ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ॥ ঘুরে এলাম সিলেটের বনে বনে

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ॥ ঘুরে এলাম সিলেটের বনে বনে

চায়ের দেশ সিলেট, পাহাড় ও ঝর্ণার দেশ সিলেট, তার চেয়ে বড় পরচিয় হলো সিলেট জীববৈচিত্র্যের এক সমৃদ্ধ বিভাগ। সিলেটের প্রকৃতি যেমন বৈচিত্র্যময় আছে পাহাড়, ঝর্ণা, নদী, ছরি, হাওড়, বাঁওড়, বিল ও বন তেমনি সিলেট বন্যপ্রাণী পাখি, প্রজাপতি, মাকড়সা ও মাছের জন্য বৈচিত্র্যময় সমাহার। সিলেট বিভাগে আছে সাতটি সংরক্ষিত বন ও বিল। এর মধ্যে লাওয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, বাইক্কাবিল, মাধবকুন্ড ইকোপার্ক ও রেমা-ক্যালেঙ্গা ওয়াইল্ড লাইফ স্যানচুয়ারি অন্যতম। আর তাই জাবির প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অনার্স তৃতীয় বর্ষের (৪৩তম আবর্তন) ‘প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য’ বিষয়ক প্রতিবেদনের (শিক্ষা সফর ২০১৭) জন্য বৃহত্তর সিলেট বিভাগকে বেছে নেয়া হয়। আমাদের সফর শুরু“হয় পাঁচ তারিখ ভোর চারটায়। যথাসময়ে বাস উপস্থিত থাকে ছাত্রদের বঙ্গবন্ধু হলের সামনে। আমাদের শিক্ষক হাসান স্যার তিনিও বাসে উঠে আসন নেন আমাদের সঙ্গে। এরপর বাস চলে যায় ছাত্রীদের প্রীতিলতা হলের সামনে। সকাল সাতটায় বাস যাত্রা শুরু করে। সকাল সাড়ে দশটায় আমরা পৌঁছে গেলাম ‘সাতছরি জাতীয় উদ্যানে।’ এরপর বাস থেকে সকলে নেমে গোল হয়ে দাঁড়ালাম শিক্ষকদের চারদিকে প্রাথমিক আলোচনা কিভাবে বন ঘুরতে হয় বন্যপ্রাণিকে ডিস্টার্ব না করে। বনের ভিতর তই হাঁটি ততই দেখা মেলে নানা জাতের নানা প্রজাতির প্রাণি। ‘কমন গার্ডেন লিজার্ড’ যাকে আমরা বাংলায় বলি রক্তচোষা বা গিরগিটি, এর নাম রক্তচোষা হলেও এ মোটেও রক্ত পান করে না, তবে এ সরীসৃপটি যে আসলেই এর গায়ের রং পরিবর্তন করতে পারে তা বনে গিয়ে না দেখলে বিশ্বাসই হবে না। বনের আঁকা বাঁকা পথে হারিয়ে যাওয়া আর বানরের বাদরামি নিয়ে যায় অন্য এক জগতে, আর মাঝে মাঝে বনের ছরির ভেতর হেঁটে যাওয়ার সময় বালিতে পা ঢুকে যাওয়া কিংবা বনের ছোট ছোট টিলা অতিক্রম করার সময় সত্যই মনে হয় এ এক অন্য জগত, তারুণ্যের উদ্দীপনা, আর যৌবনের শক্তি। বনের মধ্যে হাজারো পাখির কলরব আর নানা রঙের প্রজাপতির ওড়াউড়ি মন হারিয়ে যায় এক অন্য স্বর্গে। এভাবে দুঘণ্টা ঘুরার পর আমরা আবার বাসে উঠে সোজা চলে যাই মৌলভীবাজারের হোটেল স্কাই পার্কে। হোটেলে মাত্র দেড় ঘণ্টার জন্য বিরতি খাওয়া-দাওয়া আর গোসল সেরেই আবার যাত্রা শুরু“‘বাংলাদেশ চা গবেষণা প্রতিষ্ঠানে’ সেখানে নানা প্রজাতির চা বাগানের পরিদর্শন। কোন চায়ের কি গুণাগুণ, কোন চায়ে কি ধরনের পোকার আক্রমণ ঘটে এবং কি কি কীটনাশক ব্যবহার করে এর প্রতিকার করা যায় চা সম্পর্কে নানা পাঠ ও কোন চা গাছ কোন দেশ থেকে আনা হয়েছে, কোন মাটি চা বাগানের জন্য উপযোগী উহ আর ভাল লাগছে এ যেন চা নিয়ে একদিনে চা গবেষক হয়ে গেলাম। আর চা ইনস্টিটিউটের কর্মকর্তাও থেমে যাওয়ার লোক নয়। তিনিও শুনিয়ে গেলেন তার চা সম্পর্কে জ্ঞানের গভীরতা। তার কথা শুনতে শুনতে বিকেলের সূর্যটা ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল চা বাগানের পাহাড়ের টিলার ওপর। আমাদের ও শেষ হলো চায়ের পাঠ নেয়া। এবার আমাদের অভিযান ‘লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে’ সেখানে রাতের জোছনায় হুতুম পেঁচার ডাক শোনা আর ভাগ্য বেশি ভাল হলে ‘লজ্জাবতী বানরের’ দেখা পাওয়া । রাতে বনের ভিতর এক ঘণ্টার হাঁটাহাঁটি জোছনার চাদর মুড়িয়ে শীতের কুয়াশা জড়িয়ে লাউয়াছড়া বন ধারণ করেছে এক নৈসর্গিক রূপের দেবী। আর মাঝে মাঝে বনের গভীর থেকে নানা পাখির ডাক ও বিভিন্ন কীটপতঙ্গের ঝিম ঝিম গান আমাদের নিয়ে গেল এক অন্য জগতে। এরপর রাতে হোটেলে ফেরা কোনরকম রাতের খাবার শেষ করে শুরু“ হলো সারাদিনের বাদরের বাদরামির অনুশীলন। এভাবে শেষ হলো প্রথম দিন। তারপর দ্বিতীয় দিনের আমাদের মিশন হলো লাউয়াছড়া যাত্রা শুরু রলাম লাউয়াছড়ার উদ্দেশে। বনের মধ্যে যেত যেতে দেখা মিলল বন মোরগের আর নানা প্রকারের সকালবেলার পাখির। লাউয়াছড়া বনে আমরা দেখা পেলাম আরও একটি হনুমানের। তার নাম হচ্ছে ‘চশমা পড়া হনুমান।’ এ হনুমানটির দু’চোখের চারদিকে সাদা গোল দাগ আছে যা দূর থেকে দেখলে মনে হয় চশমা পরে আছে আর তাই তার নাম দেয়া হয়েছে চশমা পরা হনুমান। এভাবে আমরা তিনদিন লাউয়াছড়া বন, মাধকু-ু ইকো পার্ক, রেমা-ক্যালেঙ্গা বন ও বাইক্কাবিল ঘুরে নিয়েছি প্রকৃতির পাঠ। আদীব মুমিন আরিফ ও জান্নাতুল মুমিনা নিশাত
×