ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পরীক্ষা চলাকালে ১৪৪ ধারার মধ্যেই হলো অধ্যক্ষ সম্মেলন

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

পরীক্ষা চলাকালে ১৪৪ ধারার মধ্যেই হলো অধ্যক্ষ সম্মেলন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাবলিক পরীক্ষার সময় কেন্দ্রজুড়ে ১৪৪ ধারা জারির মধ্যেই কেন্দ্রে অধ্যক্ষ সম্মেলন করল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর (মাউশি)। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডগুলো যেখানে পরীক্ষার্থীদের ক্ষতি এড়াতে নীরবতা পালনের উদ্যোগ নেয় সেখানে মাউশির এ কর্মকা- ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। রবিবার সকালে এসএসসির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় পরীক্ষার মধ্যেই রাজধানীর আজিমপুর সরকারী গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজে এমনই ঘটনায় জন্ম দিয়েছে মাউশি। পাবলিক পরীক্ষার নীতিমালা অনুযায়ী পরীক্ষা কেন্দ্রের ২০০ গজের মধ্যে ১৪৪ ধারা জারি থাকে। অর্থাৎ ২০০ গজের মধ্যে কোন প্রকার জমায়েত নিষিদ্ধ, সভা-সমাবেশ করাত দূরের কথা। এই নীতিমালা প্রণয়ন করেছে যে প্রতিষ্ঠান সেই মাউশিই পরীক্ষা কেন্দ্রের এই ১৪৪ ধারা ভাঙ্গলেন বলে সমালোচনার ঝড় বইছে শিক্ষা প্রশাসনে। আজিমপুর গবর্নমেন্ট গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজে সকাল থেকে একদিকে চলেছে এসএসসি পরীক্ষা, অন্যদিকে মাউশি আয়োজনে সারাদেশ থেকে আগত অধ্যক্ষদের নিয়ে অডিটোরিয়ামে চলে সরকারী কলেজ অধ্যক্ষদের সম্মেলন। ফলে চরম অসুবিধার মধ্যে পড়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীরা। সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরু হয়। শেষ হয় বেলা ১টায়। কিন্তু অধ্যক্ষ সম্মেলন শুরু হয় সকাল পৌনে ১০টায়। একই সময়ে পরীক্ষার্থীরা ও সম্মেলনে আগত অতিথিরা প্রবেশ করে। এ সময় অধ্যক্ষদের প্রায় সকলের গাড়িও কেন্দ্রে প্রবেশ করে। এতে করে বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয় কেন্দ্রে আসা পরীক্ষার্থীদের। পরীক্ষা কেন্দ্রে সম্মেলন আয়োজনের বিষয়ে মাউশি অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এস এম ওয়াহিদুজ্জামান সাংবাদিকদের অবশ্য বলেন, পরীক্ষার্থীদের কোন প্রকার অসুবিধা না করেই সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া অধ্যক্ষদের গাড়িগুলো পরীক্ষা শুরুর আগেই অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেছে। অন্য কোথাও জায়গা না পাওয়ায়ই এখানে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। তবে পরীক্ষা চলাকালে বেলা ১টার আগে ওই কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, কিছুক্ষণ পরপরই অধ্যক্ষদের কেউ কেউ মিলনায়তন থেকে বের হয়ে বাইরে যাচ্ছেন, আবার আসছেন। অসুবিধার অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা ও তাদের অভিভাবকরা। এক অভিভাবক বলছিলেন, সাউন্ড বক্সের শব্দেও কিছুটা সমস্যা হয়েছে। আমরা শিক্ষকদের কাছে অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোন প্রতিকার পাইনি। গতকালের দিনব্যাপী অধ্যক্ষ সম্মেলনে পুরানো ৩২৯ সরকারী কলেজের শিক্ষকরা অংশগ্রহণ করেন। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল ‘মানসম্পন্ন শিক্ষা’। সারাদেশ থেকে আগত অধ্যক্ষরা তাদের ৫১ ধরনের সমস্যা সম্মেলনে তুলে ধরেন। শিক্ষক সঙ্কটই সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে জানান অধ্যক্ষরা। দিন দিন শিক্ষার্থী বাড়লেও শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় পদ সৃষ্টি হয়নি বলে জানান তারা। এছাড়া এবারের সম্মেলনে অবকাঠামো ও পরিবহন সমস্যা, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর আবাসন সমস্যা, শিক্ষকদের মর্যাদার সঙ্কটসহ নানা সমস্যা তুলে ধরা হয়। অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এস এম ওয়াহিদুজ্জামানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মোঃ সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোঃ আলমগীর প্রমুখ। এদিকে পরীক্ষার এক ঘণ্টারও পর অনুষ্ঠানে আসেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি বলেন, কলেজগুলো উচ্চশিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সীমিত সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে কলেজগুলোতে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ বজায় রাখতে হবে। কলেজগুলোতে শিক্ষার উন্নত পরিবেশ তৈরিতে অধ্যক্ষগণকে টিম লিডার হিসেবে কাজ করতে হবে। শিক্ষকদের পাঠদানের দক্ষতা আরও বাড়াতে হবে। শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, সকল সরকারী কলেজের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য আলাদা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। কলেজগুলোতে ছাত্রী হোস্টেল নির্মাণের জন্যও প্রকল্প নেয়া হয়েছে। কলেজের উন্নয়ন ও অন্যান্য বিষয়ে প্রতিমাসে একটি প্রতিবেদন অধিদফতরে প্রেরণের জন্যও তিনি অধ্যক্ষদের নির্দেশ দেন।
×