ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাটির নিচে মিলছে গ্যাস তেল চুনাপাথর কয়লা ও কঠিন শিলা

খনিজ সম্পদ উত্তোলনে কম গুরুত্ব পাচ্ছে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চল

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

খনিজ সম্পদ উত্তোলনে কম গুরুত্ব পাচ্ছে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চল

সমুদ্র হক ॥ দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে মাটির নিচে লুকিয়ে আছে খনিজ সম্পদের অফুরন্ত ভা-ার। কয়লা ও শিলা পাথর (কঠিন শিলা) উত্তোলন শুরু হয়েছে। তবে তা ব্যাপ্তি পায়নি। ভূতাত্ত্বিক জরিপ ও পরীক্ষামুলক ড্রিলিংয়ে তেল, গ্যাস, চুনাপাথর, আকরিক লোহার সন্ধান পাওয়া গেছে। উত্তোলনের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ভূবিজ্ঞানীরা বলেন, যে মাটির গভীরে কয়লা থাকে সেখানে হীরক খ- (হীরা) পাওয়া যায়। আজও তা খতিয়ে দেখা হয়নি। তেল গ্যাসসহ সকল প্রাকৃতিক সম্পদের রুটিন অনুসন্ধান হয়। আশাব্যঞ্জক ফলাফলও মেলে। শুধু উত্তোলনের উদ্যোগ নেয়া হয় না। কখনও উদ্যোগ নেয়ার পরও তা বন্ধ করা হয়। রহস্যেই থেকে যায়। খনিজসহ সকল প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান করে তা উত্তোলনের ব্যবস্থা নেয়ার লক্ষ্যে জয়পুরহাটে যে প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয় তাদের ভূমিকাও সন্তোষজনক নয়। তাই তেল গ্যাস ও খনিজ সম্পদ উত্তোলনে সবচেয়ে কম গুরুত্ব দেয়া হয়েছে উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলকে। বগুড়ায় যমুনার পশ্চিম তীরে যে তেলের মজুদ আছে তা গত শতকের শুরুতে জরিপ করে জানানো হয়েছে। এরপর খনন করা স্থান হঠাৎ বন্ধ করে দেয়া হয়। ১৯৮২ সালের ১২ ডিসেম্বর সিলেটের হরিপুরে তেলের স্বর্ণদুয়ার উন্মোচিত হলে তেল মজুদের এলাকা নির্ণয়ের জন্য ওই সময়ের প্রযুক্তি ভূকম্পন জরিপের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরপর বগুড়া, রংপুর, পঞ্চগড়ে পেট্রোবাংলা ও শেল বাংলাদেশ বিডি লিমিটেড যৌথ জরিপ শুরু করে। ওই সময় বলা হয় বগুড়ার মাটির নিচে তেলের অনেক বড় ভা-ার রয়েছে। তেল আছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার শালবাহানে। তারপর হঠাৎ করেই সকল জরিপ বন্ধ করা হয়। ১৯৮৭ সালে বগুড়ার জরিপ দল বলেছিলেন যমুনার পশ্চিম তীরে তেল পাওয়া গেলে দেশের জ্বালানি চাহিদার অনেকটাই মেটানো সম্ভব। উল্লেখ করা হয় হরিপুরে তেল উত্তোলন শুরু হয়েছে। গ্যাসের ক্ষেত্রে উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে পূর্বাঞ্চলের যে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে বগুড়া পঞ্চগড়ে তেল প্রাপ্তিতে সেই বিচ্ছিন্নতা আর থাকবে না। কারণ যেখানে তেলের আধার মেলে তার আশপাশেই মাটির নিচে আছে গ্যাস, কয়লা, কঠিন শিলা, চুনা পাথর আকরিক লোহাসহ নানা খনিজ। দেশের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলনে সব সময় কম গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ফলে এ অঞ্চলে খনিজ উত্তোলনও সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায় কয়লা খনি থেকে কয়লা ও মধ্যপাড়ায় কঠিন শিলা উত্তোলন শুরু হয় নব্বইয়ের দশকের শেষ প্রান্তে। বর্তমানে বড়পুকুরিয়ার কয়লা খনির উত্তোলিত কয়লা দিয়ে স্টিম টারবাইনে আড়াইশ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদিত হয়ে জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে। মধ্যপাড়ার কঠিন শিলা বিক্রি শুরু হয়েছে। এর বাইরে উত্তরাঞ্চলে আর কোন খনিজ উত্তোলন নেই। ভূতাত্ত্বিকগণের মতে, উত্তরাঞ্চলে তেল গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ এই অঞ্চলের মাটি অনেক পুরানো। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বদ্বীপ বঙ্গ অববাহিকার বিশাল এক অংশ জুড়ে বাংলাদেশ। এই দেশের উত্তর ও উত্তর পশ্চিমে সিকিম কাঞ্চনজঙ্ঘার উপত্যকা খসিয়া জয়ন্তিকা থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। গিরিপথ ছুঁয়ে সরল রেখায় সমুদ্র অরণ্যময় মালভূমি ও সমতল ভূমি নদীবাহিত পলি দ্বারা গঠিত। এই বঙ্গীয় বদ্বীপে তেল গ্যাস না পাওয়াটাই ভূবিজ্ঞানীদের বিস্ময়। দীর্ঘদিন ধরে ভূতাত্ত্বিকরা এই দেশে তেল পাওয়ার সম্ভাবনা প্রকাশ করেন। হরিপুরে তেল প্রাপ্তি ও বগুড়ার মাটির নিচে জরিপে তেলের আধার ও পঞ্চগড়ের শালবাহানে তেল খুঁজে পাওয়া তা বাস্তবে পরিণত হয়েছে। ১৯১০ সাল থেকে এই দেশে তেল অনুসন্ধান শুরু হয়। প্রথম শুরু করে একটি বিদেশী কোম্পানি। পঞ্চাশের দশকের শেষ দিকে বগুড়ায় যমুনার পশ্চিম তীরে এবং কুচমা ও কলাকোপায় ব্রিটিশ স্ট্যান্ডার্ড ভ্যাকুয়াম ওয়েল কোম্পানি কূপ খনন করে। তারপর তা বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৯৮৭ সালে ভূকম্পন জরিপ শুরু করার পরও তা বন্ধ হয়। অথচ ভূবিজ্ঞানীরা বারবার বলছেন দেশ বিপুল পরিমান খনিজ পদার্থ ও তেলের ওপর ভাসছে। এই বিষয়টি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র খুব ভালভাবেই অনুধাবন করতে পেরেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তথ্য সার্ভিসের ওয়াশিংটন ফাইলের স্টাফ রাইটার জুডিথ ট্রানজো এক নিবন্ধে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের রিজার্ভের পরিমাণ অন্তত ১১ টিট্রিয়ন ঘনফুট। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেখানে বাংলাদেশের তেল গ্যাসের হিসাব কষছে সেখানে দেশের ভূবিজ্ঞানীরা উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে তেল গ্যাস উত্তোলনে এগিয়ে আসছে না। মাঝে মধ্যে সরকারী সংস্থা বাপেক্স গ্যাস তেলের পুরাতন জায়গাগুলোতে রুটিন জরিপ করে ফিরে যায়। এক সূত্র জানায় বগুড়া ও পাবনার মধ্যে প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকায় প্রাথমিক জরিপ চালিয়ে দেখা গেছে ভূস্তরে যেভাবে গ্যাস ও তেল থাকার কথা সেই অবস্থাই বিদ্যমান। ভূগর্ভে হাইড্রোকার্বনের উপাদান ও তা মজুদ হওয়ার কয়েকটি নিয়ম আছে। ভূস্তরে রয়েছে অসংখ্য ভাঁজ। সেখানে উৎস শিলার মধ্যে জৈব উপাদান তাপ ও চাপে বিবর্তনে তেল ও গ্যাসে রূপ নেয়।
×