ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

বিডিআর বিদ্রোহে নিহতদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন

পিলখানা হত্যা মামলার রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

পিলখানা হত্যা মামলার রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বছর ঘুরে ফিরে এসেছে বিডিআর বিদ্রোহের নামে সেনা হত্যাযজ্ঞের সেই মর্মান্তিক দিন। শুধু ফিরে আসেনি সেদিনের সেই হত্যাযজ্ঞে নিহতরা। আজও তাদের পরিবার পথ চেয়ে বসে থাকে। শুধু পরিবার নয়, গোটা জাতি যেন তাদের অপেক্ষায় থাকে। তাই তো বছরের এ দিনটিতে প্রিয়জনদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে আবেগে অশ্রু ঝরে পড়ে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, তিন বাহিনী প্রধান ও বিজিবি মহাপরিচালকসহ শাহাদাতবরণকারীদের পরিবারের সদস্যসহ উপস্থিত সকলের। জাতীয় পার্টি ও বিএনপির তরফ থেকেও শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে স্বজনদের আর্তনাদে আবারও ভারি হয়ে ওঠে বনানীর সামরিক কবরস্থানের পরিবেশ। স্বজনরা ফাঁসির দ-প্রাপ্তদের রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আবেগ সামলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বিডিআর হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে বিডিআরের বাইরের কারও যোগসূত্র বা চক্রান্ত থাকার তথ্য মেলেনি। আজ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাদ আছর পিলখানায় বীরউত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে শহীদ ব্যক্তিবর্গের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। শনিবার সকালে বনানী সামরিক কবরস্থানে নিহতদের কবরে স্বজনরা ছাড়াও রাষ্ট্রপতির পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল সরোয়ার হোসেন ও প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মিয়া মোহাম্মদ জয়নুল আবেদিন বীরবিক্রম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোঃ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান এ্যাডমিরাল নিজামউদ্দিন আহমেদ, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধ নিবেদন করেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ, বিএনপি নেতা সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমানও নিহতদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। শ্রদ্ধা নিবেদনকালে সবার চোখ দিয়েই সেদিনের মর্মান্তিক হত্যাযজ্ঞের কথা স্মরণ করে অশ্রু ঝরছিল। আবেগ সামলে নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, পলাতকদের মধ্যে একজন গ্রেফতার হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। পিলখানা হত্যাযজ্ঞে বিডিআরের বাইরের কারও জড়িত বা চক্রান্ত থাকার তথ্য মেলেনি। বিডিআরের অভ্যন্তরীণ কারণেই এ হত্যাকা- ঘটেছে বলে প্রতীয়মান। বিজিবি প্রধান মেজর জেনারেল আবুল হোসেন বলেন, পিলখানা হত্যাকা-ের পর সরকারী পদক্ষেপের অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়েছে। বিজিবির গোয়েন্দা শাখাকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। পলাতকদের মধ্যে একজন গ্রেফতার হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শাহাদাতবরণকারীদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন আর বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। আজ বাদ আছর পিলখানায় বীরউত্তম ফজলুর রহমান খন্দকার মিলনায়তনে দোয়া মাহফিল ও মিলাদ অনুষ্ঠিত হবে। তাতে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। সরকারী আনুষ্ঠানিকতা শেষে স্বজনরা প্রিয়জনের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অনেকেই গোলাপ ফুলের পাপড়ি অতি যত্মসহকারে ছিটিয়ে দেন প্রিয়জনের কবরের ওপর। এ সময় স্বজনদের গগনবিদারী আর্তনাদে পুরো এলাকা শোকে নিস্তব্ধ হয়ে যায়। ভারি হয়ে আসে পরিবেশ। অনেককেই কবরের পাশে বসে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখা গেছে। কেউ কেউ বুক চাপড়ে কেঁদেছেন। স্বজনরা মৃত্যুদ-প্রাপ্তদের রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান। প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ২৫-২৬ ফেব্রুয়ারি তথাকথিত দাবিদাওয়া আদায়ের নামে বিডিআর বিদ্রোহীরা ৫৭ সেনা কর্র্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করে। হত্যার পর অনেকের লাশ কবর দেয়া হয়। আবার কারও লাশ ম্যানহোল ও ডোবায় ফেলা হয়। অনেক লাশ পুড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে বিদ্রোহীরা। এমন বিদ্রোহের জের ধরে বিডিআরের নাম পরিবর্তন করে বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ) রাখা হয়। পোশাক ও বাহিনীর লোগো পরিবর্তন করা হয়। আর যাতে কোন বাহিনীতে বিদ্রোহের ঘটনা না ঘটে, এজন্য বিদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি ৭ বছরের পরিবর্তে মৃত্যুদ- করা হয়েছে। বিজিবিকে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। তারই অংশ হিসেবে বাহিনীতে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়। ইতোমধ্যেই নারী সদস্যদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তারা সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করছেন। বিডিআর হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় রাজধানীর তৎকালীন লালবাগ থানার ওসি নবজ্যোতি খীসা হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে লালবাগ থানায়ই পৃথক ২টি মামলা দায়ের করেন। মামলা ২টি পরবর্তীতে আদালতের নির্দেশে নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়। ফৌজদারি আইনে মামলা ২টির তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ। ২০১৩ সালের ৫ নবেম্বর কারা অধিদফতরের পাশের মাঠে স্থাপিত বিশেষ আদালতে ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ড. মোঃ আখতারুজ্জামান হত্যার মামলার ৮৫০ আসামির মধ্যে ১৫২ জনকে মৃত্যুদ-, ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদ- ও ২৭১ জনকে খালাস দেন। অন্যদের ২ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। প্রসঙ্গত, এ মামলার তিন আসামি মৃত্যু হওয়ায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। পিলখানা হত্যাযজ্ঞ মামলার ডেথ রেফারেন্সের ওপর শুনানি চলছে। আপীল শুনানি আগামী ২ এপ্রিল পর্যন্ত মুলতবি করেছে আদালত। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের মধ্যে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টুর মৃত্যু হয়েছে। কারাবন্দী রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬১ জন। আর বিস্ফোরক মামলাটির বিচার চলছে।
×