ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

রফতানি পণ্যসহ দেশীয় সকল শিল্পই সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ॥ ইএবি

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতি বাড়বে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ গৃহস্থালি ও শিল্প খাতে দুই ধাপে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ফলে ব্যবসায় বৃদ্ধির পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি বাড়বে বলে মনে করছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। অন্যদিকে শিল্প খাতে ২ ধাপে ১৫ শতাংশ গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সকল রফতানি পণ্যসহ দেশীয় সকল শিল্পই সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছে এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)। শনিবার পৃথক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ উদ্বেগের কথা জানানো হয়। ঢাকা চেম্বারের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে গৃহস্থালি ও শিল্প খাতে চাহিদা মাফিক গ্যাস সংযোগ প্রদান করা যাচ্ছে না, উপরন্তু গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পণ্য উৎপাদন, রফতানি এবং পণ্য পরিবহনসহ ব্যবসায়িক সকল কর্মকা-ের ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। যার ফলে খুচরা বাজারে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পাবে, মূল্যস্ফীতি বাড়বে এবং সাধারণ জনগণ ভোগান্তির শিকার হবে। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায় আন্তর্জাতিক বাজারে তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্যে রয়েছে। এমতাবস্থায় এ ধরনের সিদ্ধান্ত তৈরি পোশাক এবং স্থানীয় উদ্যোক্তাবৃন্দ আন্তর্জাতিক বাজারে টিকে থাকার ক্ষেত্রে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। এছাড়াও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির কারণে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদনে ব্যয় বাড়বে এবং ভবিষ্যতে বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। সার উৎপাদনে ব্যবহৃত গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির এ সিদ্ধান্তের কারণে দেশের কৃষি খাত বিশেষ করে ধান উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাবের আশঙ্কা রয়েছে। ডিসিসিআই বিশ্বাস করে, সরকার সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় এবং সাধারণ জনগণের ভোগান্তি লাঘবে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির এ সিদ্ধান্ত পুনঃবিবেচনা করবে। পাশাপাশি গ্যাস সংকট নিরসনে নিজস্ব কয়লার ব্যবহার বৃদ্ধি এবং নতুন নতুন গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধান বিশেষ করে, সমুদ্র এলাকয় গ্যাস কূপ অনুসন্ধানে বাপেক্সের কর্মকা- আরও জোরদার করা প্রয়োজন। এদিকে গত বৃহস্পতিবার শিল্প খাতে ২ ধাপে ১৫ শতাংশ গ্যাসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছে এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)। এতে সকল রফতানি পণ্যসহ দেশীয় সকল শিল্পই সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এখানে উৎপাদনকারীর স্বার্থ, ভোক্তাস্বার্থ ও জনগণের স্বার্থ সংরক্ষণ হয়নি বলে ইএবি মনে করে। বিশেষ করে মাছ, হিমায়িত খাদ্য পণ্য, কাঁচা বাজার, প্লাস্টিক, লেদার, তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাত শিল্পসহ সকল ধরনের রফতানি বাণিজ্যে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সেই সঙ্গে রফতানিমুখী শিল্প সক্ষমতা হারাবে। রফতানিমুখী সকল প্রতিষ্ঠানের উৎপাদন প্রক্রিয়ার অন্যতম দুটি প্রধান উপাদানের মধ্যে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে রফতানি খাতের সার্বিক উৎপাদন খরচের ওপর নিঃসন্দেহে সুদূরপ্রসারি প্রভাব পড়বে এবং উৎপাদন ব্যয় অবশ্যই বেড়ে যাবে। এমতাবস্থায়, রফতানি প্রবৃদ্ধি আরও কষ্টসাধ্য হবে। আমরা প্রতিযোগী দেশসমূহের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারে পিছিয়ে পড়ব এবং সক্ষমতা হারাতে থাকব। এর পরিপ্রেক্ষিতে সার্বিক রফতানি খাতের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সমর্থ হবে না। সংস্থাটির মতে, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দর কমে যাওয়ায় প্রতিযোগী দেশগুলো যেমন ভারত, চীন, ভিয়েতনাম, ফিলিপিন, ক্যাম্বোডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, একাধিকবার জ্বালানি খাতের দর সমন্বয় করেছে। আরও উল্লেখ থাকে যে, ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও তুরস্ক ডলারের বিপরীতে তাদের মুদ্রার অবমূল্যায়ন হয়েছে। এক্ষেত্রেও গত ৪ বছর যাবৎ বাংলাদেশ তার ব্যতিক্রম এবং টাকা অতিমূল্যায়িত হয়ে রয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে, রফতানি সংশ্লিষ্ট সকল খাত কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছে। উপরোক্ত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সকল রফতানি খাত বিশেষ করে পোশাক ও বস্ত্র খাতের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন ও সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গ্যাসের দাম বৃদ্ধির বিষয়টি পুনঃবিবেচনা করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ইএবি।
×