ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সময় নিয়ে ভাবনার সময় এখন

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সময় নিয়ে ভাবনার সময় এখন

বিখ্যাত বই ‘ঞযব ঊভভবপঃরাব ঊীবপঁঃরাব’ এর লেখক পিটার ড্রাকার, সময়-ব্যবস্থাপনার জন্য তিনটি ধাপ অনুসরণের সুপারিশ করেন। বইটির যে অধ্যায়ে তিনি এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন, তিনি সেই অধ্যায়টার নাম দিয়েছেন, ‘নিজের সময়কে জানুন’। এ অধ্যায়ে তিনি বলেছেন- ১. আপনার সময়ের বিশ্লেষণ করুন। ২. নিষ্ফল বা নিরর্থক চাহিদাগুলোকে জীবন থেকে ছাঁটাই করুন। ৩. হাতে সময় নিয়ে আপনার কাজগুলো সম্পন্ন করার লক্ষ্য স্থির করুন। নিষ্ফল বা নিরর্থক চাহিদাগুলো ছাঁটাই করুন সময় বিশ্লেষণের পর একটা দুঃখবোধ আপনাকে পেয়ে বসবে! ভাববেন, আমরা এমন অনেক কিছুই করি যা একেবারেই ঝেড়ে ফেলা যায়। আপনার এখন মনে হবে : সকালবেলা কফি খাওয়ার অজুহাতে ক্যাফেতে বসে একঘণ্টা সময় বৃথা নষ্ট না করে বাড়িতেই কফি বানিয়ে খাওয়া যেত না? কফি খেতে খেতে ই-মেইলগুলোও কি পড়া যেত না? টিভির চ্যানেল হাতড়ে বা ইন্টারনেট ঘেঁটে প্রতিদিন দুই ঘণ্টা সময় ব্যয় করা কি আমাদের জন্য সত্যিই জরুরী? আমরা কি এসব থেকে সময় বাঁচাতে পারি না? এগুলো আপনার কাজ। আপনি কিভাবে যথাসময়ের মধ্যে এগুলো করবেন সেটা ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব আপনার। শুধু মনে রাখা উচিত, আপনি যত দ্রুত চলবেন, আপনার সময় তত কম লাগবে। হাতে সময় নিয়ে আপনার কাজগুলো সম্পন্ন করার লক্ষ্য স্থির করুন যখন আপনি কঠিন কিছু নিয়ে কাজ করছেন এবং পুরোপুরি কাজের মধ্যে নিমগ্ন হয়ে আছেন, ঠিক তখনই একটা ফোন কল বা ই-মেইল কিংবা মেসেজ এলার্ট কি বিরক্তিকর নয়? এই তৃতীয় ধাপ বা কৌশলটিতে মূলত যা বলা হচ্ছে তা হলো, আপনাকে সময় ভাগ করে নিতে হবে এবং তা করতে হবে আপনার জন্য সম্ভব্য সর্বোচ্চ সময় খণ্ডে। (অনেকের মতে, এক নাগাড়ে সর্বোচ্চ ৯০ মিনিট মনোযোগ ধরে রাখা সম্ভব। তবে এই ৯০ মিনিট হতে হবে বিরতিহীন)। সামান্য পরিমাণ কাজ করে সর্বোচ্চ পরিমাণ ফলাফল লাভ করতে এই পদ্ধতি সহায়তা করবে। কারণটা খুব সহজ। আর তা হলো, আপনি এভাবে কাজ করলে একটি কাজের প্রতি আপনার সবটুকু মনোযোগ কাজে লাগে নিবিড়ভাবে এবং নির্বিঘেœ। এক ঘণ্টার একটি কাজ করতে আপনার ৪ ঘণ্টা লেগে যাবে যদি প্রতি ১০-১৫ মিনিটে আপনি বিরতি নেন বা বাধাপ্রাপ্ত হন। অন্যের সফলতা ও মঙ্গল দেখে খুব বেশি হতাশ ও ঈর্ষান্বিত না হয়ে তার দৈনন্দিন সমব্যয়ের কার্যতালিকা দেখা যেতে পারে, তাকে নিজের প্রতিপক্ষ না ভেবে তার থেকে অর্জনীয় দিকগুলো গ্রহণ করা। হোক না তিনি সমবয়সী বা কম বয়সী কোন লোক। হিংসাকে যত বেশি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, ততই মঙ্গলকর। হিংসা কোথাও বিজয়ী হলে সেখানে ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী। সমাজ উন্নয়ন বা কোন মিশন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে অতিবাহিত হওয়া সময়টুকু সবচেয়ে বড় নিঃস্বার্থ দান। অপেক্ষাকৃত স্বার্থহীন ব্যক্তিগণ স্বীয় সময় ব্যয়ের জন্য পৃথিবীবাসীর নিকট অধিক স্মরণীয়, বরণীয় ও ভাস্বর হয়ে থাকবেন। বস্তুত নিঃস্বার্থ জনকল্যাণে ব্যয় হওয়া সময়টুকু স্বীয় কল্যাণেও আসে। কারণ বৃহৎ লক্ষ্য ক্ষুদ্র লক্ষ্যের স্বাদটুকুও মিটিয়ে দেয়। বৃহৎ স্বার্থে সময় দিতে যারা বিভিন্ন কৌশলে নিজেদের আড়াল করে রাখে অনেক সময় খালি ঝুড়িও তাদের ভাগ্যে মিলে না। যা নিতান্তই নিজের, সমাজ ও জাতির সঙ্গে ধোঁকার নামান্তর। অনেকেই আবার সময়কে গালি দিতে খুব বেশি অভ্যস্ত। সময়ের দাবি অনুযায়ী সময় ব্যবস্থাপনার অভাবে অনেকেই স্বীয় কর্মের জন্য লজ্জিত ও লাঞ্ছিত হতে হয়, যা ভাগ্যকে দোষারোপ করা অজ্ঞতা বৈ কিছুই নয়। অনর্থক গল্প, গিবত চোগলখুরিসহ অন্যের সমালোচনায় যে সময়টুকু ব্যয় হয়, বার্ষিক সময়ের যোগফল থেকে তার বিয়োগফল বের করা দরকার। তাহলে হয়তো সময়ের সঠিক পরিমাপ ও গুরুত্ব বুঝতে কিছুটা হলেও সম্ভব হবে। একটু পেছনের দিকে তাকালেই দেখা যায়, শিশুকালে বেড়ে ওঠার সময় থেকে এখন পর্যন্ত কতজনের অবদান ছিল আমার জীবন সংগ্রামের সহযোগী হয়ে। হয়ত সৌজন্য আচরণের পরিবর্তে দাম্ভিক পদাচারণা তাঁদের হৃদয়ে আঘাত হেনেছে বারবার। পৃথিবীকে যারা বরণ করে নিতে পেরেছেন, তারা সময়ের কাজ সময়মতোই করেছেন, সাময়িক শক্তি দিয়ে এমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ উচিত হবে না- যার বেগ পোহাতে হবে যুগ থেকে যুগান্তর। আবার সাময়িক কষ্ট পরবর্তী বৃহৎ ক্লান্তি থেকে পরিত্রাণেরও রয়েছে উৎকৃষ্ট উদাহরণ। সময়ের সম্পর্কে অভিজ্ঞতা ব্যক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সে কারণে চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষাগত যোগ্যতার চেয়ে কর্মবয়সের অভিজ্ঞতা প্রাধান্য পায় বেশি। মডেল : অহনা মিঠুন ছবি : ওয়ায়েস কুরুনী
×