ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শত কোটি টাকার সম্পত্তি বেহাত

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

শত কোটি টাকার সম্পত্তি বেহাত

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ২৬ ফেব্রুয়ারি ॥ সড়ক ও জনপথ বিভাগের মালিকানাধীন বেড়ায় ১০০ কোটি টাকা বেশি দামের পাঁচ একর স্ট্যাক ইয়ার্ডসহ অন্যান্য ভূসম্পত্তি বেহাত হয়ে গেছে। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের কিছু অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে ওই ভূসম্পত্তি অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে। সেখানে তারা নানা ধরনের ঘর নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছে। চক্রটি স্ট্যাক ইয়ার্ডের দুই একর পুকুরটি বালু দিয়ে ভরাট করেছে। তারা স্ট্যাক ইয়ার্ডের ভেতরে হাট বসিয়ে খাজনা আদায়ের হাজার হাজার টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পাকিস্তান আমলে দেশের পূর্বাঞ্চলের সড়কপথে যোগাযোগ এবং সীমান্ত এলাকার সামরিক গুরুত্ব বিবেচনা করে ১৯৬০ সালে বেড়ার নগরবাড়ী থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত সড়কের নির্মাণকাজ শুরু করা হয়। ১৯৬২ সালে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সড়ক নির্মাণকাজের সুবিধার জন্য নগরবাড়ী-দিনাজপুর সড়কের কোল ঘেঁষে বেড়া সিএ্যান্ডবি বাসস্ট্যান্ডের উত্তর-পূর্বপাশে পাঁচ একর জমি হুকুম দখল করে সেকশনাল অফিস স্থাপন করে। পরে সেকশনাল অফিসটি কাশিনাথপুরে স্থানান্তর করা হয়। এরপর থেকে পরিত্যক্ত সেকশনাল অফিসটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান স্ট্যাক ইয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছিল। মহাসড়কের পাশে ১০০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের এই ভূসম্পত্তির ওপর নজর পরে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির। তারা পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের কিছু অসৎ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে হাত করে ২০১০ সালে স্ট্যাক ইয়ার্ডের স্থাপনাসহ পাঁচ একর ভূসম্পত্তি দখল করে নেয়। এছাড়া নগরবাড়ীÑবগুড়া-দিনাজপুর মহাসড়কের বেড়া ইছামতি ব্রিজের পূর্বপাশে সিএ্যান্ডবি চতুর বাজারের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রায় সাত কোটি টাকা মূল্যের এক বিঘার বেশি জমি ঠিকাদার দখলে করে পাঁকা ঘর তুলে দোকান ভাড়া দিয়েছে। এছাড়া বেড়া পৌর এলাকার জোড়দাহ গ্রামের মরহুম আবুল কাশেম জীবিত থাকাকালে সিএ্যান্ডবি বাসস্ট্যান্ডের উত্তর পাশে অবস্থিত সওজের পাঁচ ফুট জায়গা দখল করে ৪তলা নর্থ বেঙ্গল আবাসিক হোটেল নির্মাণ করেন। তার চার ছেলে রঞ্জু, রফিকুল, শফিকুল ও মনোয়ার। সম্প্রতি রফিকুল সাঁথিয়া উপজেলার করমজা গ্রামের মৃত আউব আলীর ছেলে আবদুল কাদের এবং একই গ্রামের মৃত কোবাদ মল্লিকের ছেলে রন্টু মল্লিকের কাছে সওজের এক শতাংশ জায়গা ২৪ লাখ টাকায় বিক্রি করেছে। সেই জায়গায় আবদুল কাদের ও রন্টু বিল্ডিং নির্মাণ শুরু করলে পাবনা সওজ বিভাগ থেকে নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে আনোয়ার হোসেন রঞ্জুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ সম্পত্তি তাদের পৈত্রিক বলে দাবি করেন। পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের দাবি, ১৯৬০ সাল সড়ক নির্মাণকালে জমি হুকুম দখল করে মালিকদের ক্ষতিপূরণের টাকা দেয়া হয়েছে। পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ হুকুম দখলকৃত জমি খারিজ না করায় আরএস রেকর্ড জমির সাবেক মালিক বা তাদের ওয়ারিশদের নামে হয়েছে। তার অর্থ এই নয় যে, ওই জমির মালিক তারা। জমির প্রকৃত মালিকানা সড়ক ও জনপথ বিভাগের। জানা যায়, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি ২০১০ সালের ১০ ডিসেম্বর পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের বেড়া স্ট্যাক ইয়ার্ডটি দখল করে নেয়। এরপর তারা স্ট্যাক ইয়ার্ডের একটি সেমি পাঁকা ভবন ও বাউন্ডারি ওয়াল ভেঙ্গে ফেলে এবং বড় বড় বেশ কয়েকটি মেহগনি গাছ কেটে নিয়ে গেছে। স্ট্যাক ইয়ার্ডের ভেতরে নির্মাণ করা হয়েছে ইউটাইপের প্রশস্ত হেরিংবন্ড সড়ক। বেড়া পৌরসভা এই সড়কটি নির্মাণ করেছে। গত বছর ষ্ট্যাক ইয়ার্ডের ভেতরে অবস্থিত দুই একর আয়তনের একটি পুকুর বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে। সেখানে দোকানঘর নির্মাণ করে ভাড়া দেয়া হবে। বেড়া পৌরসভার প্রকৌশলী খন্দকার শাহ মোঃ ফিরোজুল আলম সড়ক নির্মাণের কথা স্বীকার করেন। বেড়া সিএ্যান্ডবি চতুরবাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি হাট সম্প্রসারণের কথা বলে সড়ক ও জনপথ বিভাগের জায়গা অবৈধভাবে দখল করে বিশাল বিশাল ছাপড়া ঘর তৈরি করে অর্ধশতাধিক পেঁয়াজের আড়ত বসিয়েছে। বেশকিছু হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ফার্নিচার কারখানা, ওয়েলডিং কারখানা, গোখামার, মাছ বাজার, মুদি দোকান ও ৩০টির বেশি টং দোকান ভাড়া দেয়া হয়েছে। পাবনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মোফাজ্জল হায়দারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সওজের বেড়া ষ্ট্যাক ইয়ার্ডের জায়গা কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেয়া হয়নি। বেড়া পৌর পরিষদ অবৈধভাবে ষ্ট্যাক ইয়ার্ডের জায়গা দখল করে কাজগুলো করেছে। অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে প্রশাসনিক সহায়তার অনুরোধ জানিয়ে অতিসম্প্রতি পাবনা জেলা প্রশাসক বরাবর চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত জেলা প্রশাসকের দফতর থেকে সহযোগিতার কোন আশ্বাস পাওয়া যায়নি।
×