ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনা বিভাগে দ্বিতীয় দিনেও চলছে পরিবহন ধর্মঘট

প্রকাশিত: ২০:৪৬, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

খুলনা বিভাগে দ্বিতীয় দিনেও চলছে পরিবহন ধর্মঘট

অনলাইন ডেস্ক॥ ‘ভেবেছিলাম, দ্বিতীয় দিনে ধর্মঘট কিছুটা শিথিল হবে। কিন্তু আজ তো কিছুই চলছে না। বাগেরহাট থেকে মাওয়া পর্যন্ত যে মাইক্রোবাস চলে, তাও চলছে না। হরতাল-অবরোধের সময়ও কিছু গাড়ি চলে, বিআরটিসির বাস চলে। কিন্তু এখন কিছুই চলছে না। আমরা জিম্মি হয়ে আছি।’ এভাবেই নিজের অসহায়ত্বের কথা জানালেন বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ডে যানবাহনের অপেক্ষায় থাকা যাত্রী রাসেল শেখ। তাঁর মতো আরও অনেক যাত্রীই বাসস্ট্যান্ডে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ছিলেন। অনেকের অভিযোগ, ধর্মঘট পালনকারী শ্রমিকেরা অন্যান্য যানবাহন চলাচলে বাধা দিচ্ছেন। বিশেষ করে চার চাকার কিছু চলতে দিচ্ছে না। রাসেলের মতোই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানালেন কচুয়ার সাইনবোর্ড এলাকার ইরফান আহম্মেদ। বললেন, ‘এখানে যারা আছে, সবারই জরুরি কাজ। আমি ঢাকায় থাকি। পরিবহন ধর্মঘটের কারণে আমরা কেউই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছি না। গাড়ি ইচ্ছা করলে যেতে পারে, কিন্তু যাচ্ছে না। যেতে দিচ্ছে না। কিছু চক্রের কারণে আমরা এখানে জিম্মি হয়ে আছি। তার ওপর যেতে চাইলেও ৫০০ টাকার ভাড়া চাইছে দেড় হাজার, দুই হাজার টাকা। ফলে আমরা এখন এখানে জিম্মি অবস্থায় পড়ে আছি।’ ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে আজ সোমবার যানবাহন না পেয়ে নিরুপায় হয়ে পড়েছেন যাত্রীরা। বাগেরহাটসহ খুলনা বিভাগের ১০ জেলা থেকে বাস, মাইক্রোবাসসহ দূরপাল্লার কোনো যানবাহন চলছে না। নতুন করে গোপালগঞ্জ, মাদারীপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় ধর্মঘট শুরু করেছেন পরিবহন শ্রমিকেরা। ২০১১ সালে মানিকগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ, সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বাসচালক জামির হোসেনের মুক্তির দাবিতে খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন খুলনা বিভাগীয় আঞ্চলিক কমিটি। ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিন আজ। বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ডে যানবাহনের অপেক্ষায় থাকা কোড়ামারা গ্রামের বাসিন্দা মেরি বেগম (৪২) বলেন, ‘মোটরসাইকেলে করে ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে বাসস্ট্যান্ডে আসছি। ভেবেছিলাম, ভোরে হয়তো কিছু চলবে। আমার নাতিডা খুব অসুস্থ। এহন (এখন) ঢাকা যাব কী করে, বাপ।’ মাইক্রোবাসের চালক মো. খোকন মোল্লা বলেন, ‘বাগেরহাট স্ট্যান্ড, কাটাখালী ও রূপসা থেকে প্রতিদিনই মাওয়া পর্যন্ত আমাদের মাইক্রোবাস চলে। কিন্তু গতকাল পথে বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাঙছে। তাই আজ আমরা মাইক্রোবাস চালাচ্ছি না।’ খোকন মোল্লা আরও জানান, মাওয়া রোডে গতকাল রোববার গোপালগঞ্জের ঘোনাপাড়া, পুলিশ লাইন, ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ব্যারিকেড দিয়ে গাড়ি ভেঙেছেন বাস শ্রমিকেরা। খোকন শেখ নামের এক চালককেও মারধর করা হয়েছে। ওই মাইক্রোবাসচালকের সঙ্গে কথা বলার সময় মাইক্রোবাসের আরেক চালক এসে অবশ্য বলতে থাকেন, ‘আমরা শ্রমিক, আমাদের সংগঠন আছে। আমাদের বিনা কারণে সাজা দেওয়া হচ্ছে। তাই আমরা গাড়ি বন্ধ রাখছি। নিজেরাই গাড়ি চালাচ্ছি না।’ ঢাকার বেসরকারি মোবাইল ফোন কোম্পানিতে চাকরিজীবী আরাফ হোসেন বলেন, ভাড়ায় চালিত প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসও চলতে দিচ্ছেন না পরিবহন শ্রমিকেরা। বাগেরহাট আন্তজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক খান আবু বক্করের ভাষ্য, ‘শ্রমিক ফেডারেশনের ডাকা ধর্মঘটে সমর্থন জানিয়ে বাগেরহাটের ১৬টি রুটে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রেখেছি। শ্রমিকদের স্বার্থে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের ধর্মঘট চলবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কাউকে বাধা দিচ্ছি না। মালিক-শ্রমিকেরা সবাই নিজেদের থেকেই গাড়ি বন্ধ রেখে ধর্মঘট পালন করছে।’ মাদারীপুর মাদারীপুরে জেলা সড়ক পরিবহন ইউনিয়নের ডাকা অনির্দিষ্টকালের পরিবহন ধর্মঘট চলছে। আজ সকাল ছয়টা থেকে সদর উপজেলার মোস্তফাপুর ও পুরোনো বাসস্ট্যান্ডে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে টায়ার জ্বালিয়ে ও লোহার পাইপ ফেলে সড়ক অবরোধ করেন শ্রমিকেরা। মাদারীপুর সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সহসভাপতি ফাইজুল শরীফ বলেন, চুয়াডাঙ্গার চালককে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়ার প্রতিবাদে এই ধর্মঘট পালন করছেন তাঁরা।
×