ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অবসর কাটান সন্তানের সঙ্গে

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

অবসর কাটান সন্তানের সঙ্গে

জীবনের শুরুতে যা সব থেকে বেশি প্রয়োজন তা হলো পারিবারিক শিক্ষা। কারণ সভ্যতা, ভদ্রতা, নৈতিকতা, কৃতজ্ঞতা বোধ, অপরের প্রতি শ্রদ্বা স্নেহ ও পরোপকারী এবং উদার মানসিকতা এগুলো কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে খুব একটা অর্জন করা যায় না। শিশু যখন হাত-পা নাড়তে শেখে তখন থেকেই মূলত সে পরিবারের বড়দের কাছ থেকে শিখতে শুরু করে। তখন থেকেই তার সামনে বাবা-মা ও বড়দের কথা-বার্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে বেশ সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। বাড়ন্ত শিশুকে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে ভাল-মন্দ বিষয়ে অবহিত করতে হবে। তার সঙ্গে নরম সুরে, মার্জিত আচরনে বিভিন্ন বিষয়ে শেয়ার করুন। শিশুদের মন-মানসিকতা থাকে খুবই কোমল তাই খুব সহজেই যে কোন বিষয়ে তারা শিখে নিতে পারে। অনেক শিশুরাই দুষ্টমির ছলে মিথ্যা বলে, বড়রা যখন বুঝতে পারবেন তখন তাদের কর্তব্য আদর-স্নেহের মাধ্যমে বুঝিয়ে তার এই অভ্যাস থেকে বিরত রাখা। কোন অবস্থাই শিশুকে গালমন্দ করা যাবে না, এতে সে আরও বেশি উৎসাহী হয়ে উঠতে পারে। বড়দের দেখলে সালাম, তার চাইতে ছোটদের প্রতি স্নেহ, সমবয়সীদের সঙ্গে সু-সম্পর্ক, অন্যকে তাচ্ছিল্য না করা এগুলো শিখাতে হবে। বিশেষ করে মায়েদের খেয়াল করতে হবে তার সন্তান অন্যদের প্রতি কতটুকু উদার। ছোট্ট বয়স থেকেই মুক্ত মন-মানসিকতা গড়ে না উঠলে তা পরবর্তী জীবনে আয়ত্ত করা খুবই দূরহ ব্যপার। তাই একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে সন্তানকে গড়ার জন্য পিতা-মাতা ও পরিবারের সদস্যদেরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। মাঝে মধ্যে কাছে কিংবা দূরে কোথাও উদার করা প্রকৃতির সান্নিধ্যে নিয়ে যেতে হবে। ভ্রমণেও শিশু অনেক কিছু শিখতে পারে। বর্তমান শহুরে সমাজে পরিবারের দুজনই থাকেন নিজ কর্মস্থলে ব্যস্ত। ফলে যতটুকু সময় সন্তানের প্রাপ্য তা থেকে সে হয় বঞ্চিত। যৌথ পরিবারের অভাবে, গৃহকর্মীর সান্নিধ্যে, ভার্চুয়াল জগতে মেতে থেকে শিশু হারায় তার সু-শিক্ষা পাওয়ার মতো সোনালি সময়। মনিটরে কার্টুন দেখা আর এ্যাডভ্যাঞ্চার গেম খেলে-শিশুর মস্তিষ্কে ধারণ করে যত সব উৎভট চিন্তা। ধারণ করা সেই চিন্তাচেতনা থেকেই শিশু চায় তার বাস্তবায়ন। পিতা-মাতাকে সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্ব সুলভ আচরণ করতে হবে, তাহলে দেখবেন সন্তান সব কিছুই আপনার সঙ্গে শেয়ার করবে। যে সন্তান শেয়ার করতে শিখবে সেই সন্তান কখনও আদর্শহীন হবে না। পিতা-মাতাকে মনে রাখতে হবে, ঘরের পরিবেশ ভাল বলেই যে সন্তান সভ্য-ভদ্র ও আদর্শবান হবে এ রকম আত্মতৃপ্তিতে ভোগা ঠিক হবে না। কারণ সবসময় গ্রাম্য সেই প্রবাদ কাজে নাও আসতে পারে। তাই সন্তান কাদের সঙ্গে মিশল, বন্ধুত্ব করল সেদিকেও অনুসন্ধানী খোঁজ রাখতে হবে। তবে খোঁজ রাখতে গিয়ে যেন আবার সন্তানের সম্মানে আঘাত না আসে। এতে করে হিতে বিপরীত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। মনে রাখবেন মোটামুটি পাঁচ-ছয় বছর বয়স থেকেই আপনার ছোট্ট সোনামণির নিজেস্ব সম্মানবোধ সৃষ্টি হয়। অবশ্যই ছোট থেকেই সন্তানকে/ সন্তানের সামনে সু-শিক্ষার বিষয়ে আলোচনা ও তার মাঝে চর্চার প্রচলন ঘটাতে হবে। শিক্ষিত হবার জন্য যেমন একাডেমিক শিক্ষার প্রয়োজন তেমনি সন্তানকে, সুস্থ মানসিকতার ধারক ও বাহক হবার জন্য সভ্যতা- ভদ্রতা-নৈতিকতা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার মতো মননের অধিকারী যেন হয় সেই বিষয়ে পিতা-মাতাকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে।
×