ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কাল কার্যক্রম দেখতে যাচ্ছেন তারানা হালিম

কুয়াকাটায় দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন

প্রকাশিত: ০৫:২০, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

কুয়াকাটায় দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল ল্যান্ডিং স্টেশন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল কার্যক্রম দেখতে ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি কুয়াকাটা যাচ্ছেন। কুয়াকাটায় ১০ একর জমিতে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের ল্যান্ডিং স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। এখান থেকে ঢাকার মগবাজার টেলিফোন ভবন পর্যন্ত সংযোগ স্থাপনের কাজও তিনি পরিদর্শন করবেন। গত ২১ ফেব্রুয়ারি তুরঙ্কের ইস্তানবুলে সি-মি-ইউ-৫ কনসোর্টিয়ামের বৈঠক শেষে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের মালিক দেশগুলোতে সংযোগ দেয়া হয়েছে। তবে এই সংযোগ শুধুমাত্র ল্যান্ডিং স্টেশন পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রয়েছে। ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ সরবরাহের কাজটি করবে স্ব স্ব দেশ। বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) জানিয়েছে, দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে কুয়াকাটা ল্যান্ডিং স্টেশন। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল সংযুক্ত হওয়ায় দেশে অতিরিক্ত ১ হাজার ৩০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ পাওয়া যাবে। ভবিষ্যতে আরও ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ সরবরাহ বাড়ানো সম্ভব হবে। বর্তমানে দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারের পরিমাণ ৪শ’ জিবিপিএসের বেশি। এই ৪শ’ জিবিপিএসের মধ্যে ১২০ জিবিপিএস বিএসসিসিএলের প্রথম সাবমেরিন কেবলের মাধ্যমে আসছে। বাকি ২৮০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ আইটিসির মাধ্যমে ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে। বিএসসিসিএলের এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে কুয়াকাটা-ঢাকা ব্যাকহোল লিংক বা কেবল স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে। বিটিসিএলের এই ব্যাকহোল লিংক স্থাপনের কাজ সম্পন্ন ও টেস্টিং সম্পন্ন হওয়ার পরে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের আনুষ্ঠানিক বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করা হবে। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা ল্যান্ডিং স্টেশনের ট্রান্সমিশন লিংক স্থাপনের কাজ কবেনাগাদ শেষ হবে তা তিনি বলতে পারেননি। তবে কাজ যাতে দ্রুত শেষ করা যায় সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম কুয়াকাটা যাচ্ছেন দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের কার্যক্রম দেখতে। বাংলাদেশ সাবমেরিন কেবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটায় ১০ একর জমিতে ল্যান্ডিং স্টেশন স্থাপনসহ নানা অবকাঠামো তৈরি করেছে। এখান থেকে সারাদেশে ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ সরবরাহ করা হবে। ল্যান্ডিং স্টেশন থেকে ঢাকার মগবাজার টেলিফোন ভবন পর্যন্ত কেবল স্থাপনের কাজও প্রতিমন্ত্রী পরিদর্শন করবেন। যত দ্রুত সম্ভব দেশের মানুষকে বাড়তি ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দেয়ার জন্য কেবল স্থাপনের কাজ শেষ করার হবে। ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো (আইএসপি) জানিয়েছে, দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় দেশে ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রে আরও একধাপ এগিয়ে গেল। একটি কেবল কোন কারণে বিকল হলে অন্য কেবলটি ব্যাকআপ হিসাবে কাজ করবে। দেশে নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সুবিধা থাকবে। ফলে ব্যবসা বাণিজ্য থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজকর্মে গতি বাড়বে। দেশে বিনিয়োগও বৃদ্ধি পাবে বলে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোপাইডররা (আইএসপি) মনে করছেন। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল দেশের মানুষের কাছে একটি বড় সুখবর। এই কেবল দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আগের একটি সাবমেরিন কেবলে থাকায় কোন কারণে কাটা পড়লে ইন্টারনেট সেবা বিঘœ ঘটত। তখন ভারত থেকে আমদানি করে চাহিদা মেটাতে হতো। দ্বিতীয় সাবমেরিনে যুক্ত হওয়ার ফলে এখন একটা ব্যাকআপ তৈরি হলো। প্রতিটি সাবমেরিন কেবলের লাইফ টাইম ১০ থেকে ১৫ বছর। এখনই উচিত তৃতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপনের চিন্তা করা। ভারত অন্তত ২০ সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের সদস্য দেশগুলো হচ্ছে, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, সৌদি আরব, মিসর, ইতালি, তিউনিশিয়া, আলজেরিয়া ও ফ্রান্স। সি-মি-উই-৫ কনসোর্টিয়ামে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, ভারত, পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরবসহ ইউরোপের কয়েকটি দেশ নিয়ে। দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের মালিকও দ্বিতীয় কনসোর্টিয়ামের সদস্য দেশগুলো। উল্লেখ্য বিএসসিসিএল দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে যুক্ত হতে ২০১১ সালের ২৮ ডিসেম্বর এসইএ-এমই-ডব্লিই-৫ সাবমেরিন কেবলে কনসোর্টিয়ামের সঙ্গে সিএ্যান্ডএমএ চুক্তি সই করে। পরে কনসোর্টিয়াম নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এসইএ-এমই-ডব্লিই-৫ সাবমেরিন কেবল স্থাপন সংক্রান্ত কার্যক্রম শুরু করে। দীর্ঘ ৫ বছর সময়ে দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবল স্থাপনের কাজ শেষ হলো। প্রথম সাবমেরিন কেবল যে কয়টি দেশ মালিক দ্বিতীয় সাবমেরিন কেবলেও ওইসব দেশ মালিক। ২০০৫ সালে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো সাবমেরিন কেবলে ‘সি-মি-ইউ-৪’ এর সঙ্গে যুক্ত হয়। এই কেবলের মধ্যমে প্রথমে ৪৪ দশমিক ৬ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ দেশে আসত। পরে কেবলটির আপগ্রেড করার পর এখন এই কেবলের মাধ্যমে ২০০ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ দেশে আসছে।
×