ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আওয়ামী লীগ সব এলাকায় সমান উন্নয়ন করে;###;মানুষের স্রোত উপচে পড়ে সান্তাহার স্টেডিয়ামে

বগুড়া নৌকার ॥ জনসভায় প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বগুড়া নৌকার ॥ জনসভায় প্রধানমন্ত্রী

সমুদ্র হক/মাহমুদুল আলম নয়ন/হারেজুজ্জামান, সান্তাহার থেকে ॥ লাখো মানুষের স্রোত উপচে পৌঁছেছে বগুড়ার সান্তাহার স্টেডিয়ামে। পরিণত হয় মহাসমুদ্রে। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বললেন আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন দেশের মানুষ অনেক কিছু পায়। খাদ্যাভাব থাকে না, মানুষের রোজগার বাড়ে প্রত্যেক মানুষের উন্নয়ন হয়। দেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যায়। আর বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলে শুধু লুটপাট সন্ত্রাস আর মানুষ হত্যা। মানুষের উন্নয়নের কথা ভুলে গিয়ে নিজেদের উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। আগামী ২০১৯ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করলে তিনি দেশের ও মানুষের উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাবেন। তিনি আগামী নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দিয়ে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান। বগুড়ার মানুষ নৌকাতেই ভোট দেবেনÑ এ দৃঢ় বিশ্বাস তিনি রাখেন। তিনি বলেন বিএনপি আন্দোলনের নামে মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। কোরআন শরিফ পুড়িয়েছে। মানুষ হত্যা করেছে। তারা কখনওই মানুষের মঙ্গল চায় না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম। আওয়ামী লীগ ইসলামের নামে সন্ত্রাস জঙ্গীবাদ সমর্থন করে না। ইসলামের নামে অরাজকতা ও সন্ত্রাস যাতে না হয় সে জন্য প্রতিটি জেলা, উপজেলায় মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হবে। তিনি শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষা গ্রহণ করে দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী রবিবার বিকেলে বগুড়ার সান্তাহার স্টেডিয়াম মাঠে জনসভায় ভাষণ দেন। এর আগে তিনি সান্তাহারে দেশের প্রথম অত্যাধুনিক বহুতল খাদ্যগুদামের উদ্বোধন করেন। তিনি বলেন এটা অত্যাধুনিক সাইলো। এ অঞ্চলের খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। কৃষক যাতে নিজেদের ফসলের ন্যায্য মূল্য পায় সে জন্য এই সাইলোতে দুই থেকে তিন বছর খাদ্য মজুদ রাখা যাবে। দক্ষিণ এশিয়ায় এত অত্যাধুনিক সাইলো আর নেই। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ শোনার জন্য সকাল থেকেই মানুষের ঢল নামে। বগুড়া ছাড়াও নাটোর, নওগাঁ, জয়পুরহাট, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ও সর্বস্তরের মানুষ জনসভায় যোগ দেয়। বগুড়া সদরের এরুলিয়া থেকে সান্তাহার পর্যন্ত অন্তত ৩০০ তোরণ নির্মিত হয়। সান্তাহার রেলওয়ে জংশনের প্রতিটি সড়কে মানুষের ঢল নামে। সান্তাহার ছোট শহরের সকল দোকানপাট বন্ধ থাকে। সব সড়কে শুধু মানুষের ঢল। সান্তাহারে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় প্রথম শেখ হাসিনা ভাষণ দিলেন। দুপুর ১২টায় তিনি হেলিকপ্টারযোগে সান্তাহারে অবতরণ করেন। এরপর নবনির্মিত সাইলোতে গিয়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামসহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ। এই সাইলোতে যে ১০০টি সোলার প্যানেল স্থাপিত হয়েছে তা দিয়ে ৩৬০ কিলোওয়াট বিদ্যুত উৎপাদিত হবে। খাদ্য সংরক্ষণের পর যে বিদ্যুত বেঁচে যাবে তা যোগ হবে পাওয়ার গ্রিডে। উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী সাইলো রেস্ট হাউসে বিশ্রাম ও জোহরের নামাজ আদায়ের পর ২টা ৫০ মিনিটে তিনি স্টেডিয়ামে সভাস্থলে পৌঁছেন। এরপর তিনি ডিজিটাল বটম চেপে নবনির্মিত ১০টি প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ও বগুড়া প্রেসক্লাবসহ ৭টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করেন। এসব প্রকল্পে ব্যয় করা হয়েছে ৩১৭ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী বলেন প্রতিটি উপজেলার সঙ্গে প্রতিটি ইউনিয়নের সড়ক পাকা করা হবে। যাতে এলাকার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও সহজ হয়। প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নের সার্বিক ব্যবস্থা ডিজিটাল পদ্ধতির আওতায় আনা হবে। আদমদীঘি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আনসার আলী মৃধার সভাপতিত্বে ও রাগেবুল আহসান রিপুর পরিচালনায় এই জনসভায় বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আব্দুর রহমান, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এসএম কামাল হোসেন, কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি সামসুল আলম রেজা, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ মাহমুদ আল স্বপন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ, খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, বগুড়া-১ আসনের সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজনু, আওয়ামী লীগ নেতা শামসুর রহমান শরিফ, টি জামান নিকেতা, নওগাঁ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মালেক, সাধারণ সম্পাদক সাধন মজুমদার প্রমুখ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশের উন্নয়নে কাজ শুরু করে। জাতির পিতা দেশের মানুষের সুখে হাসি ফোটাতে চেয়েছিলেন। গড়তে চেয়েছিলেন সুখী সমৃদ্ধ একটি দেশ। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করতে কাজ করে যাচ্ছে। প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর ফের কুচক্রী মহল বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে উন্নয়নের ধারা রুদ্ধ করে দেয়। দেশের মানুষের স্বাস্থ্য সেবার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করে কমিউিনিটি ক্লিনিক। যাতে গ্রামের মানুষ সেবা পায়। বিএনপি ক্ষমতায় এসেই তা বন্ধ করে দেয়। ২ হাজার ৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে পুনরায় চালু করে কমিউনিটি ক্লিনিক। গ্রামের সাধারণ মানুষ এই কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে বিনা পয়সার ৩০ ধরনের ওষুধ পায়। শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। প্রতিবছর জানুয়ারি মানে বিনা পয়সার পাঠ্যপুস্তক সরবরাহ করা হয়। যাতে বর্তমান প্রজন্ম শিক্ষিত হয়ে ওঠে। তিনি শিক্ষাথৃীদের সুশিক্ষা গ্রহণ করে দেশের মুখ উজ্জ্বল করার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বিএনপি শাসনামলের মানুষের দুঃসহ জীবনের চিত্র তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন বিএনপি সরকারের সময় গোপালগঞ্জের কোন উন্নয়ন করেনি। আওয়ামী লীগ সরকার কোন অঞ্চল বিশেষের উন্নয়ন বিশ্বাস করে না। প্রতিটি এলাকার সুষম উন্নয়ন করা হচ্ছে। বগুড়ার উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে বলেন ‘আজ বগুড়ার রাস্তাঘাট আশ্রয়ণ প্রকল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসন কেন্দ্রসহ সান্তাহারে দেশের প্রথম সাইলো উপহার দেয়া হলো। এ অঞ্চলের কৃষকের আর কোন অভাব থাকবে না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন প্রতিটি এলাকায় স্কুলের ছেলেমেয়েদের শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিয়ে উন্নতমানের স্কুল নির্মাণ করা হবে। কেউ যেন বেকার না থাকে সেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকসহ নানা কর্মকা- হাতে নেয়া হয়েছে। এ বছর জানুয়ারি মাসে ৩৬ কোটি ২৩ লাখ বই বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। যা পেয়েছে ৪ কোটি ২৬ লাখ শিক্ষার্থী। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা ও প্রতিবন্ধী ভাতা দেয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা এই দেশের গর্ব। তারা যাতে ভালভাবে থাকে সে জন্য সকল ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। দেশের যে এলাকায় এখন মানুষের কিছুটা দরিদ্রতা আছে সেখানে ১০ টাকা কেজি দরে ৫০ লাখ মানুষের মধ্যে চাল বিতরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন আওয়ামী লীগ সরকার জনগণের জন্য কাজ করে। ফসলের বহুমুখীকরণের বিষয়ে তিনি বলেন আগে শীতের সবজি শুধু শীতেও পাওয়া যেত বর্তমানে শীত-গ্রীষ্ম বলে কোন কথা নেই। সকল মৌসুমেই সকল সবজি ও ফসল পাওয়া যায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন বিএনপি ক্ষমতায় এলে দুর্নীতি সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদে দেশ ছেয়ে যায়। বিএনপির দুর্নীতির প্রমাণ বিদেশেও প্রকাশিত হয়েছে। বিএনপি যে টাকা পাচার করেছে তা ফেরত আনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী দেশকে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদমুক্ত রাখতে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে খাদ্য রফতানি শুরু করেছে। কৃষকের ঘরে এখন খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকে। দেশকে উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে নিতে আওয়ামী লীগ দেশে মোবাইল ফোন এনেছে যে মোবাইল ফোন এখন দেশের প্রতিটি মানুষ ব্যবহার করে। দেশের ৮০ শতাংশ মানুষ বিদ্যুত ব্যবহার করে। ৪৫ লাখ সোলার প্যানেল বসানো হয়েছে। দেশের প্রতিটি জেলায় একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। বিএনপি শুধু জানে অত্যাচার করতে আর দুর্নীতি করতে।
×