কোর্ট রিপোর্টার ॥ তিন বছর বয়সী শিশু জিহাদের পাইপে পড়ে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যুর মামলায় চার আসামিকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। তাদের ২ লাখ টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও ২ বছর করে কারাদণ্ডাদেশও দেয়া হয়েছে। মামলার দুই আসামি খালাস পেয়েছেন।
কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন-শাহজাহানপুর রেল কলোনিতে পানির পাম্প বসানোর প্রকল্প পরিচালক রেলওয়ের জ্যেষ্ঠ উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জেএসআরের মালিক প্রকৌশলী আব্দুস সালাম ওরফে শফিকুল ইসলাম, কমলাপুর রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন ও ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার আবু আহমেদ শাকি। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পেয়েছেন কমলাপুর রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী দিপক কুমার ভৌমিক ও সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম। গতকাল রোববার এ রায় দেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ বিচারক ড. মোঃ আখতারুজ্জামানের আদালত।
রায় ঘোষণাকালে আসামিরা সবাই আদালতে হাজির ছিলেন। দণ্ডপ্রাপ্তদের সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিকেলে বাসার কাছে রেলওয়ে মাঠের পাম্পের পাইপে পড়ে যায় জিহাদ। প্রায় ২৩ ঘণ্টা শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানের পর ২৭ ডিসেম্বর বিকেল তিনটার দিকে জিহাদকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। শিশুটিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নিহত জিহাদের বাবা নাসির ফকির ফৌজদারি আইনের ৩০৪/ক ধারায় ‘দায়িত্বে অবহেলায়’ জিহাদের মৃত্যুর অভিযোগে শাহজাহানপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। গত বছরের ৪ অক্টোবর ৬ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ (অভিযোগ) গঠন কনে আদালত।
২০১৫ সালের ৩১ মার্চ ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক আবু জাফর প্রথম দুই আসামি জাহাঙ্গীর আলম ও প্রকৌশলী আব্দুস সালামের বিরুদ্ধে প্রথম চার্জশীটটি দাখিল করেন। ৪ জুন মামলার বাদী নিহত জিহাদের বাবা নাসির ফকির চার্জশীটের বিরুদ্ধে নারাজি আবেদন জানালে আদালত তা গ্রহণ করে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয়। অধিকতর তদন্ত শেষে গত বছরের ৩১ মার্চ ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক মিজানুর রহমান দ্বিতীয় চার্জশীটটি দাখিল করেন। সম্পূরক চার্জশীটে অন্য চারজনকে আসামি করা হয়।
চার্জশীটে উল্লেখ করা হয়, ‘এসআর হাউজ’ নামক প্রতিষ্ঠান শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনির মৈত্রী সংঘ মাঠের পূর্ব-দক্ষিণ কোণে একটি পানির পাম্পের ঠিকাদারি নিয়ে অনুমান ৬শ’ ফুট কূপ খনন করে। কিন্তু কূপের মুখ খোলা রেখে কোন নিরাপত্তার ব্যবস্থা না করে অবহেলা ও তাচ্ছিল্যভরে তা দীর্ঘদিন ফেলে রাখে। ফলে শিশু জিহাদ (৩) ওই স্থানে খেলা করতে গিয়ে পাইপের ভেতরে পরে গিয়ে মারা যায়’।
গত বছরের ১৮ অক্টোবর থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত জব্দ তালিকার ৩ জনসহ মোট ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করে আদালত। ২৯ ডিসেম্বর থেকে গত ০৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২৬ ফেব্রুয়ারি রায়ের দিন ধার্য করে আদালত।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: