ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কবিসভা, নৃত্যগীত ও পালাগানের মনোমুগ্ধকর উপস্থাপনা

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

কবিসভা, নৃত্যগীত ও পালাগানের মনোমুগ্ধকর উপস্থাপনা

মনোয়ার হোসেন ॥ সকালবেলায় বসেছিল কবিদের সভা। দেশ-বিদেশের কবিরা স্বকণ্ঠে পাঠ করলেন স্বরচিত কবিতা। কবিতা পড়ার এ আসরে অংশ নিলেন বাংলাদেশ, ভারত ও নেপালের একত্রিশ কবি। প্রখ্যাত কবিদের সঙ্গে নবীন কবিদের কবিতার শিল্পিত উচ্চারণে উঠে এসেছে বিচিত্র বিষয়। কবিকণ্ঠে কবিতা শুনতে আসা কাব্য অনুরাগীদের আনাগোনায় সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চটি আলোকিত হয়েছিল সকাল থেকে বিকেল অবধি। এরপর সন্ধ্যায় দেশব্যাপী সংস্কৃতিচর্চা ছড়িয়ে দেয়ার প্রত্যাশা সৃষ্টিকারী আয়োজনটি চলে আসে হাসন রাজা মঞ্চে। এখানে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত পর্যন্ত অনুুষ্ঠিত হয়েছে নৃত্যনাট্য, বেজেছে সরোদের সুর, পরিবেশিত হয়েছে রবীন্দ্রসঙ্গীতসহ তিন কবির গান। সব শেষে ছিল শ্রোতাকে উচ্ছ্বসিত করা পালাগানের মনোমুগ্ধকর উপস্থাপনা। আর এভাবেই কবিসভা ও নৃত্যগীতে আনন্দযজ্ঞে পরিণত হয় বেঙ্গল সংস্কৃতি উৎসবের পঞ্চম দিন রবিবার। সিলেট উপশহরের আবুল মাল আবদুল মুহিত ক্রীড়া কমপ্লেক্সে দশ দিনব্যাপী উৎসবের পঞ্চমদিনে কবিকণ্ঠে কবিতাপাঠের মাধ্যমে শেষ হলো তিনদিনের কালি ও কলম সাহিত্য সম্মেলন। দেশের সমাজ-রাজনীতি, নিসর্গের বন্দনা, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কথা বলা কবিতার দোলায়িত ছন্দে উচ্চকিত ছিল সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চ। বসন্ত সকালে অনুষ্ঠিত প্রথম অধিবেশনের শুরুতেই কবিতাপাঠ করেন জাতীয় কবিতা পরিষদের সভাপতি কবি মুহাম্মদ সামাদ। পড়ে শোনান ‘কাক’, ‘ধর্ম’, ‘বৃক্ষ’, ‘অরুণা, কেউ কি থাকতে আসে’ শিরোনামের কবিতা। কিউবার কিংবদন্তি বিপ্লবী ফিদেল ক্যাস্ট্রোকে নিয়ে রচিত কবিতা পড়েছেন কবি ইকবাল হাসান। গুলশানের জঙ্গী হামলনায় নিহত ইতালির নাগরিক সিমোনা মন্টির অনাগত সন্তানের থেমে জীবনের কথা বলা ‘জন্মের আগে আমি মৃত্যুকে করেছি আলিঙ্গন’ শীর্ষক কবিতা পাঠ করেছেন তারিক সুজাত। তরুণ কবি পিয়াস মজিদের কবিতার শিরোনাম ছিল ‘কুরুক্ষেত্রে আলোর কুয়াশা’। কয়েকটি সুখশ্রাব্য কবিতা পড়ে কবিতানুরাগীদের নজর কেড়েছেন আরেক তরুণ কবি সাকিরা পারভীন। সিরিয়ার সংঘাতময় পরিস্থিতি নিয়ে রচিত কবিতা পাঠ করেন পশ্চিমবঙ্গের কবি বীথি চট্টোপাধ্যায়। উদ্বাস্তু হওয়া এক বিড়ালের সূত্র ধরে সেই কবিতায় উঠে আসে উদ্বাস্তু জীবনের চিত্র। কবি রবিউল হুসাইনের সভাপতিত্বে এ অধিবেশনে আরও কবিতা পড়েছেন কলকাতার কবি মন্দাক্রান্তা সেন ও আগরতলার কবি রাতুল দেব বর্মণ। কবি রুবী রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে কবিতা পড়েছেন এদেশের কবি আসাদ চৌধুরী, আনিসুল হক, আবুল মোমেন, মারুফুল ইসলাম, হেনরী স্বপন, মোস্তাক আহমাদ দ্বীন ও জফির সেতু। এছাড়াও এ অধিবেশনে স্বকণ্ঠে কবিতা পড়েছেন ভারতের দুই কবি শতরূপা সান্যাল, আশিস সান্যাল ও নেপালের কবি কৃষ্ণ প্রাসাই। আশিস সান্যালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে কবিতা পাঠ করেছেন স্বদেশের কবি রুবী রহমান, আলতাফ হোসেন, শিহাব সরকার, টোকন ঠাকুর, ওবায়েদ আকাশ, শাহনাজ নাসরীন, আহমেদ মুনীর. আসমা বীথি ও ফজলুর রহমান বাবুল। হাসন রাজা মঞ্চে উৎসবের পঞ্চমদিনের সান্ধ্যকালীন পরিবেশনার সূচনা নৃত্যনাট্য পরিবেশনার মাধ্যমে। নীলাঞ্জনা দাশের পরিচালনায় মঞ্চস্থ হয় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নৃত্যনাট্য ‘দ্রোহকাল’। নাচের পরে ছিল সরোদ বাদন। সরোদে সুমধুর সুর ছড়িয়ে শ্রোতাদের শ্রবণের সুখময়তায় আচ্ছন্ন করেছেন সরোদিয়া রাজরূপা চৌধুরী। সরোদের বাদন শেষে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের গান শুনিয়েছেন লাইসা আহমদ লিসা। রবীন্দ্রসঙ্গীতের পাশাপাশি এই কণ্ঠশিল্পী শুনিয়েছেন তিন কবির গান। দশদিনের উৎসবের পঞ্চরজনীর শেষ পরিবেশনাটি ছিল অনবদ্য। শ্রোতা দর্শকের মাঝে মুগ্ধতার সঙ্গে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পালাগান পরিবেশন করেছেন কুদ্দুস বযাতি। আজকের আয়োজন ॥ আজ সোমবার ষষ্ঠদিনে পদার্পণ করবে বেঙ্গল সংস্কৃতি উৎসব। এদিন বিকেল চারটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত তিনটি সময়সূচীতে সৈয়দ মুজতবা আলী মঞ্চে প্রদর্শিত হবে এই সময়ের তিন আলোচিত চলচ্চিত্র। ছবিগুলো হলো আয়নাবাজি, অজ্ঞাতনামা ও জালালের গল্প। সন্ধ্যায় হাসন রাজা মঞ্চে সাংস্কৃতিক পরিবেশনার সূচনা হবে ধামাইল গানের মাধ্যমে। উপস্থাপন করবেন রামকৃষ্ণ সরকার ও তার দল। থাকবে ঝুমুর চা জনগোষ্ঠীর পরিবেশনা। হালুতুন্নবী শীর্ষক নাগরি পুঁথি পাঠ করবেন আলী আসহাব। সিলেটের আঞ্চলিক গান শোনাবেন সুষমা দাস, শামীম আহমেদ ও বাউল সূর্যলাল দাশ। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত দশদিনের এ উৎসব শেষ হবে ৩ মার্চ। পুরো উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছে জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাককে। ইনডেক্স গ্রুপ নিবেদিত এ উৎসবের সহযোগিতায় রয়েছে ঢাকা ব্যাংক। সম্প্রচার সহযোগী চ্যানেল আই। প্রতিদিনই কয়েকটি মঞ্চে অনুষ্ঠান হবে। মূল অনুষ্ঠান হবে সৈয়দ মুজতবা আলী এবং হাছন রাজা মঞ্চে। এ ছাড়া প্রথমদিন থেকেই শাহ আবদুল করিম চত্বরে বাদ্যযন্ত্র ও সিলেট অঞ্চলের লোকগানের ইতিহাস নিয়ে প্রদর্শনী; গুরুসদয় দত্ত চত্বরে কারুমেলা ও বেঙ্গল প্যাভিলিয়ন এবং কুশিয়ারা কলোনেডে চলছে স্থাপত্য প্রদর্শনী। রাধারমণ দত্ত বেদিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সুবীর চৌধুরী আর্ট ক্যাম্প।
×