে ঢাকায়। ছিন্নমূল ও দরিদ্ররা আসে কর্ম এবং অন্নের খোঁজে। তাই বস্তির সংখ্যা বাড়ে। মানবেতর পরিস্থিতিও সেখানে। তদুপরি শহরজুড়ে রয়েছে, এমনকি আবাসিক এলাকাতেও অজস্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, শপিংমল, পোশাক কারখানা, কল-কারখানাও। পরিবেশ দূষণে সহায়ক সবকিছুই বিরাজমান নগরজুড়ে। স্বাধীনতাপূর্ব যুগে ঢাকা যখন ছিল প্রাদেশিক রাজধানী এবং শহরের আয়তন ছিল স্বল্প পরিসর, তখন নগরীতে শিল্পাঞ্চলও গড়া হয়। নগরের বিস্তারের কারণে সেসব আজ জনজীবনে দুর্ভোগের কারণ হচ্ছে বৈকি। রাজধানী ঢাকা একুশ শতকে কী দাঁড়াবে তার কোন পূর্ব পরিকল্পনা যেমন ছিল না, ভবিষ্যত পরিকল্পনার কোন লক্ষণও মেলে না। কোথাও কোন পরিকল্পনা নেই। দীর্ঘ তিন দশকের বেশি বলাবলি হচ্ছে পরিকল্পিত নগরায়ণের। বাস্তবে সে অনুযায়ী কোন পদক্ষেপই নেয়া হচ্ছে না। তাই যত্রতত্র যে যা খুশি তাই করতে পারে অবলীলায়। লোকসংখ্যার ভারে জর্জরিত ঢাকা। প্রতিবছর গ্রাম থেকে ঢাকামুখী হচ্ছে মানুষ। কেন্দ্রীভূত প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম রাজধানীকেন্দ্রিক হওয়ার কারণে প্রতিদিনই বাইরে থেকে লোক আসছেন। বিকেন্দ্রীয়করণ হলে এই চাপ হ্রাস পেত। জনসংখ্যার ভারে ক্রমশ ন্যুব্জ হয়ে পড়া ঢাকাকে সঠিক পরিকল্পনামাফিক কাজে লাগাতে হবে। ইতোমধ্যে নগরীর সবচেয়ে দূষিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত স্থান থেকে চামড়া কারখানা সরে গেছে। অন্য কারখানাগুলোও সরিয়ে নেয়া উচিত। বাড়িঘর নির্মাণে বিল্ডিং কোড মেনে চলার জন্য বাধ্য করতে হবে। ঢাকার সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগের সুষ্ঠু ব্যবস্থা গড়ে উঠলে জনসংখ্যার চাপ কমবে। ঢাকা ও মফস্বলের মধ্যে আর্থিক, সামাজিক ব্যবধান কমিয়ে আনার মাধ্যমেও ঢাকাকে বসবাসযোগ্য করা যায়। সেই বিশ শতকে উচ্চারিত হতো ‘ফিরিয়ে দাও সে অরণ্য, লহ হে নগর। আজ অরণ্যও নেই। নগরও যায় যায় অবস্থা। এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য নানামুখী আলোচনা হচ্ছে। ইতিবাচক এসব আলোচনা থেকে ঢাকার উন্নয়নে সাতটি জরুরী বিষয়কে সামনে এনেছে, যা প্রণিধানযোগ্য। সেসব বিবেচনায় নিয়ে বাঁচাতে হবে ঢাকা আমার ঢাকাকে।
×