ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের মাটিতে সেরা বিদেশী স্পিনার এখন এই অস্ট্রেলিয়ান

অবিস্মরণীয় কীর্তি ও’কেফের

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

অবিস্মরণীয় কীর্তি ও’কেফের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বয়সে ছোট হলেও নাথান লেয়ন মাঠের অভিজ্ঞতায় অনেক এগিয়ে। অস্ট্রেলিয়া টেস্ট দলের অন্যতম স্পিনার হিসেবে তার নামটাই আগে চলে আসে। তবে ক্যারিয়ারে খুব কমই দুর্দান্ত কিছু করে দেখিয়েছেন ২৯ বছর বয়সী এ স্পিনার। পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট এ্যাসোসিয়েশনের উইকেট তাই স্পিনবান্ধব করেই গড়েছিল ঘূর্ণি বলে সমৃদ্ধ দল ভারত। কিন্তু সেই ফাঁদে তাদের আটকে বিপর্যস্ত করলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অনভিজ্ঞ স্টিভ ও’কেফে। ৩২ বছর বয়সী এ বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনার অভাবনীয় এক কীর্তি দেখিয়েছেন। দুই ইনিংস মিলে ১২ উইকেট শিকার করে স্বাগতিক ভারতকে লজ্জার হার উপহার দিয়েছেন পুনে টেস্টে মাত্র ৩ দিনে। ক্যারিয়ার সেরা তো বটেই ভারতের মাটিতে কোন স্পিনারের এবং অস্ট্রেলিয়ান কোন বোলারের পক্ষে সেরা বোলিং নৈপুণ্য এটি। প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট নেয়ার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছেন দ্বিতীয় ইনিংসেও। এবার ভারত সফরে আসার আগে ও’কেফে মাত্র ৪ টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন। পুনেতে মাঠে নামার আগে গতবছর থেকে চলতি বছর পর্যন্ত অনিয়মিতভাবে সবমিলিয়ে খেলেন ৩ টেস্ট। তবে ২০১৪ সালেই টেস্ট অভিষেক হয়েছিল তার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। সবমিলিয়ে ৪ টেস্টের ৭ ইনিংস বোলিং করে কখনও এক ইনিংসে ৩ উইকেটের বেশি নিতে পারেননি। ঝুলিতে ছিল মাত্র ১৪ উইকেট। এর আগেই অবশ্য ২০১১ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদযাত্রা শুরু হয়েছিল টি২০ দিয়ে। তারপরও মাত্র ৭ টি২০ খেলতে পেরেছেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে এখন পর্যন্ত অভিষেকই হয়নি মালয়েশিয়ান বংশোদ্ভূত নিউ সাউথ ওয়েলসের ক্রিকেটার ও’কেফের। কিন্তু ভারতের মাটিতে স্পিনবান্ধব উইকেটে খেলতে হবে এমন চিন্তা করেই এবার তাকে স্কোয়াডে রাখে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ)। পুনেতে প্রথম টেস্টের একাদশেই জায়গা করে নিয়েছেন। আর দ্বিতীয়দিন দেখিয়েছেন ক্যারিশমা। তার ভয়াল ঘূর্ণি বলে দিশেহারা হয়ে ভারতের বিশ্বসেরাদের কাতারে থাকা একাধিক ব্যাটসম্যান কুপোকাত হয়েছেন। প্রথম দুই স্পেলে নিজের বোলিংয়ে নিয়ন্ত্রণ পাননি, কিন্তু তৃতীয় স্পেলে এসে একাই ধসিয়ে দিয়েছেন ভারতের ব্যাটিং লাইন আপ। মাত্র ১১ রানের মধ্যে শেষ ৭ উইকেট খুইয়ে ফেলে ভারত। মাত্র ৩৫ রানে ৬ উইকেট শিকার করেন ও’কেফে। তখনই বিশ্ব মিডিয়ায় তাকে নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়। কারণ বিদেশী কোন বাঁহাতি স্পিনারের এটি ভারতের মাটিতে ছিল তৃতীয় সেরা বোলিং নৈপুণ্য। হুট করে বিপর্যয় নেমে আসতেই পারে। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এত কম রানে এর আগে ভারতীয় দল শেষ ৭ উইকেট হারায়নি। সেই লজ্জা তাদের দিয়েছেন ও’কেফে ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করে। মাত্র ১০৫ রানেই শেষ হয় গত দেড় বছরে নিজেদের মাটিতে সবগুলো দলকে নাস্তানাবুদ করা ভারতীয় দল। এবার অসিদের নাকানি-চুবানি দিতে সে কারণেই অন্যতম শক্তি স্পিনকে কার্যকর করার পরিকল্পনা নিয়ে গড়া হয়েছে উইকেট। কিন্তু সেখানে ভারতের বিশ্বসেরা স্পিনারদের পেছনে ফেলে চমকে দিলেন ও’কেফে। বিশ্বের এক নম্বর দলটি দ্বিতীয় ইনিংসে দারুণ কিছু করে ঘুরে দাঁড়াবে সেটাই ছিল প্রত্যাশিত। কিন্তু আবার যমদূতের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে ভারতীয় ব্যাটিং ছিন্নভিন্ন করেছেন সেই ও’কেফে। এবার শুরু থেকেই ছোবল হেনেছেন। মাত্র ২ ওভার করানোর পর পেসার মিচেল স্টার্ককে বিশ্রামে পাঠায় অসিরা। বল হাতে নিয়েই ছোবল হানতে থাকেন ও’কেফে। তার সঙ্গে যোগ দেন ৬৪ টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন লেয়ন। দু’জন মিলে আবারও তছনছ করে দেন ভারতকে। ভারতের প্রথম সারির ৭ ব্যাটসম্যানের মধ্যে ৬ জনই তার শিকারে পরিণত হয়েছেন অসহায় আত্মসমর্পণ করে। শুধু লোকেশ রাহুলের উইকেটটা পান লেয়ন এবং শেষ তিন ব্যাটসম্যানকে সাজঘরে ফেরান। আবারও ৩৫ রানে ৬ উইকেট। তবে প্রথম ইনিংসের চেয়ে আরও নিয়ন্ত্রিত এবং ভয়ানক ছিলেন ও’কেফে। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৭০ রানে ১২ উইকেট। প্রথমবার ম্যাচে ১০ উইকেটের বেশি শিকার করলেন তিনি। বিদেশী কোন স্পিনারের পক্ষে এটিই সেরা টেস্ট ম্যাচ বোলিং। তবে সার্বিকভাবে তালিকায় ও’কেফের আগে আছেন শুধু ইংলিশ অলরাউন্ডার ইয়ান বোথাম। তিনি ১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মুম্বাই টেস্টে ১০৬ রানে নিয়েছিলেন ১৩ উইকেট। আর অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে এর আগে ভারতের মাটিতে সেরা বোলিং নৈপুণ্য দেখিয়েছিলেন মিডিয়াম পেসার এ্যালান ডেভিডসন। ১৯৫৯ সালেল ডিসেম্বরে কানপুর টেস্টে তিনি দখল করেছিলেন ১২৪ রানে ১২ উইকেট।
×