ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পটৌডি তো কখনও স্লেজ করেননি, স্মারক বক্তৃতায় বলে দিলেন বেদী

প্রকাশিত: ১৯:২১, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

পটৌডি তো কখনও স্লেজ করেননি, স্মারক বক্তৃতায় বলে দিলেন বেদী

অনলাইন ডেস্ক ॥শত চেষ্টা করেও মনসুর আলি খান পটৌডিকে দিয়ে বিপক্ষকে স্লেজ করাতে পারেননি তিনি। ক্রিকেটের মধ্যে দুর্নীতি ঢুকে যাওয়ায় লজ্জা লাগে তাঁর। আম্পায়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও হতে পারেননি। শনিবার বিকেলে এমনই নানা অজানা তথ্য ফাঁস করে দিয়ে গেলেন তিনি। কখনও পটৌডির সঙ্গে কাটানো সেই সব সোনার দিনগুলি। কখনও আবার লোঢার সঙ্গে ক্রিকেটের সংস্কার নিয়ে আলোচনা। ক্রিকেট মাঠের মতো বক্তা হিসেবেও যে তিনি সমান আক্রমণাত্মক। তিনি— ভারতীয় ক্রিকেটে সেরা বাঁ হাতি স্পিনার বিষাণ সিংহ বেদী। ‘দ্য টেলিগ্রাফ’ ও বেঙ্গল ক্লাব অনুষ্ঠিত মনসুর আলি খান পটৌডি স্মারক বক্তৃতা তিনি শুরু করলেন মহারাজ রঞ্জিত সিংহের প্রসঙ্গ তুলে। ‘‘মহারাজা রঞ্জিত সিংহও একটা চোখে দেখতে পেতেন না। শিক্ষাগত যোগ্যতা কিছু ছিল না। শুধু সহি (সঠিক) শব্দটা লিখে দিতেন।’’ ভারত-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজে স্লেজিং নিয়ে বিস্তর জলঘোলা চলল। বেদী যদিও এ দিন বলে গেলেন, টাইগার পটৌডির মধ্যে আগ্রাসী মনোভাব আনার অনেক চেষ্টা করেও তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। ‘‘এখন তো স্লেজিং শব্দটা ক্রিকেটে ভীষণ ভাবেই ঢুকে পড়েছে। কিন্তু টাইগার পটৌডিকে কখনও স্লেজ করতে দেখিনি। কখনও দেখিনি কাউকে খারাপ কথা বলতে।’’ নিজের ‘অলস’ অধিনায়কের ওপর মাঝে মাঝে রাগও হতো বেদীর। ‘‘বারবার বলতাম, আরে কিছু বলো। এখন সুযোগ আছে। প্রতিবাদ করো। তোমার কথার ওজন থাকবে অনেক।’’ উত্তরে বেদী অবশ্য একটা জবাবই পেয়েছেন। ‘‘ছেড়ে দাও। বাদ দাও।’’ টাইগার পটৌডি নবাব ছিলেন। কিন্তু বেদীর কাছে তিনি যেন সেই মাটির মানুষ। যাঁর চালচলন বা ব্যবহারে নবাবোচিত কোনও ব্যাপার ছিল না। ‘‘টাইগার পটৌডি নবাব হয়েও হাবভাবে সাধারণ একজন মানুষের মতো ছিল। ম্যাচ হওয়ার পর বিপক্ষের সঙ্গে আড্ডা দিত। নবাব হয়েও নবাবের মতো হাবভাব ছিল না পটৌডির।’’ তাঁর প্রয়াত অধিনায়কের প্রসঙ্গ থেকেই বেদী চলে গেলেন লোঢার বিষয়ে। বিচারপতি আর এম লোঢাকে তিনি বলেছিলেন, ‘‘দেখুন, আপনি আইনের লোক। আমি ক্রিকেটের। আমার লজ্জা হচ্ছে দেখে যে, আপনাকে ঢুকতে হচ্ছে ক্রিকেটে।’’ লোঢার প্রসঙ্গে যখন তিনি আক্রমণাত্মক আবার নিজের ব্যর্থ আম্পায়ারিংয়ের স্বপ্নটার কথা মনে পড়লে আজও হাসি পায় তাঁর। ‘‘আমি বেঙ্গালুরুতে ইন্টারভিউ দিতে গিয়েছিলাম। তিনটে আম্পায়ার ছিল। একজন জিজ্ঞেস করল তুমি কি কখনও ব্যাটে লাগলে এলবিডব্লিউ দেবে? আমি বললাম, আপনি তো দেন। আমার দৌড় ওখানেই শেষ।’’ লোঢাকে ধন্যবাদও দিচ্ছেন বেদী। তাঁর মতে, লোঢা না এলে সবাই যেন প্রশাসকদের চেয়ারটাকে নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি করে ফেলেছিলেন। পাকিস্তানে গিয়ে বাউন্সার বৃষ্টির সামনে পড়ার কাহিনি শোনালেন। অভিযোগ জানিয়ে বেদী বলেছিলেন, ‘‘আপনারা খেলছেন কোথায়? আমি ব্যাটিং অর্ডার পাল্টাব না আপনারা ছক পাল্টাবেন?’’ পাক কর্তার উত্তর, ‘‘আপনারা বিশ্বনাথের জায়গা লম্বা ক্রিকেটার নামিয়ে দিন না।’’ আইপিএল নিয়ে এর আগেও বহু বার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। শনিবার সন্ধ্যাতেও সাফ বললেন, ‘‘আমি বুঝি না কী করে কোনও ক্রিকেটার দেশের হয়ে খেলার থেকে বেশি টাকা পায় ক্লাবের হয়ে খেলে। কত জায়গায় দেখি আইপিএল কী ভাবে ক্রিকেটারদের দারিদ্র থেকে ধনী করে তোলে। কিন্তু কেউ একবারও বলে না, খারাপ খেললে কী ভাবে ধনী থেকে আবার দারিদ্রতায় ফিরে আসে সেই ক্রিকেটার। দক্ষিণ আফ্রিকায় যে আইপিএল হল সেটায় কত টাকা খরচ হয়েছে কেউ জানে না। কোনও হিসেব নেই।’’ বেদীর বক্তৃতা শুনে অনুষ্ঠানে উপস্থিত পটৌডির স্ত্রী শর্মিলা ঠাকুর বললেন, ‘‘বেদী সাহেবের মন্তব্য খুব আক্রমণাত্মক ছিল। প্রতিটা সমস্যা বা ঘটনা পরিষ্কার ভাবে তুলে ধরলেন।’’ বেদীর দাবি, চাকিং থেকে বডিলাইন। টসে ক্রিকেটারদের ছাড়া তৃতীয় ব্যক্তির উপস্থিতি সব কিছুই ক্রিকেটারদের হাত ধরেই হয়েছে। তিনি টিভি চালালেও তো রাজনৈতিক কোনও ঘটনা ছাড়া কিছু দেখেন না। ক্রীড়া অনুষ্ঠানকে গুরুত্ব না দেওয়ায় তাঁর খারাপ লাগে। বিসিসিআইয়ের পাশে কন্ট্রোল শব্দটা নিয়েও আপত্তি আছে। ‘‘সারা বিশ্বের কোনও ক্রিকেট বোর্ডে কন্ট্রোল শব্দটা নেই। আমাদের এখানে কেন থাকবে।’’ শেষটুকুও তো সেই নিজের চেনা ভঙ্গিতেই করলেন বেদী। ‘‘প্রতিটা জায়গায় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার আছে। কিন্তু অলিম্পিয়ান নেই।’’ সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা
×