ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সেমিতে উঠে মান রাখল চট্টগ্রাম আবাহনী

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সেমিতে উঠে মান রাখল চট্টগ্রাম আবাহনী

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ নির্ধারিত হয়ে গেছে ‘শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্লাব কাপ’ ফুটবল টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালের লাইনআপ। চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রথম সেমিতে মখোমুখি হবে ‘এ’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টস ক্লাব বনাম ‘বি’ গ্রুপের রানার্সআপ নেপালের মানাং মার্সিয়াংদি ক্লাব। পরদিন দ্বিতীয় সেমিতে মুখোমুখি হবে ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড বনাম দক্ষিণ কোরিয়ার পোচেয়ন সিটিজেন এফসি। দুটি খেলাই শুরু হবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। লীগ হোক বা টুর্নামেন্ট, ফিক্সশ্চার পরিবর্তন করার বদভ্যাস ও ‘বিশ^রেকর্ড’টা এতদিন শুধু বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনেরই (বাফুফে) ছিল। এবার তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে শেখ কামাল ফুটবলের আয়োজক চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেডও। এই আসর চলাকালেই তারা দুই দফা সূচী বদল করেছে। টুর্নামেন্ট শুরুর দিনই একবার সূচীতে পরিবর্তন আনা হয়। গ্রুপ পর্ব শেষ হতে না হতেই আবারও সূচী বদলের ধাক্কা। আর বাফুফের পক্ষ থেকে বিষয়টি সাংবাদিকদের ই-মেইল করে জানান হয় শুক্রবার রাত ১০টার পর। প্রচারের অভাবে এবং আয়োজকদের দুরদর্শিতার অভাবে এমনিতেই এই টুর্নামেন্ট দেখতে দর্শকরা সেভাবে মাঠে আসছেন না। বলতে গেলে টুর্নামেন্ট সুপার ফ্লপ। তার ওপর দফায় দফায় এমন সূচী পরিবর্তনে বিরক্ত ও বিভ্রান্ত হচ্ছেন গুটিকয়েক সাধারণ দর্শক। যদিও আগে ঠিক ছিল টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল দুটি হবে যথাক্রমে ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়ারি। ফাইনাল হবার কথা ছিল ২ মার্চ। কিন্তু এখন আর তা হচ্ছে না। নতুন সূচী অনুযায়ী প্রথম সেমিফাইনাল আগামী ২৭ ফেব্রুয়ারি আর দ্বিতীয় সেমি ২৮ ফেব্রুয়ারি। ফাইনাল ৩ মার্চ। এর আগে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আসরের উদ্বোধনী দিনের প্রথম ম্যাচেই হুট করেই আয়োজকরা সূচী পাল্টে ‘পয়লা তেলেসমাতি’ দেখিয়েছিলেন। আলগা-পোচেয়ন ম্যাচটি হওয়ার কথা ছিল সন্ধ্যা ৭টায়, অর্থাৎ এটা ছিল দ্বিতীয় ম্যাচ। আয়োজক কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করেই সিডিউল পাল্টে ম্যাচটি শুরুতে বিকেল ৪টায় নিয়ে আসেন। ফলে বিকেল ৪টায় ঢাকা আবাহনী লিমিটেড বনাম মালদ্বীপ টিসি স্পোর্টস ক্লাবের খেলাটি শুরু হয় সন্ধ্যা ৭টায়। কারণ হিসেবে জানা যায়, আবাহনীর খেলা দেখতে স্থানীয় দর্শক আসবে অফিস বা স্কুল-কলেজ ছুটির পর, এমনটা ভেবেই সময় পেছানো। প্রশ্ন হচ্ছে, তাই যদি হয়, তাহলে বিষয়টা খেলা শুরুর অন্তত একদিন আগে কেন জানান হলো না, কেনই বা খেলা শুরুর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে নির্ধারণ করা হলো? ছয় জাতির এই আসরে অংশ নেয় মোট আটটি ক্লাব, যাদের মধ্যে পাঁচটি বিদেশী এবং তিনটি বাংলাদেশী ক্লাব। ‘এ’ গ্রুপে ছিল ঢাকা আবাহনী লিমিটেড, মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টস ক্লাব, দক্ষিণ কোরিয়ার ফুটবল ক্লাব পোয়েচন এবং কিরগিজস্তানের ফুটবল ক্লাব আলগা বিশকেক। ‘বি’ গ্রুপে ছিল স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড, আফগানিস্তানের শাহিন আসমায়ি, ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড এবং নেপালের মানাং মারসিয়াংদি। শক্তির বিচারে ঢাকা আবাহনীর গ্রুপটা কঠিনÑ এমনটাই বলেছিলেন অনেক ফুটবলবোদ্ধারা। তাদের আশঙ্কাই সত্যি হয়। কেননা গ্রুপে তৃতীয় হয়ে সেমিতে যেতে পারেনি আবাহনী। এই টুর্নামেন্টে প্রতিটি দলই পাঁচ বিদেশী খেলোয়াড় দলে রেখে মাঠে সর্বোচ্চ চারজনকে খেলাচ্ছে। আফগানিস্তানের শাহিন আসমায়ি এফসির আমিরুদ্দিন শরিফি চলমান আসরে ব্যক্তিগত ৪ গোল করে এগিয়ে আছেন। যদিও সেমিতে উঠতে না পারায় তার গোলসংখ্যা অতিক্রম করার সুযোগ পাবেন সেমিফাইনালিস্ট চার দলের অন্য ফুটবলাররা। এখন দেখা যাক, সেমিফাইনালিস্ট দলগুলো কিভাবে শেষ চারে নাম লেখালো। * টিসি স্পোর্টস ক্লাব (মালদ্বীপ) ॥ ‘এ’ গ্রুপে অপরাজিত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয় টিসি স্পোর্টস ক্লাব। ২ জয় ও ১ ড্রয়ে তাদের সংগ্রহ ৭ পয়েন্ট। সবচেয়ে বেশি গোলও করেছে (৫টি, যুগ্মভাবে)। প্রথম ম্যাচে তারা ঢাকা আবাহনীকে ১-০ গোলে হারায়। দ্বিতীয় ম্যাচে ২-১ গোলে আলগাকে হারিয়ে সেমি নিশ্চিত করে। তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে পোচেয়নের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়া নিশ্চিত করে। * মানাং মারসিয়াংদি ক্লাব (নেপাল) ॥ ‘বি’ গ্রুপে দলটি তাদের প্রথম ম্যাচে ঢাকা মোহামেডানকে ২-০ গোলে হারিয়ে শুভসূচনা করে। দ্বিতীয় ম্যাচে অবশ্য শাহিন আসমায়ির কাছে ১-৩ গোলে হেরে হোঁচট খেলেও তৃতীয় ম্যাচে স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনীর সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করে গ্রুপ রানার্সআপ হওয়া নিশ্চিত করে। ১ জয়, ১ ড্র ও ১ হারে তাদের সংগ্রহ ৪ পয়েন্ট। টিসি স্পোর্টসের মতো তারাও গ্রুপে সর্বাধিক ৫ গোল করে। তবে সেমিফাইনালিস্ট দলগুলোর মধ্যে তারা সবচেয়ে বেশি ৫ গোলও যেমন হজম করে, তেমনি তারাই একমাত্র দল, যারা গ্রুপ পর্বে হারের স্বাদ নিয়ে সেমিফাইনাল খেলতে যাচ্ছে। * চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেড (বাংলাদেশ) ॥ টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন তারাই। এ আসরে তিন দেশীয় ক্লাবের মধ্যে দুটিই ঝরে গেছে (ঢাকা আবাহনী ও ঢাকা মোহামেডান)। কিন্তু টিকে আছে একটি। বন্দরনগরীর এই দলটি। ফলে সেমিতে উঠে তারা বাংলাদেশের মান ধরে রেখেছে এখনও। তবে দুটি অগৌরবের পরিসংখ্যান আছে তাদের। শেষ চারের দলের মধ্যে তারা সবচেয়ে বেশি ২টি ম্যাচে ড্র করেছে এবং সবচেয়ে কম গোল ৩ গোল করেছে (অংশীদার-কোরিয়ার পোচেয়ন)। প্রথম গ্রুপ ম্যাচে আসমায়িকে ৩-১ গোলে হারায়। দ্বিতীয় ম্যাচে ঢাকা মোহামেডানের সঙ্গে ০-০ এবং তৃতীয় ম্যাচে মানাংয়ের সঙ্গে ২-২ গোলে ড্র করে ৫ পয়েন্ট নিয়ে ‘বি’ গ্রুপের অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় ও সেমিতে ওঠে। * পোচেয়ন সিটিজেন এফসি (দ. কোরিয়া) ॥ ‘এ’ গ্রুপের অপরাজিত রানার্সআপ দল তারা (পয়েন্ট ৫)। প্রথম ম্যাচে আলগাকে ২-০ গোলে হারায় তারা। এরপর পরের দুই ম্যাচে ঢাকা আবাহনী (০-০) এবং টিসি স্পোর্টসের (১-১) সঙ্গে ড্র করে সেমির টিকেট কাটতে সক্ষম হয়।
×