ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিন

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দিন

সিন্ডিকেটের কারসাজিতে কিছুতেই কমছে না গরুর মাংসের দাম। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে মানভেদে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪৯০-৫৪০ টাকায়। বেড়েছে খাসির মাংসের দামও। গরু ও খাসির প্রভাব পড়েছে মুরগির বাজারেও। এখন ব্রয়লার ও দেশী মুরগির দাম বেড়ে গেছে। অথচ নিত্যপণ্যের বাজারে চাল, ডাল, আটা, ভোজ্যতেল এবং চিনির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। মাংসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে, আলোচনায় বসেছেন ব্যবসায়ীরা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে। তবু দাম কমছে না। ফলে এখন কঠোর হওয়ার সময় এসছে। ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়ার পদক্ষেপ এখুনি নিতে হবে। দেশের মানুষের আমিষের চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে গরু আমদানি করতে হয়। এই আমদানির ক্ষেত্রে অনেক সময় বৈধ পথ অনুসরণ করা হয় না। ফলে ঘাটে ঘাটে চাঁদাবাজি আর দুর্নীতির শিকার হতে হয় ব্যবসায়ীদের। এতে ব্যবসায়ীর খরচ বেড়ে যায়। বাড়তি খরচ পোষাতে সাময়িকভাবে বাজারে মাংসের দাম বাড়তে পারে। জনকণ্ঠকে এক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন ভারতীয় সীমান্ত পেরুতে প্রতিটি পশুর জন্য অতিরিক্ত ১৫-২০ হাজার টাকা গুনতে হয়। আবার সীমান্ত থেকে গাবতলী পৌঁছতে একটি গরুতে ব্যয় হয় ২০-৩০ হাজার টাকা। ওই ব্যবসায়ী খোলাখুলি বলেছেন, দেশে ইজারাদার, চামড়া ব্যবসায়ী, হুন্ডি ব্যবসায়ী, ঢাকা উত্তর সিটির কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে এখন বেশি দামে মাংস বিক্রি করতে হচ্ছে। বিষয়গুলো বিবেচনা করা দরকার। তাছাড়া চামড়ার দামও আগের মতো নেই। গরুর যে চামড়া এক সময় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হতো, সেই চামড়া এখন ২০০-৬০০ টাকায় বিক্রি করছেন মাংস-ব্যবসায়ীরা। ছাগলের যে চামড়া তারা এক সময় ৫০০-৬০০ টাকায় বিক্রি করতেন, তা এখন ২০-৩০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। মুনাফা কমে যাওয়ার ফলে মাংসের দাম বাড়িয়ে লাভের হিসাব ঠিক রাখতে গেলে তার চাপ ভোক্তার ওপরেই পড়বে। স্থায়ীভাবে বছরভর গরুর মাংসের সরবরাহ ঠিক রাখতে হলে গরুর আভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানো ছাড়া বিকল্প নেই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাহাড় সমান অলস টাকা পড়ে রয়েছে। বলাবাহুল্য টাকা ডিম পাড়বে না। অলস টাকা উৎপাদনশীল কাজে লাগাতে হবে। গরিব কৃষক ও খামারিদের সহজ শর্তে ঋণ দানের ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে তারা গবাদি পশু পালনে উৎসাহী হন। এটা ঠিক যে দেশে বিপুলভাবে গরুর চাহিদা বাড়ার মৌসুম একটাই, কোরবানি ঈদ। অনেক বিক্রেতা বেশি দাম পাবার আশায় গরু লালন-পালন করে ঈদের হাট বসার অপেক্ষায় থাকেন। এটা বাস্তবতা। তবে প্রতি সপ্তাহেই ছুটির দিনগুলোতে বাজারে গরুর মাংসের চাহিদা বাড়ে। গরু বিক্রেতারা সেটাও বিবেচনায় নিতে পারেন। সারা বছর গরুর উৎপাদন বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ এবং গবাদি পশু লালন-পালনে মনোযোগ দিলে আমাদের আর বিদেশ থেকে বিপুলসংখ্যক গরু আমদানি করার প্রয়োজন হবে না। চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষিত হলে অর্থনীতির সূত্র অনুযায়ী পণ্যমূল্য অস্বাভাবিক হয়ে উঠবে না। আমরা আশা করব, সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ গরুর মাংসের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার ব্যাপারে সক্রিয় হবেন।
×