ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ই-হেলথ অপশনে ক্লিক করলেই মিলবে সমুদয় স্বাস্থ্যসেবা

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ই-হেলথ অপশনে ক্লিক করলেই মিলবে সমুদয় স্বাস্থ্যসেবা

নিখিল মানখিন ॥ দেশের সর্বত্র বিস্তার লাভ করেছে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার নেটওয়ার্ক। ঘরে বসেই স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে চিকিৎসকদের পরামর্শসহ কোথায়, কী ধরনের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায় তার পুরো গাইডলাইন তৈরি করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। দেয়া হয়েছে সেবা প্রদানকারীদের নাম ও মোবাইল নম্বরসমূহ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে (িি.িফমযং.মড়া.নফ) প্রবেশ করে ‘ই-হেলথ’ এ ক্লিক করলেই বেরিয়ে আসবে স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন ক্ষেত্র। তাৎক্ষণিক ডাক্তারী পরামর্শ গ্রহণ করে উপকৃত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এতে সময় ও আর্থিক খরচ বাঁচানোর পাশাপাশি দুর্ভোগ থেকেও রেহাই পাচ্ছে সেবাগ্রহিতারা। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, িি.িফমযং.মড়া.নফ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে ‘ই-হেলথ’ অপশনে ক্লিক করলে চলে আসবে স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন ক্ষেত্র। সেগুলো হলো - মোবাইল ফোনে স্বাস্থ্যসেবা, মোবাইল ফোনে স্বাস্থ্যসেবার নম্বরসমূহ, টেলিমেডিসিন সেবা, কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহে টেলিমেডিসিন সেবা খুদে বার্তার মাধ্যমে অভিযোগ-পরামর্শ জানানোর ব্যবস্থা, খুদে বার্তার মাধ্যমে প্রসূতি পরামর্শ, খুদে বার্তার মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান, হাসপাতাল অটোমেশন, তথ্য প্রযুক্তির সাহায্যে অফিস উপস্থিতি তদারকি, অনলাইন পপুলেশন হেলথ রেজিস্ট্রি, মানবসম্পদ ডাটাবেজ, অনলাইনে মেডিক্যাল-ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা প্রক্রিয়াকরণ, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী তদারকি সফটওয়্যার, সকল স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে বিশাল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, স্বাস্থ্যসেবা জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম, অফিসিয়াল কর্মসূচী ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার, বাংলাদেশের ই-স্বাস্থ্য সেবা সংক্রান্ত মানদ-সমূহ ও তথ্য-ব্যবস্থাসমূহের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ কাঠামোর খসড়া, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদের অবস্থান ইত্যাদি তথ্য কেন্দ্রীয় অফিসসহ দেশের সকল সাধারণ মানুষ তথ্য সংগ্রহ ও সেবাসমূহ গ্রহণ করতে পারবেন। পুরোদমে এগিয়ে চলছে স্বাস্থ্য খাতে ডিজিটাল বাংলাদেশ কার্যক্রম। মাঠ পর্যায়ে বিতরণ করা হয়েছে ল্যাপটপ ও ট্যাবলেট কম্পিউটার। গ্রাম এলাকার প্রতিদিনের স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের সব পরিসংখ্যান তাৎক্ষণিকভাবে কেন্দ্রীয়ভাবে মনিটরিং করা সম্ভব হচ্ছে। দেশের ৬৪ জেলা এবং ৪১৮ উপজেলা হাসপাতালে ইতোমধ্যে একটি করে মোবাইল ফোন দেয়া হয়েছে। উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত প্রায় ৮শ’ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক এবং জেলা সিভিল সার্জনের অফিসে। সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে চালু করা হয়েছে টেলিমেডিসিন সুবিধা। স্বাস্থ্যসেবায় থাকছে জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম এবং কম্পিউটারাইজড অটোমেশন ব্যবস্থা। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরামর্শ নিতে পারবে সাধারণ মানুষ। মোবাইল ফোনের নম্বর স্থানীয় পর্যায়ে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিভাগের ওয়েব সাইটেও (িি.িফমযং.মড়া.নফ) নম্বরগুলো দেয়া হয়েছে। ২৪ ঘণ্টাব্যাপী কোন না কোন চিকিৎসক এই মোবাইল ফোনের কল রিসিভ করবেন। একটি মাত্র কল করেই ব্যস্ত মানুষও রোগের শুরুতেই পরামর্শ নিতে পারবেন চিকিৎসকের। এতে রোগ জটিল হওয়ার সম্ভাবনাও অনেকটাই কমে যাবে। এভাবে ঘরে বসেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া সম্ভব হবে। উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত প্রায় ৮শ’ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার ও ইন্টারনেট সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে দেশে এমন কোন সরকারী হাসপাতাল নেই যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ নেই। এতে তথ্য আদান-প্রদান ও মনিটরিং ব্যবস্থার উন্নতি ঘটায় স্বাস্থ্যসেবার মানের গুণগত উন্নতি ঘটছে। অনলাইন ডাটাবেজসহ ইমেলের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে তথ্য পাওয়ায় দেশের স্বাস্থ্য পরিস্থিতি সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। আর সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হচ্ছে। সাধারণভাবে প্রতিটি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান দৈনিক কমপক্ষে চারবার ইমেল চেক করে থাকে। প্রতিটি বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক এবং জেলা সিভিল সার্জনের অফিসে ওয়েব ক্যামেরা প্রদান করা হয়েছে। ভিডিও কনফারেন্সিং ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত সভা অনুষ্ঠান বা মতবিনিময় করাই এর মূল উদ্দেশ্য। এখন একটি বিশেষ সফটওয়ার সংগ্রহ করা হয়েছে যা দিয়ে একই সঙ্গে ২৫ টি ভিডিও কনফারেন্সিং করা যাবে। আগামী কিছু দিনের মধ্যে দেশে থ্রি জি টেলিফোন সেবা চালু হবে। ইতোমধ্যে ভিডিও ফোন ব্যবস্থা চালু হয়েছে। সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ে চালু করা হয়েছে টেলিমেডিসিন সুবিধা। এছাড়া দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের আটটি হাসপাতালে উন্নত ভিডিও কোয়ালিটির টেলিমেডিসিন সুবিধা স্থাপন করা হবে। এর সংশ্লিষ্ট উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা আধুনিক মানের টেলিমেডিসিন পদ্ধতিতে বিশেষায়িত হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে পারবেন। ফলে নিম্ন পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি রোগীদের জন্য উচ্চ পর্যায়ের হাসপাতালসমূহে কর্মরত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নেয়া সহজ হবে। রোগীদের ভ্রমণের প্রয়োজন ও ভোগান্তি কমবে বহুগুণ। বিদেশীদের কাছেও একটি সফল ডিজিটাল চিকিৎসক সমাজ হিসেবে সম্মানিত হবে। স্বাস্থ্য বিভাগ মোবাইল ফোনের শর্ট মেসেজ সার্ভিস বা এসএমএস ব্যবহার করে উদ্ভাবনামূলক হেলথ ক্যাম্পেন, স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার কাজ শুরু করেছে এবং তা ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে চলেছে। এ জন্য সকল স্বাস্থ্য বিভাগের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর মোবাইল ফোন নম্বরের একটি ডাটাবেজ তৈরি করা হয়েছে। একটি এসএমএস কমপ্লেন/সাজেশন বক্স চালু করা হয়েছে। এর মাধ্যমে যেকোন নাগরিক ১৪২৪২ নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত অভিযোগ বা পরামর্শ জমা দিতে পারেন। স্বাস্থ্যসেবায় থাকছে জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিস্টেম (জিআইএস) এবং কম্পিউটারাইজড অটোমেশন ব্যবস্থা। জিআইএস পদ্ধতি প্রয়োগে দেশের কোথায় কি স্বাস্থ্যসেবা আছে, কোথায় নেই, কোথায় প্রয়োজন-এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে সঠিক পরিকল্পনা ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যবস্থা ধীরে ধীরে গড়ে তোলা হচ্ছে। এ জন্য দেশের প্রতিটি সিভিল সার্জনের অফিসে গোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস নামক যন্ত্র সরবরাহ করা হবে। মোবাইল ফোন সেবা ॥ মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নাগরিকরা এখন সরকারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত চিকিৎসকের কাছ থেকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরামর্শ নিতে পারছেন। সেজন্য বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে (মোট ৪৮২ হাসপাতাল) একটি করে মোবাইল ফোন দেয়া হয়েছে। এসব মোবাইল ফোনের নম্বর স্থানীয় পর্যায়ে প্রচারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে ক্লিক করলে আপনি নম্বরগুলোর তালিকা পাবেন। ২৪ ঘণ্টাব্যাপী কোন না কোন চিকিৎসক এই মোবাইল ফোনের কল রিসিভ করেন। স্থানীয় জনগণ এসব মোবাইল ফোনে ফোন করে হাসপাতালে না এসেই বিনামূল্যে চিকিৎসা পরামর্শ নিতে পারেন। টেলিমেডিসিন সেবা ॥ দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের ১৮ হাসপাতালে উন্নত মানের টেলিমেডিসিন সেবা চালু আছে। শীঘ্রই যুক্ত হচ্ছে আরও ১০ হাসপাতাল এই সেবা চালুর ফলে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে ভর্তি রোগীরা আধুনিক মানের টেলিমেডিসিন পদ্ধতিতে বিশেষায়িত হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে পারছেন। এছাড়া প্রতিটি উপজেলা হাসপাতাল, জেলা হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজ ও ইনস্টিটিউট হাসপাতালে ওয়েব ক্যামেরা প্রদান করা হয়েছে। ফলে নিম্ন পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি রোগীদের জন্য উচ্চ পর্যায়ের হাসপাতালসমূহে কর্মরত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। খুদে বার্তার মাধ্যমে অভিযোগ-পরামর্শ জানানোর ব্যবস্থা ॥ সাধারণ মানুষ এখন যে কোন সরকারী হাসপাতালের সেবার মানের ব্যাপারে অভিযোগ বা পরামর্শ জানাতে পারেন তাৎক্ষণিক। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে এসএমএস করে। কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থাও নেন তাড়াতাড়ি। ফলে সরকারী হাসপাতালের সেবার মান বৃদ্ধিতে নতুন সুযোগের সৃষ্টি হয়েছে। আপনিও এ সুযোগ নিন। প্রতিটি সরকারী হাসপাতলের দেয়ালেই একটি করে সাইন বোর্ড লাগানো আছে। এই সাইন বোর্ডে কিভাবে এসএমএস পাঠাতে হবে তা সহজ ভাষায় বর্ণনা করা আছে। এই বর্ণনা অনুসরণ করে এসএমএস করুন। এসএমএসের মাধ্যমে প্রসূতি পরামর্শ ॥ একজন মা গর্ভধারণ করলে তিনি খুদে বার্তার মাধ্যমে প্রসূতি পরামর্শ নিতে পারেন। এ জন্য তাকে এ সেবার জন্য রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। রেজিস্ট্রেশন করা সহজ। রেজিস্ট্রেশন করার জন্য মোবাইল ফোনের মেসেজ অপশনে যান। সেখানে টাইপ করুন ঃ ফমযং ৎবম ষসঢ়থফধঃব সড়নরষবথহড়. হধসব। উদাহরণঃ ফমযং ৎবম ০৪০২২০১৭ ০১৭১৩০১৮৫৪৫ সধৎলরহধ। ষসঢ় হলো খধংঃ সবহংঃৎঁধষ ঢ়বৎরড়ফ (শেষ মাসিকের তারিখ)। লিখতে হবে এভাবে ০৪০২২০১৭ (অর্থাৎ ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭-প্রথমে তারিখ; এরপর মাস; এরপর বছর)। মোবাইল নম্বর হলো, আপনি যে মোবাইল নম্বরে পরামর্শ পেতে চান। নাম হলো প্রসূতি মায়ের নাম। টাইপ করা হয়ে গেলে মেসেজ পাঠাতে হবে ১৬৩৪৫ নম্বরে। ফিরতে মেসেজে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য ধন্যবাদ জানানো হবে। প্রসূতির সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ জানানো হবে এবং সন্তানের জন্ম হওয়া পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পরামর্শ প্রেরণ করা হবে। এসব পরামর্শ প্রসূতি অনুসরণ করলে নিরাপদে সন্তান জন্ম দিতে পারবেন এবং নবজাতকও সুস্থ থাকবে।
×