ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

‘বিএনপির আন্দোলন ও নির্বাচন প্রস্তুতি এক সঙ্গে চলবে’

সাজা হলেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন বেগম জিয়া ॥ মওদুদ

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সাজা হলেও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন বেগম জিয়া ॥ মওদুদ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মামলায় সাজা হলেও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। শনিবার দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ২০ দলীয় জোটের শরিক দল লেবার পার্টি আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। মওদুদ বলেন, দেশে আর কোন দিন এক দলীয় নির্বাচন হবে না। আর বিএনপির আন্দোলন ও নির্বাচনের প্রস্তুতি একসঙ্গে চলবে। মওদুদ বলেন, আজকে একটা ধারণা পরিষ্কার করে বলে দিই, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার যদি সাজা হয়ে যায় তাহলে উনি আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন নাÑ এটা সঠিক কথা নয়। মামলায় খালেদা জিয়ার যদি সাজাও হয় তাহলে তার জনপ্রিয়তা আরও অনেক বেড়ে যাবে। দেশের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত কোন ব্যক্তি আমার সঙ্গে এ বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করবেন না। তিনি শুধু নির্বাচনে অংশগ্রহণই নয়, বরং নির্বাচনের সময় দল ও জোটের নেতৃত্বও দিতে পারবেন। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, ধরে নিলাম মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা হয়ে গেল, ভাল কথা। তাহলে আমরা আপীল ফাইল করব। আপীল হলো যে বিচার হয়েছে এর ধারাবাহিকতা। তখন আমরা তার জন্য জামিন চাইব। তাই খালেদা জিয়ার সাজা হলেও তিনি নির্বাচনে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারবেন। উনি যদি সাজাপ্রাপ্ত হয়ে যান তাহলে তিনি আগামী তিন বছর বা সাত বছর জেলখানায় থাকবেন, এটা হয় না। দেশের প্রচলিত নিয়মানুযায়ী আপীল ফাইল করার পরপরই আমরা জামিনের জন্য দরখাস্ত করব। সাধারণত তিন বছর সাজা হলে এমনিতেই জামিন হয়। আর সাত বছর সাজা হলে অল্প কিছুদিনের ব্যবধানে জামিন নিশ্চিত হবে। তাই খালেদা জিয়া জেলখানা থেকে আবার মুক্ত হয়ে ফিরে আসবেন। এটাই হলো কথা। কিন্তু এ নিয়ে নানা ধরনের জল্পনা কল্পনা কথা বার্তা যা হচ্ছে সেরকম কিছু হবে না। পিলখালা ট্র্যাজেডি সম্পর্কে মওদুদ বলেন, এ হত্যাকা- বিষাদময়, তবে বিচার কিছু হয়েছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে যারা এ হত্যাকা-ের পেছনে ছিল, তাদের বিচার এখনও হয়নি। এটা একটা বিরাট রহস্য। এ ঘটনায় যে ৫৭ অফিসার মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগ ছিল ব্রাইট অফিসার। তাদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছিল। হত্যাকা- নিবারণের ব্যাপারে সরকার অবহেলা দেখিয়েছেন সেটা আমরা সবাই জানি। এ হত্যাকা-ের বিচার হতেই হবে। কারা এর পেছনে জড়িত ছিল, কি উদ্দেশ্য বা ষড়যন্ত্র ছিল তা খুঁজে বের করতে হবে। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, নির্বাচনকালে সময়ে নির্বাচন কমিশন কি করবেন, না করবেন এগুলো অপ্রাসঙ্গিক। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে। সবার জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তা শুধু নির্বাচনের এক মাসে আগে নয়, এখন থেকেই সবার জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী মাঝে মাঝে বলেন, একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন হবে। সেটা হবে যদি প্রধানমন্ত্রী সত্যিকার অর্থে বিশ্বাস করেন। যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হয় তাহলে আমাদের দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা সকল মামলা যেগুলো ওয়ান-ইলেভেনের সময় করা হয়েছিল সেগুলো প্রত্যাহার করতে হবে। তাহলে বলব দেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ ফিরে এসেছে। মওদুদ বলেন, এক দলীয় নির্বাচন দেশের মাটিতে আর হবে না। সুতরাং সেটা যদি কেউ চিন্তা করে থাকে বা সেই ধরনের কোন পরিকল্পনা করে থাকেন তাহলে তারা বাস্তব অবস্থা থেকে অনেক বিচ্ছিন্ন আছেন। তিনি বলেন, আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতিও চলবে, আন্দোলনও চলবে। আন্দোলন হচ্ছে সেই গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার। যাতে করে সব মানুষ নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে। আর সেই ভোটের মাধ্যমেই নির্ধারিত হবে দেশে জনপ্রতিনিধিত্বশীল সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে কিনা এবং কোন দল বা কোন রাজনৈতিক জোট দেশ শাসন করবে। ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণভাবে দেশের রাজনৈতিক সঙ্কটের সমাধান করতে চাই। আমরা সবার সঙ্গে সংলাপ করতে চাই। সমঝোতার মাধ্যমে বর্তমান এই রাজনৈতিক ও গণতন্ত্রের সঙ্কটের নিরসন চাই। কিন্তু সেটা যদি সম্ভব না হয়, তাহলে আন্দোলন ছাড়া আমাদের আর বিকল্প থাকবে না। দেশের মানুষই তখন রাস্তায় নামবে, আন্দোলন করবে। লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, এনপিপি চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদ প্রমুখ। পিলখানার বিডিআর বিদ্রোহের শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি বিএনপির ॥ পিলখানার বিডিআর বিদ্রোহের নেপথ্যের কারণ উল্লেখ করে জাতির কাছে এ ঘটনার শ্বেতপত্র প্রকাশের দাবি জানিয়েছে বিএনপি। শনিবার রাজধানীর বনানী সামরিক কবরস্থানে বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় নিহতদের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান দলের পক্ষ থেকে এ দাবি জানান। মাহবুবুর রহমান বলেন, পিলখানায় ইতিহাসের সবচেয়ে কলঙ্কজনক হত্যাকা- ঘটে। হত্যাকা- এতটাই নির্মম যা দেশের ইতিহাসে এমনকি পৃথিবীর ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই। এ ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তার তরতাজা প্রাণ ঝরে যায়। এ হত্যাকা-ের বিচারকার্য চলছে, কিন্তু বলতে কষ্ট হচ্ছে আট বছরেও এ বিচার কাজ শেষ হয়নি। এমন হত্যাকা-ের বিচার কাজে দেরি হওয়া বিচার ব্যবস্থার জন্য ক্ষতিকর। তাই বিচার ত্বরিৎগতিতে সম্পন্ন করে দোষীদের সর্বোচ্চ সাজা কার্যকর করতে হবে। মাহবুবুর রহমান বলেন, এত বড় একটা ঘটনার রহস্য এখনও উন্মোচিত হচ্ছে না। এ হত্যাকা-ের নেপথ্যের নাম, পরিকল্পনাকারী ও অর্থের যোগানদাতাদের সম্পর্কে নিহতদের পরিবার, জাতি ও বিশ্ববাসী জানতে চায়। তাই আমরা চাই এ ঘটনায় সরকার জাতির সামনে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক। তবে এ সরকার না করলেও বিএনপি ক্ষমতায় গেলে এ ঘটনার শ্বেতপত্র প্রকাশ করা হবে। তবে এ সরকার কেন স্বেতপত্র প্রকাশ করবে না শীঘ্রই এটি জাতির সামনে পরিষ্কার করা উচিত। এ সময় লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমানের সঙ্গে ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) রুহুল আলম, দলের নেতা কর্নেল (অব) আব্দুল লতিফ প্রমুখ। পুলিশী বাধায় মাহমুদুর রহমানের সেমিনার প- ॥ পুলিশের বাধায় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের সেমিনার প- হয়ে যায়। শনিবার সকালে গুলশানের স্পেক্টা কনভেনশন সেন্টারে এ সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করার কথা ছিল মাহমুদুর রহমানের। ‘সীমান্ত হত্যা ও রাষ্ট্রের দায়’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজক ছিল ‘জনগণতান্ত্রিক আন্দোলন’ নামের একটি সংগঠন। জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবীদের উপস্থিতিতে সেমিনার উপস্থাপনের কথা ছিল বিশিষ্ট কলামিস্ট ফরহাদ মজহারের। কিন্তু সেখানে সেমিনার করার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না থাকায় পুলিশ তা করতে দেয়নি। সকাল দশটায় সেমিনার শুরুর আগে গুলশান থানা পুলিশের এক কর্মকর্তা অনুষ্ঠানে গিয়ে তা বন্ধ করতে বলেন। তিনি জানান অনুমতি না থাকায় এ সেমিনার করতে দেয়া যাবে না। তাই তা বন্ধ করতে হবে। এরপর সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে মাহমুদুর রহমান বলেন, আজকের ঘটনা প্রমাণ করে দেশ পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। কারণ কোন ঘরোয়া অনুষ্ঠানে পূর্বানুমতির প্রয়োজন হয় তা কখনও শুনিনি। পরে উপস্থাপক ফরহাদ মজহার সেমিনারে অংশ নিতে আসা লোকজনের কাছে ক্ষমা চেয়ে সেমিনারের অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
×