ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

এলএনজি টার্মিনাল

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

এলএনজি টার্মিনাল

কাতার থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এলএনজি আমদানির জন্য ২০১১ সালে কাতার সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতা চুক্তি করে বাংলাদেশ। আর এই গ্যাস আমদানির আগে সবচেয়ে বেশি জরুরী টার্মিনালের যা প্রয়োজনীয় গ্যাস মজুদের নিয়ামক। এই টার্মিনাল করার উদ্যোগও নেয়া হয় সেই সময়। জ্বালানি সম্পদ একটি দেশের উন্নয়নের নিয়ামক। এক সময় ধারণা করা হতো বাংলাদেশ গ্যাসের ওপর ভাসছে। বিএনপি সরকারের আমলে এটাও ঘোষণায় আসে মাটির তলায় গ্যাস রেখে দেয়ার কোন মানে নেই। অর্থাৎ স্বয়ংসম্পূর্ণ গ্যাস সম্পদ বিদেশেও রফতানি করা সম্ভব। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর (১৯৯৬) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলেছিলেন, দেশে যদি ৫০ বছরের গ্যাস মজুদ না থাকে তাহলে কোনভাবেই তা রফতানির যোগ্য হবে না। এর প্রায় ২০ বছর পর বাংলাদেশ এখন গ্যাস সঙ্কটের আবর্তে। নতুন নতুন আবাসিক এলাকায় গ্যাস সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কলকারখানায় গ্যাসের ঘাটতিতে উৎপাদন প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে। নতুন প্রতিষ্ঠিত শিল্প-কারখানায়ও গ্যাস বিতরণ প্রায়ই অসম্ভব হয়ে পড়ছে। বিরাজমান এই গ্যাস সঙ্কটকে উত্তরণের লক্ষ্যে সরকার এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্তকে আরও জোরদার করার পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। এর আবশ্যকীয় পূর্ব শর্ত হিসেবে টার্মিনাল প্রকল্পকে নতুন মাত্রা দিতে পেট্রোবাংলাকে পরামর্শ দিয়েছে সরকার। যা গ্যাসের ঘাটতি পূরণে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখতে পারে। যে সব বাসাবাড়িতে গ্যাসের সংযোগ দেয়া আছে, সেখানেও নানামাত্রিকে এই জ্বালানির অভাব দেখা দেয়। তাছাড়া গ্রামাঞ্চলে কিংবা একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চলে জ্বালানির মাধ্যম হিসেবে যেভাবে কাঠের অপব্যবহার হয়, তাতে বন সম্পদের মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মতো দুরবস্থার শিকার হওয়াও অসম্ভব কিছু নয়। নতুন গ্যাস আমদানি এ ধরনের জ্বালানি অপব্যবহার থেকেও দেশকে বাঁচাতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। ধারণা করা হচ্ছে গ্যাস মজুদের ২০ টিসিএফের মধ্যে থেকে প্রায়ই ১২ টিসিএফ শেষ হয়ে গেছে। বাকি ৮ টিসিএফ ২০৩০ সালের মধ্যেই শেষ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যা বর্তমান গ্যাস সঙ্কটকে তীব্রতর অবস্থায় নিয়ে যেতে পারে। সুতরাং সময় থাকতেই এই ঘাটতির মোকাবেলা জরুরী। বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে সমঝোতা স্মারকও হয়ে গেছে গ্যাস আমদানির ব্যাপারে। আর মহেশখালীতে টার্মিনাল প্রস্তুতিকরণের ব্যবস্থাও প্রক্রিয়াধীন। এ কার্যক্রমকে দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় সমস্ত উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে সংশ্লিষ্টদের। বৃহদাকার একটা টার্মিনালেই প্রায় ৬ মাসের গ্যাস মজুদ করা সম্ভব বলে সংশ্লিষ্টরা ধারণা দিয়েছে। বেসরকারী খাতেও ৫টি এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আরও কয়েকটি কোম্পানি এই টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নিতে সরকারের পরামর্শ চেয়েছে। এসব বেসরকারী প্রকল্প এবং কোম্পানির মাধ্যমে টার্মিনাল নির্মিত হলে বিদেশ থেকে সরাসরি গ্যাস আমদানি করা কঠিন কিছু হবে না। সুতরাং গ্যাস সঙ্কট চরম দুরবস্থার দিকে যাওয়ার আগেই তাকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে প্রতিকারের বিধান করতে হবে। সে বিধান হিসেবে সর্বাগ্রে প্রয়োজন কয়েকটি টার্মিনাল তৈরি করে গ্যাস মজুদকে নিশ্চিত করা। যে কোন দেশে জ্বালানি সম্পদ সে দেশের সমৃদ্ধির অন্যতম নিয়ন্ত্রক। প্রাকৃতিকভাবে সে সম্পদ অর্জন যেমন দেশের জন্য মঙ্গলজনক, একইভাবে সঙ্কটে বিপদে সে সম্পদের ঘাটতি পূরণও সময়ের দাবি। প্রয়োজনে আমদানি করে এই সঙ্কটের সমাধানও অত্যন্ত জরুরী। জনগণও সেই প্রতাশাই করে।
×