ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আলোচনা সভায় পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

নূর চৌধুরীকে ফেরত দিলে বাংলাদেশ-কানাডার সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

নূর চৌধুরীকে ফেরত দিলে বাংলাদেশ-কানাডার সম্পর্ক নতুন মাত্রা পাবে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী নূর চৌধুরীকে বহিষ্কার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠালে বাংলাদেশ-কানাডার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে যুগান্তকারী সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি আরও বলেছেন, খুনী নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে ফেরত আনার চেষ্টা চলছে। শনিবার রাজধানী গুলশানের হোটেল লেকশোরে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। ‘বাংলাদেশ ও কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪৫ বছর ও উন্নয়ন’- শীর্ষক এই আলোচনা সভার যৌথভাবে আয়োজন করে ঢাকায় কানাডিয়ান হাইকমিশন ও ইনস্টিটিউট ফর পলিসি, এ্যাডভোকেসি এ্যান্ড গবর্নেন্স (আইপ্যাগ)। আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান, গ্লোবাল এ্যাফেয়ার্স কানাডার দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক নির্বাহী পরিচালক রবার্ট ম্যাকডুগাল, বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার বেনোয়া পিয়েরে লারামি ও আইপ্যাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সৈয়দ মুনীর খসরু। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনী নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে আনার চেষ্টা চলছে। তাকে (নূর চৌধুরী) ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে আমরা কাজ করছি। এর মাধ্যমে দায়মুক্তির সংস্কৃতির অবসান হবে। তিনি আরও বলেন, কানাডা বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ে মৃত্যুদ- পাওয়া নূরকে বহিষ্কার করে বাংলাদেশে পাঠালে তা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে যুগান্তকারী সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে। উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধুর এই আত্মস্বীকৃত খুনি অনেক দিন ধরেই কানাডায় পালিয়ে আছেন। বাংলাদেশ বেশ কয়েকবার তাকে ফেরত চাইলেও, আইনের দোহাই দিয়ে কানাডা তা করতে রাজি হচ্ছে না। দেশটির আইন অনুযায়ী, আশ্রিত যে অভিবাসী নিজ দেশে মৃত্যুদ-ের মুখোমুখি হতে পারে তাকে ফেরত দেয়ার সুযোগ নেই। যদিও গত বছর কানাডা সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছিলেন, কানাডা নূর চৌধুরীর প্রত্যাবসনের বিষয়ে আলোচনায় সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়া প্রথম পশ্চিমা দেশ কানাডার সঙ্গে ১৯৭২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক কূটনৈতিক সম্পর্কের সূচনা হয়। মুক্তিযুদ্ধের সময় তখনকার কানাডীয় প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে এলিওট ট্রুডো বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। যে কারণে পরে তাকে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার অনার’ পদকে ভূষিত করে বাংলাদেশ সরকার। গত বছর শেখ হাসিনার সফরের সময় পিয়েরে ট্রুডোকে দেয়া ওই পদক তার ছেলে দেশটির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর হাতে তুলে দেয়া হয়। ২০১৬-র ওই সফর বাংলাদেশ ও কানাডার সম্পর্কে ‘নতুন উদ্যম’ সৃষ্টি করেছে বলেও শনিবারের আলোচনায় মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। গত বছর কানাডা ও বাংলাদেশের মধ্যে ব্যবসা ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে, যার বেশিরভাগই হয়েছে দেশটিতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের শুল্কমুক্ত রফতানির মাধ্যমে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, ২০২২ সালে বাংলাদেশ ও কানাডার সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিকালে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগকে আরও উন্নত পর্যায়ে নিয়ে যাবে। আলোচনা সভায় ড. মশিউর রহমান তার বক্তব্যে বিগত ৪৫ বছরে বন্ধুপ্রতীম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যকার সম্পর্কের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও বিনিয়োগ দেশ দুটির মধ্যকার সম্পর্ক শক্তিশালী করছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যকার পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির আরও সুযোগ রয়েছে বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন। গ্লোবাল এ্যাফেয়ার্স কানাডার দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক নির্বাহী পরিচালক রবার্ট ম্যাকডুগাল বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় উগ্র সন্ত্রাসবাদের উত্থানে কানাডা বিচলিত। বিশেষ করে বাংলাদেশে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গীবাদের উত্থানে কানাডার বিশেষ উদ্বেগ রয়েছে। বাংলাদেশের সাধারণ ও বিদেশী নাগরিকদের অবনতিশীল নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আমরা উদ্বিগ্ন। এর ফলে আমাদের উন্নয়ন কর্মসূচী, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক, ব্যবসা-বাণিজ্য, মানুষে মানুষে যোগাযোগ ইত্যাদি বিষয়ে প্রভাব পড়তে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। এই অবস্থায় বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কর্তৃক নিরাপত্তার পরিবেশ উন্নয়নের জন্য আমরা উৎসাহিত করছি। আইপ্যাগ চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুনীর খসরু বলেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যে সম্পর্কের ভিত্তি সুদৃঢ় করেছে। যেহেতু কানাডা সরকার দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকে গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, তাই ভবিষ্যতেও এই সহযোগিতা আরও জোরদার হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। কানাডীয় হাইকমিশনার বেনোয়া পিয়েরে লারামি তার সমাপনী বক্তব্যে অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সুশাসন, বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কানাডা-বাংলাদেশ সম্পর্ক আরও জোরদার করার বিষয়ে সকলকে মূল্যবান পরামর্শ দেয়ার জন্য তিনি ধন্যবাদ জানান।
×