ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মোবাইল নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদল প্রক্রিয়া বাতিল

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

মোবাইল নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদল প্রক্রিয়া বাতিল

ফিরোজ মান্না ॥ মোবাইল নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদল বা এমএনপির (মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি) নিলাম প্রক্রিয়া বাতিল করেছে বিটিআরসি। এমএনপির জন্য দেশী-বিদেশী পাঁচটি কোম্পানি আবেদন করেছিল। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কোম্পানিগুলোর আবেদন বাতিল করা হয়। এখন ‘বিউটি কনটেস্টের’ ভিত্তিতে এমএনপির লাইসেন্স দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। বিটিআরসির সর্বশেষ কমিশন বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিটিআরসি সূত্র জানিয়েছে, বিউটি কনটেস্টের জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি নির্দিষ্ট যোগ্যতার ভিত্তিতে একটি প্রতিষ্ঠানকে যোগ্য নির্বাচিত করবে। এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কারিগরি ও আর্থিক মানদ- যাচাই-বাছাই করে ব্যবস্থা নেবে। বিটিআরসি নতুন প্রক্রিয়ায় এমএনপির লাইসেন্স দেয়ার এই প্রক্রিয়াকে বিউটি কনটেস্ট নাম দেয়া হয়েছে। গত বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর এমএনপির নিলাম হওয়ার কথা ছিল। এজন্য নিলামে অংশ নেয়ার যোগ্য পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিতও করেছিল বিটিআরসি। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে- রিভ নাম্বার লিমিটেড (এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রয়েছে পোল্যান্ডের টিফোরবি এসপি জেডওও), গ্রীনটেক ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড (এই প্রতিষ্ঠানের সহযোগী হিসেবে ছিল লিথুনিয়ার মিডিয়া ফোন), ইনফোজিলিয়ন বিডি টেলিটেক কনসোর্টিয়াম লিমিটেড (এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রয়েছে সেøাভেনিয়ার টেলিটেক ডিওও), ব্রাজিল বাংলাদেশ কনসোর্টিয়াম (এই কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে ব্রাজিলের ক্লিয়ার টেক) এবং রুটস ইনফোটেক লিমিটেড (এই কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে নরওয়ের সাইসটর গ্রুপ)। এমএনপি নিলামের সঙ্গে দেশী-বিদেশী প্রতিষ্ঠান জড়িত রয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে প্রতিটি কোম্পানির গোয়েন্দা প্রতিবেদন চাওয়া হয়। পরবর্তীতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের খোঁজখবর নেয়। প্রতিটি কোম্পানির খোঁজখবর নেয়ার পর গোয়েন্দা সংস্থাগুলো একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পাঁচ কোম্পানির আবেদন বাতিল করা হয়েছে। প্রতিটি কোম্পানি ১০ লাখ টাকা জমা দিয়ে আবেদন করে। এখন বিটিআরসি তাদের আবেদনের টাকা ফেরত দিয়ে দেবে। বিউটি কনটেস্টের ভিত্তিতে এ বছরই এমএনপি চালু করা হবে বলে বিটিআরসির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন। সূত্র জানিয়েছে, এমএনপি নিলামের জন্য বিটিআরসি গাইডলাইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনেছে। এখন যত দ্রুত সম্ভব এই সেবা কার্যকর করা হবে। গাইডলাইনে কিছু সংশোধনী আনায় নিলাম পেছানো হয়। এই সময়ের মধ্যে গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাওয়া যায়। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ‘নিরাপত্তাপত্র’ মেলেনি। ফলে বিটিআরসি আবেদন করা পাঁচটি কোম্পানির আবেদন বাতিল ঘোষণা করে। এদিকে, এমএনপি (মোবাইল নাম্বার পোর্টেবিলিটি) সেবা চালুর বিষয়ে বিটিআরসি দীর্ঘ চার বছর আগে থেকে বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করলেও এমএনপি সেবা আলোর মুখ দেখেনি। এই সেবায় গ্রাহকরা ইচ্ছা করলেই নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদল করতে পারবে। বেশ আগেই এমএনপির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থ মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। এখন এ সেবা চালু করতে আর কোন বাধা নেই। আমরা গ্রাহক সুবিধার্থে এই সেবা চালু করতে চাই। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ও এমএনপি সেবার ওপর জোর দিয়েছেন। এতে গ্রাহক পর্যায়ে উপকার হবে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। এমএনপি চালু হলে গ্রাহকের সুবিধা বাড়বে। তখন কোন অপারেটরের কি সুবিধা সেই সুবিধা গ্রাহকরা নিজেদের ইচ্ছা মতো অপারেটর বদল করে নিতে পারবেন। বিটিআরসি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী ড. শাজাহান মাহমুদ এর আগে বলেন, নম্বর না বদলে গ্রাহকদের অন্য অপারেটরে যাওয়ার সুযোগ করে দিতে ২০১৩ সালে জুনে মোবাইল ফোন অপারেটরদের নির্দেশ দিয়েছিল বিটিআরসি। অপারেটরদের টুজি লাইসেন্স নবায়ন করার সময় এই নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু নানা কারণে এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এখন সব কারণ দূর করে এমএনপি চালু করার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বিটিআরসি জানিয়েছে, বহু প্রতীক্ষিত এই সুযোগ তৈরির জন্য গত বছরের ২ ডিসেম্বর এমএনপি নীতিমালায় অনুমোদন দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। অপারেটরদের এমএনপি সুবিধা বাস্তবায়ন করার বিষয়ে দেয়া নির্দেশনায় বলা হয়, এমএনপি সুবিধা দিতে অপারেটর গ্রাহকদের কাছ থেকে ৫০ টাকার বেশি নিতে পারবে না। উল্লেখ্য, বর্তমানে ইউরোপ, আমেরিকা, ভারত ও পাকিস্তানে মোবাইল নম্বর পোর্টেবিলিটি (এমএনপি) সেবা চালু রয়েছে। আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে পথ চলতে হলে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে দেশেও এমএনপি সেবা চালু করতে যাচ্ছে। এতে গ্রাহক সেবাও বাড়বে। গ্রাহকদের সুবিধার জন্য দেশে এই সেবা চালু করা হচ্ছে।
×