ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এডিপি কাটছাঁট হচ্ছে ৬ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

এডিপি কাটছাঁট হচ্ছে ৬ হাজার কোটি টাকা

কাওসার রহমান ॥ বাস্তবায়ন অদক্ষতায় এবারও বড় কাটছাঁটের মুখে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি)। চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের মূল এডিপি থেকে প্রায় ছয় হাজার কোটি টাকা কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। এতে সংশোধিত এডিপির আকার ৫.৮৭ শতাংশ কমে দাঁড়াচ্ছে এক লাখ ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। উল্লেখ্য, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আকার ছিল এক লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। এই বিশাল এডিপি বাস্তবায়ন অদক্ষতার কারণেই প্রতিবারের মতো এবারও কাটছাঁট হচ্ছে। অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে এডিপির বাস্তবায়ন হয়েছে মাত্র ৩২ শতাংশ। অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গত অর্থ বছরের একই সময়ের চেয়ে এবারের অগ্রগতি বেশি। এমনকি গত চার বছরের মধ্যে এবার বেশি বাস্তবায়ন হয়েছে এডিপি। এটা হয়েছে মূলত নিজস্ব সম্পদের ব্যয় বেশি হওয়ার কারণে। গত জুলাই- জানুয়ারি সাত মাসে এডিপির অর্থ ব্যয় হয়েছে মোটি ৩৯ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা। যা মোট এডিপির ৩২.৪১ শতাংশ। আগের বছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ২৮ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা। যা ছিল মোট এডিপির ২৮ শতাংশ। কাটছাঁটে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প বাদ দিয়ে বিদ্যুত, জ্বালানি ও সড়ক খাত অগ্রাধিকার পাবে। অর্থনীতিবিদদের অভিমত, কাটছাঁটের সময় গুরুত্ব দিতে হবে অবকাঠামো খাতকে। পাশাপাশি কাজের গুণগত মানও বজায় রাখতে হবে। প্রতি বাজেটেই বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর জন্য বাড়ছে বরাদ্দ। তবে বছর শেষে বাস্তবায়ন অদক্ষতায় কাটছাঁট করা হয় বড় অঙ্কের এডিপি। গত বছরের মে মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) পরিবহন খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে এক লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন করে। বৈঠকে অবশ্য ১২ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকার নিজস্ব অর্থায়নের প্রকল্পও অনুমোদন দেয়া হয়। ফলে মোট বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আকার দাঁড়ায় এক লাখ ২৩ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা। যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরের চেয়ে প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকা বেশি। কর্মকর্তারা জানান, কাটছাঁটের কারণে ঝরে যেতে পারে কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। সেক্ষেত্রে অগ্রাধিকারে থাকতে পারে বিদ্যুত অবকাঠামোর মতো জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। তবে কাটছাঁটের শুরুতেই সংশোধিত এডিপিতে নিজ নিজ এলাকার প্রকল্প ঢুকাতে জোর লবিং শুরু করেছেন মন্ত্রী এমপিরা। ইতোমধ্যে সংশোধিত এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির তালিকায় প্রায় ১৫০ প্রকল্প চলে এসেছে। যা নিয়ে কর্মকর্তারা খুব চাপের মুখে রয়েছেন। বর্তমানে এডিপিতে তিন শতাধিক ধারাবাহিক প্রকল্প রয়েছে। প্রতিবছরই এডিপি সংশোধনের সময় অনেক রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রকল্প প্রস্তাব আসে অন্তর্ভুক্তির জন্য। এতে এডিপিতে প্রকল্পের সংখ্যা বেড়ে যায়। ইতোমধ্যে এ ধরনের প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের চাপ আসতে শুরু করেছে। যা নিয়ে চাপের মধ্যে রয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। কর্মকর্তারা আরও জানান, এবছর সংশোধিক এডিপিতে অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প অগ্রাধিকার দেয়া হবে। বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্প যথাসম্ভব পরিহার করা হবে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় স্থানীয় সম্পদের বরাদ্দ বেশি চেয়েছে। এতে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উন্নয়ন সহযোগীদের তীক্ষè নজরদারির মধ্যে থাকতে হবে না। এছাড়া, বর্তমানে এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত বরাদ্দবিহীন প্রকল্পগুলো সংশোধিত এডিপিতে কিছু বরাদ্দ পাবে বলেও জানান কর্মকর্তারা।
×