ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

খাদিজা হত্যাচেষ্টা মামলার যুক্তিতর্ক ১ মার্চ

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

খাদিজা হত্যাচেষ্টা  মামলার যুক্তিতর্ক  ১ মার্চ

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট অফিস ॥ কলেজছাত্রী খাদিজা হত্যাচেষ্টা মামলার যুক্তিতর্কের দিন আগামী ১ মার্চ ধার্য করেছে আদালত। ঘটনার ৩ মাস ২২ দিন পর রবিবার সকালে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে নিয়ে আদালতে আসেন খাদিজা। সিলেট মুখ্য মহানগর হাকিম সাইফুজ্জামান হিরোর আদালতে বদরুলকে চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন তিনি। খাদিজার সাক্ষ্য নেয়ার পর আসামি পক্ষ সাফাই সাক্ষী দেবে না বলে সিদ্ধান্ত জানালে বিচারক যুক্তিতর্কের দিন ধার্য করেন। খাদিজা হত্যাচেষ্টা মামলায় মোট ৩৩ সাক্ষীর মধ্যে ৩২ জন আগেই সাক্ষ্য দিয়েছেন। রবিবার খাদিজার সাক্ষ্য নেয়ার মাধ্যমে এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হলো। রবিবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটে প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে নিয়ে আসা হয় খাদিজা হত্যা চেষ্টা মামলার আসামি বদরুলকে। এদিকে সকাল থেকেই আদালতপাড়ায় ভিড় করেন উৎসুক জনতা। বদরুলকে আদালতে হাজির করার ঠিক আট মিনিট পর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আদালতে আসেন খাদিজা আক্তার নার্গিস। দুপুর ১২টার দিকে তিনি প্রবেশ করেন এজলাস কক্ষে। তখনই শুরু হয় আদালতের কার্যক্রম। বিচারকের সামনে বদরুলকে শনাক্ত করে সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিতে থাকেন খাদিজা। ঠিক তখনই ‘কিছু বলতে চাই’ বলে চিৎকার করে ওঠেন বদরুল। উত্তেজিত বদরুল বিচারককে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকেন, ‘আমি কিছু বলতে চাই। আমাকে একটা সুযোগ দিন। আমি সত্য কথা বলব। আমি একজন শিক্ষক ছিলাম, আমি বঙ্গবন্ধুর সৈনিক।’ এ সময় বদরুলকে সতর্ক করে দেন আদালতের বিচারক সাইফুজ্জামান হিরো। বিচারক বলেন, ‘আদালত বক্তৃতা দেয়ার জায়গা নয়।’ বিচারকের কাছ থেকে অনুমতি না পেয়ে কাঠগড়ায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন বদরুল। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিচারক মামলার যুক্তিতর্কের তারিখ আগামী ১ মার্চ ধার্য করেন। ওই সময় ফের উত্তেজিত বদরুল চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘তুমি সুখী হও, খাদিজা। বিচারক আল্লাহ আছেন। আমার ফাঁসি হোক। তুমি আমার পরিবারকে পথে বসিয়েছ। মিথ্যাবাদী।’ এ সময় বদরুলের আইনজীবীও উপস্থিত পুলিশ সদস্যরা তাকে নিবৃত্ত করে এজলাস থেকে বের করে নিয়ে যান। উল্লেখ্য, এর আগেও একবার আদালত প্রাঙ্গণে চিৎকার করে নিজের ফাঁসি দাবি করেছিল বদরুল। আদালতের কাছেও বর্বর বদরুলের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছেন খাদিজা বেগম। সাক্ষ্য প্রদানকালে তিনি বিচারকের কাছে এ দাবি জানিয়েছেন। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে এজলাস থেকে বেরিয়ে খাদিজা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি জানান, সাক্ষ্য দেয়ার সময় বিচারকের কাছে বদরুলের সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছেন। এছাড়াও ঘটনার দিনের বর্ণনাও করেছেন তিনি। জবানবন্দী গ্রহণ শেষে আসামি পক্ষের আইনজীবীরা খাদিজাকে জেরা করেন। আসামিকে চেনেন কিনা আসামি পক্ষের আইনজীবীর এক প্রশ্নের জবাবে খাদিজা বলেন, সে আমার ছোট ভাইবোনদের পড়াত সে সুবাদে তাকে আমি চিনতাম। খাদিজার ব্যবহৃত মোবাইলটি আসামি বদরুল কিনে দিয়েছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে খাদিজা বিষয়টি অস্বীকার করেন। আসামিপক্ষের আইনজীবীর প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার দিন আসামি বদরুলের দেয়া খাবার ও পানীয় গ্রহণ করার বিষয়টিও অস্বীকার করেন খাদিজা। পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে প্রায় ২০ হাত দূরত্বের ঘটনাস্থলে খাদিজা স্বেচ্ছায় গিয়েছিলেন কিনা এই প্রশ্নের জবাবে তিনি সেখানে স্বেচ্ছায় যাননি বলে আদালতকে জানান। জেরার আগে সিলেট মহানগর মুখ্য হাকিম আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর এ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান খাদিজার কাছে ঘটনার স্থান, সময় ও ঘটনার বিবরণ জানতে চাইলে খাদিজা তার উত্তরে এ বিষয়গুলোর বর্ণনা দেন। মামলার আসামি বদরুলের আইনজীবী সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী বলেন, আদালতে নিজের দোষ স্বীকার করেছেন বদরুল। খাদিজার ওপর হামলার ঘটনার সময় বদরুল স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলেন না। তিনি নেশাগ্রস্ত ছিলেন। আদালত বিষয়টি মানবিক বিবেচনায় নিয়ে তার মক্কেলকে খালাস দেবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। খাদিজার আইনজীবী আ ক ম শিবলী বলেন, আদালতে দাঁড়িয়ে খাদিজা তার ওপর হামলাকারী বদরুলের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেছেন। তিনি বলেন, বদরুল পূর্বপরিকল্পিতভাবে খাদিজার ওপর হামলা করেছিল। এখন সে নেশাগ্রস্ত ছিল বলে ভনিতা করা হচ্ছে। এসব ভনিতা ন্যায় বিচার বাধাগ্রস্ত করবে না।
×