ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নাগরিক সচেতনতা

প্রকাশিত: ০৪:০১, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

নাগরিক সচেতনতা

শুক্রবার জনকণ্ঠের প্রথম পাতায় সড়ক বিভাজক বিপজ্জনকভাবে ডিঙ্গিয়ে রাস্তা পারাপাররত কয়েকজন নাগরিকের ছবি ছাপা হয়েছে। সংবাদটির শিরোনামÑ এই আমাদের নাগরিক সচেতনতা। প্রায় কোমর সমান উঁচু বল্লমের সুচালো মুখসদৃশ বিভাজক-দ-ের ওপর দিয়ে মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে এক বোরখা পরিহিত মহিলা পার হচ্ছেন। দৃশ্যটি শুধু আতঙ্ক জাগায় না, তা শোভনতার ধারণাকে আঘাত করার মতোও। একটু পা হড়কালে ভদ্রমহিলা জখম হতে পারতেন। তাছাড়া বিভাজক পেরিয়ে রাস্তার মাঝখান দিয়ে অপর পারে যাওয়ার সময় গতিশীল যানবাহন এড়ানোও বিপজ্জনক। ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা পারাপারে নাগরিকদের নিরুৎসাহিত করার লক্ষ্যেই সড়ক ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ ওই স্থায়ী ও কঠোর বিভাজক স্থাপন করেছেন। তবু মানুষ মানছে না, তার হুঁশ হচ্ছে না। অপর ছবিতে শিশুসন্তানকে বুকের সঙ্গে বেঁধে এক প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তির ওই কোমর সমান উঁচু প্রতিবন্ধক পেরোনোর দৃশ্যটি দেখলেও আঁৎকে উঠতে হয়। মানুষ রাস্তা পারাপারের সময় এমন ঝুঁকি কেন নেন, সেটা বড় প্রশ্ন। একটু দূরেই নিরাপদে রাস্তা পেরোনোর জন্য ফুট ওভারব্রিজ কিংবা জেব্রাক্রসিং থাকে। নাগরিকরা ওই পথটুকু হাঁটতে চান না, তারা শর্টকাট খোঁজেন। আর ফুট ওভারব্রিজ ডিঙ্গানোকে তারা ইংলিশ চ্যানেল পেরোনোর মতোই কঠিন ও মহাকষ্টকর এক কাজ বলে মনে করেন। সিঁড়ি ভাঙতে তাদের বিরাট আপত্তি। জনকণ্ঠে প্রকাশিত তৃতীয় ছবিটি আরও মারাত্মক। বিদ্যুতের খুঁটির ওপর ভর দিয়ে আট-দশ ফিট উঁচু সড়ক-প্রতিবন্ধক ডিঙ্গাচ্ছে স্কুল ছাত্ররা। বড়রাই যখন কা-জ্ঞান খুইয়ে পশুর স্বভাব প্রকাশ করছে, সেক্ষেত্রে ছোটদের আর কিভাবে দোষ দেয়া যাবে! নাগরিক কা-জ্ঞান নিয়ে অনেক লেখা হলেও, ট্রাফিক পুলিশ নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করলেও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হচ্ছে না। সড়ক ও ফুটপাথ চলাচলের জন্য। সেই চলাচল নির্বিঘœ রাখাই কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব। নাগরিকেরও দায় রয়েছে। ঔচিত্যজ্ঞান থাকলে কোন নাগরিক চলার পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন না। ঢাকা এখন দেশের সবচাইতে জনবহুল এলাকায় পরিণত হয়েছে। তাই দেশের অন্য যে কোন শহরের তুলনায় ঢাকা অনেক বেশি বিপদগ্রস্ত। লজ্জাজনক ব্যাপার হলো বহু পথচারী রাস্তার পাশে খোলা নর্দমা বা পাঁচিল পেলে সেইস্থানে প্রকাশ্যে জলবিয়োগ করে থাকেন। এটি যে কত দৃষ্টিকটু ও গর্হিত কাজÑ অনেকেই তা বুঝতে চান না। এই অপকর্মও সড়ক চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি করে। নাগরিক সচেতনতা বাড়াতে আইন অনুযায়ী শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে গতি ও পরিমাণ বাড়িয়ে দিলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবেÑ এমনটা ভাবার কারণ নেই। কোন বিষয়ে নাগরিক সচেতনতা তৈরির জন্য মিডিয়ার বড় ভূমিকা রয়েছে। বিশেষ করে ইলেকট্রনিক মিডিয়া এক্ষেত্রে সক্রিয় হতে পারে। যিনি নিজের জীবন বিপন্ন করে তুলে রাস্তা পাড়ি দিচ্ছেন তিনি যে এ বিষয়ে পুরোপুরি অজ্ঞাত, বিষয়টি তা নয়। তাকে লজ্জা দেয়া হলে এবং সেটি মিডিয়ায় প্রচারিত হলে লাখ লাখ নাগরিক সতর্ক হয়ে যাবেনÑ এমনটা আশা করা যায়। সেইসঙ্গে শিশু-কিশোরদের ভেতর সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সক্রিয় হতে পারে। এক্ষেত্রে কিছুটা কৌশলী হওয়াও বাঞ্ছনীয়। অভিভাবক তার সন্তানকে নিয়ে রাস্তা পারাপারে কা-জ্ঞানহীনতার পরিচয় রাখলে সন্তানই প্রতিরোধ করবে কিংবা বাবা-মাকে বিরত রাখবে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকেও বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে নাগরিক সচেতনতা গড়ে তোলার জন্য।
×