ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বরেন্দ্রে অপরিকল্পিত পানি ব্যবহার, ভূগর্ভস্থ স্তর দ্রুত নিচে নামছে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বরেন্দ্রে অপরিকল্পিত পানি ব্যবহার, ভূগর্ভস্থ স্তর দ্রুত নিচে নামছে

ডিএম তালেবুন নবী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ দুই যুগের অধিক সময় ধরে লাগাতর ভূগর্ভের পানি ব্যবহারে কর্তৃপক্ষ বরেন্দ্র ভূমিতে এ ধরনের কর্মকা- হতে বিরত থাকার বা পিছু হটে আসার চেষ্টা করছে। সেই সঙ্গে আগের মতো বরেন্দ্র ভূমি ব্যবহার করে একাধিক ফসল উৎপাদনের বিকল্প পথও বের করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই গভীর নলকূপ না বসানো এবং যেসব গভীর নলকূপ ভূগর্ভের পানি আহরণ করছে তা সীমিত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। এক কথায় ভূগর্ভের পানির ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ হচ্ছে, এটা নিশ্চিত করেছে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। এতদিন গভীর ও অগভীর নলকূপের পানি অপরিকল্পিত ব্যবহার হচ্ছে বরেন্দ্র কৃষিতে। এতে চাষের পরিধি ও খাদ্য উৎপাদন বাড়লেও পরিবেশের ওপর পড়েছে মারাত্মক প্রভাব। গবেষকরা বলছেন, ভূগর্ভের পানির ওপর চাপ বাড়ায় দ্রুত নিচে নামছে পানির স্তর। বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সৃষ্টির অনেক আগে থেকেই পানির স্তর নেমে যাওয়া শুরু হয়। পরবর্তীতে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ভূগর্ভের পানি সেচের কাজে ব্যাপক ব্যবহার শুরু করলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলে পানির স্তর নেমে যায় ৪০ থেকে ৭০ ফুট নিচে। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে নাচোল উপজেলায়। ভূপৃষ্ঠ থেকে ১১৫ ফুট নিচে রয়েছে পানির স্তর। যে হারে পানির স্তর নামছে তাতে আগামী ১৫ থেকে ২০ বছরের মধ্যে জেলার কোথাও পানি পাওয়া যাবে না। বিশ্ব পানি দিবসের এক সিম্পোজিয়ামে এমনই ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে। স্বাগত বক্তব্যে গ্রামীণ বহুমুখী উন্নয়ন সংস্থা জিবাসের নির্বাহী পরিচালক তরিফুল ইসলাম টুকু রাখঢাক বক্তব্য দিলেও একটি সরকারী কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রধান দাউদ হোসেন বড় ধরনের আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, শুধু পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া নয় এক সময় হয়ত সুপেয় পানি পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়বে। লিখিত প্রবন্ধে তিনি বলেন, বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় পরিবেশ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বিষয়টি মাথায় রেখে বরেন্দ্র বহুমুখী কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) ‘বরেন্দ্র এ্যাগ্রো ইকো-ইনোভেশন রিসার্চ’ প্ল্যাটফর্ম গড়তে যাচ্ছে। এ নিয়ে তারা একাধিক বৈঠক করেছে। সর্বশেষ গত ২৯ জানুয়ারি একটি সম্মেলনে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, বিজ্ঞানী ও গবেষকরা অংশ নিয়ে তারা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বিএমডিএর চেয়ারম্যান ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী এসব উদ্যোগের কথা সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়েছেন। এ সময় সংস্থার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী, উপব্যবস্থাপকসহ (কৃষি) একাধিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। চেয়ারম্যান বলেন, সেচসাশ্রয়ী বিভিন্ন প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করছে বিএমডিএ। যেসব ফসল কম সেচে চাষ হয় সেগুলো চাষে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে চাষীদের। দেয়া হচ্ছে কারিগরি সহায়তা। ভূগর্ভের পানির ওপর চাপ কমাতে এখন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় রেখে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার কথা ভাবছে বিএমডিএ। এরই অংশ হিসেবে নতুন সংস্থা গড়ার কথা উঠে এসেছে। তিনি আরও বলেন, এর মধ্যে দেশে খরা ও তাপসহিষ্ণু ফসলের বিভিন্ন জাত আবিষ্কৃত হয়েছে। বরেন্দ্রর খরাকবলিত এলাকায় কৃষকরা এসব ফসলের চষাবাদও শুরু করেছেন। অল্প সেচের মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল ও উচ্চ মূল্যের ফসল পাচ্ছে। এতে শস্যের বিন্যাসই শুধু নয়, একই জমিতে ফলনের বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জমির উর্বরাশক্তি আরও সুদৃঢ় হচ্ছে। বোরো ধানের পরিবর্তে কম পানি গ্রহণকারী ধান, পুষ্টিসম্পন্ন গম, ভুট্টা, ডাল ও তৈলজাতীয় বিভিন্ন ফসল চাষ করছে কৃষক। বিএমডিএ ভাবছে বরেন্দ্র এলাকায় পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে লিড ফারমার্সদের টিম গড়ে তোলার। এতে উচ্চ ফলনশীল, পুষ্টিকর বহুমুখী ফসলের নিবিড় বিন্যাসের মাধ্যমে ভূগর্ভের পানি সেচের পরিমাণ কমানো সম্ভব। এ জন্য প্রয়োজন অভিজ্ঞ গবেষক ও জিওলজিস্টদের মাধ্যমে বরেন্দ্র এলাকায় একটি ওয়াটার মডেলিং ও মনিটরিং সিস্টেম গড়ে তোলা। একই সঙ্গে গভীর নলকূপ সেন্সর পদ্ধতি সৃষ্টি করে সেচের পরিমাণ কমিয়ে এনে জলবায়ু পরিবর্তনের হুমকি কমানো।
×