ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মানববন্ধনে নাসিরউদ্দিন ইউসুফ

শাপলা চত্বরের মতো ঘটনা ঘটলে হেফাজত নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

শাপলা চত্বরের মতো ঘটনা ঘটলে হেফাজত নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শাপলা চত্বরের মতো আর কোন ঘটনা ঘটলে হেফাজতে ইসলাম এ দেশ থেকে চিরতরে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের সভাপতি ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু। তিনি বলেছেন, ৫ মে’র মতো আর কোন ঘটনা ঘটলে এ দেশ থেকে হেফাজতে ইসলাম চিরতরে হারিয়েছে যাবে। তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। হেফাজতের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, সুপ্রীমকোর্টের সামনে থেকে ন্যায়বিচারের প্রতীক খ্যাত ভাস্কর্য সরানো প্রসঙ্গে হেফাজত যে বক্তব্য দিয়েছে, দেশবাসীকে সেই বক্তব্যের দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে। ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মুখে ৫ মে হেফাজতিরা যেমন ঢাকা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলÑ তেমনি জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে এ দেশ থেকে হেফাজতিরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। একইসঙ্গে সরকারকে দ্রুত সময়ে হেফাজতে ইসলামকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানান বিশিষ্ট এই সাংস্কৃতিক ব্যক্তি। শনিবার বিকেলে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনের রাস্তায় ‘একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন, সাম্প্রদায়িকতামুক্ত পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক বাংলা ভাষায় পাঠদান ও কোচিং নিষিদ্ধের দাবিতে ছাত্র-শিক্ষক, সাংস্কৃতিককর্মী ও জনতার মানববন্ধন’Ñ এ বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার ও ভোর হলোÑ শিশু সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত এই মানববন্ধনে ২ থেকে ১০ বছরের শিশুরাও অংশ নেয়। সাম্প্রদায়িকতামুক্ত পাঠ্যপুস্তক প্রণনয়ের দাবিতে তারা সুর তুলে গানে গানে। তাদের স্বল্প স্বল্প ধ্বনিতেও উচ্চারিত হয় প্রতিবাদী সেøাগান। রাজধানীতে ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধনে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশ নেন। অফিস ফেরত কর্মজীবীকেও মানববন্ধনে অংশ নিতে দেখা গেছে। কোন কোন অভিভাবক তার সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। বক্তারা বলেন, চলমান এই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে দেশে যদি আবারও কোন গণজাগরণ সৃষ্টি হয় তার দায় সরকারকে নিতে হবে। কেন্দ্রীয়ভাবে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় একই ধরনের কর্মসূচী পালিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। মানববন্ধনে সভাপতির বক্তব্যে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, আমরা যখন মানববন্ধনে এসে দাঁড়িয়েছি তখন দেশ নানা সমস্যায় জর্জরিত। বাংলাদেশ জঙ্গী হামলার মুখে আছে। সেই শঙ্কার মধ্যে হেফাজতে ইসলাম নতুন করে হুমকি দিচ্ছে। সুপ্রীমকোর্টের সামনে যে ভাস্কর্য বসানো হয়েছে তা একজন গ্রিক নারীর। গ্রিক নারীর কোন ধর্ম নেই। সে সমস্ত মানবজাতিকে উপস্থাপন করছে। যারা ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলতে চায় তারা দেশের শত্রু। হেফাজতের এই বক্তব্যের দাঁতভাঙা জবাব দিতে হবে। ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের মুখে ৫ মে হেফাজতিরা যেমন ঢাকা ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল তেমনি জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে এ দেশ থেকে হেফাজতিরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ বলেন, পাঠ্যবই থেকে হুমায়ুন আজাদের ‘বই’ কবিতাটি বাদ দেয়া হয়েছে। একজন সৃজনশীল মানুষ আগামী দিনের সঙ্কট দেখতে পান, বুঝতে পারেন। তাই তিনি রচনা করেছিলেন বই নামের এই কবিতাটি। অথচ অন্ধকারের এই সময়ে সেই কবিতাটিই বাদ দেয়া হয়েছে। আমরা বলব, হুমায়ুন আজাদের এই কবিতাটি পাঠ্যপুস্তকে শুধু অন্তর্ভুক্ত করলেই হবে না; প্রতিটি বিদ্যালয়ের সম্মুখে তা বড় করে টাঙাতে হবে। সবাই একত্রিত না হলে অন্ধকারের শক্তি আমাদের গিলে ফেলবে। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। প্রতিবাদে সোচ্চার হতে হবে। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে নাট্যজন আখতারুজ্জামান বলেন, সর্বস্তরে বাংলা চালুর দাবিতে আজও রাস্তায় নামতে হলো। শিক্ষা ব্যবস্থায় সাম্প্রদায়িকীকরণ আমাদের আশ্চর্যিত করে, বিষ্মিত করে। তবে ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে কোন প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে না। তারা তেমন কোন ভূমিকা রাখছে না। আরিফ হায়দার বলেন, ভাষা আপন করে, ভাষাই করে পর। এই বাংলা ভাষা আমাদের প্রাণের ভাষা। অথচ আজ যেখানে সেখানে দেখি ইংরেজী। আজ পাঠ্যপুস্তকে রবীন্দ্রনাথের কবিতায় ২১টি শব্দ ভুল থাকে। পাঠ্যপুস্তক রচনায় কাদের বসিয়ে রাখা হয়েছে তা খতিয়ে দেখার দরকার। আমরা আমাদের শিশুদের শুদ্ধ বাংলা পড়াতে চাই। রাষ্ট্রের সর্বস্তরে বাংলা ভাষা চালু হোক। আফসানা ফেরদৌস বলেন, অভিভাবক হিসেবে মনে করি, আমার বাচ্চাকে গাদা গাদা বই নিয়ে কোচিংয়ে পাঠাতে চাই না। গাদা গাদা বইয়ের বোঝা নয়, একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা চাই। জনগণের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, আমাদের এই আন্দোলনে আপনারও একাত্ম হন, যোগ দিন। নাট্যজন কামরুল হাসান বলেন, সাংস্কৃতিক কর্মীরা রাস্তায় নেমেছে। রাজনৈতিক কর্মীদের চাওয়া-পাওয়া থাকে কিন্তু সাংস্কৃতিক কর্মীদের তা নেই। তারা যখন রাস্তায় নেমেছে বুঝতে হবে বিষয়টা জটিল। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি ক্ষমতায়, তাদের পক্ষে আমাদের সমর্থন রয়েছে। কিন্তু এই সময়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা যদি ভূলণ্ঠিত হয়, তাহলে এই সরকারের প্রতি আমাদের আর আস্থা থাকবে না। আমাদের সমর্থন থাকবে না। একই ধরনের কর্মসূচী পালিত হয়েছে রাজধানীর বাইরে নওগাঁতেও। নওগাঁ থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, নওগাঁয় একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা প্রবর্তন, সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক বাংলাভাষায় পাঠদান এবং কোচিং বাণিজ্য নিষিদ্ধের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালিত হয়েছে। বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটারের ডাকে দেশব্যাপী কর্মসূচীর অংশ হিসেবে শনিবার বিকেল ৫টা থেকে ব্রিজের মোড়ে স্বাধীনতা ভাস্কর্য চত্বরে নওগাঁ থিয়েটার এই কর্মসূচীর আয়োজন করে। প্রায় ঘণ্টাব্যাপী এই মানববন্ধন কর্মসূচীতে সভাপতিত্ব করেন নওগাঁ থিয়েটারের সভাপতি আবু রায়হান খন্দকার। এ সময় বক্তব্য রাখেনÑ নওগাঁ থিয়েটারের উপদেষ্টা আলতাফুল হক চেীধুরী আরব, অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক কবি আতাউল হক সিদ্দিকী, একুশে পরিষদের সভাপতি এ্যাডভোকেট ডি এম আব্দুল বারী, জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোঃ কায়েস উদ্দিন, কবি ম আ ব সিদ্দিকী বাদাম, সাংবাদিক এ বি এম রফিকুল ইসলাম, বাসদের জয়নাল আবেদীন মুকুল, গণজাগরণ মঞ্চের নাইস পারভীন, রবিউল ইসলাম, বিন আলী পিন্টু, আদিবাসী নেতা মঙ্গল কিসকু এবং নওগাঁ থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক মোঃ খাদেমুল ইসলাম। এছাড়াও ঢাকার বাইরে আরও কয়েকটি স্থানে একই ধরনের কর্মসূচি পালিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
×