ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

নাচ ও গানে ছায়ানটের বসন্ত উৎসব উদযাপন

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

নাচ ও গানে ছায়ানটের বসন্ত উৎসব  উদযাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বসন্তের নির্মল আকাশ। ফাগুন হাওয়ার দোলা রাজধানীতে মোহময় রূপে না লাগলেও, ধানম-ির ছায়ানট মিলনায়তেন শুক্রবার সন্ধ্যায় ছিল সুর আর ছন্দের মেলবন্ধন। বাসন্তী রংয়ের সাজসজ্জা আর পোশাকে পুরো ভবন ঘিরে বিরাজ করছিল বসন্তের আমেজ। নাচে-গানে উদযাপিত হলো ছায়ানট আয়োজিত বসন্ত উৎসব। প্রাণবন্ত এ আয়োজনে ছিল বসন্তের নানা আঙ্গিকের গান আর নাচ। এদিন বিকেল থেকে ধীর পায়ে দর্শক সমাগম হতে থাকে। আস্তে আস্তে কানায় কানায় পূর্ণ হয় মিলনায়তন। অনুষ্ঠান উপভোগের আশায় পিনপতন নীরবতায় অধীর আগ্রহে বসে আছে সবাই। সন্ধ্যায় নীরবতা ভাঙ্গল নৃত্যের ছন্দে। ‘ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে বনে বনে’ রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে নাচলেন শিল্পীরা। শিল্পী মহাশ্বেতা চৌধুরী একক কণ্ঠে গাইলেন রবীন্দ্রনাথের গান ‘আজ সবার রঙে রঙ মেশাতে হবে’। রবীন্দ্র-নজরুল আর অতুল প্রসাদের গানের পরিবেশনা ছিল পালাক্রমে। ‘মোর বীণা ওঠে কোন সুরে বাজি’ রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী সঞ্চারী অধিকারী। অনুষ্ঠানের চতুর্থ পরিবেশনা ছিল নামিরা মুসকানের নজরুল সঙ্গীত ‘সুন্দর অতিথি এসো এসো’। তানিশা জাহান নরিকা গেয়ে শোনালেন রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘দিয়ে গেনু বসন্তের’। অতুল প্রসাদ সেনের ‘মোরা নাচি ফুলে ফুলে’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে শিল্পীরা। নজরুল সঙ্গীত ‘নতুন পাতার নুপুর বাজে’ পরিবেশন করেন শিল্পী লাইসা বিনতে কামাল। শিল্পী বিপ্রদীপ মল্লিক ও শ্রেষ্ঠশ্রেয়ী মাহমুদ দ্বৈতকণ্ঠে পরিবেশন করেন রবীন্দ্রসঙ্গীত ‘ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল’। এরপরে ছিল সম্মেলক গান ‘মনের রঙ লেগেছে’। পিউ ম-ল গেয়ে শোনান ‘আমার মল্লিকা বনে’ গানটি। পরে ‘ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায়’ গানের সঙ্গে ছিল দলীয় নৃত্য। ‘ওরা অকারণে চঞ্চল’ গানটি পরিবেশন করেন আরিয়েতা খান। অর্পিতা দাস গেয়ে শোনান ‘দোল ফাগুনের দোল লেগেছে’। ‘রাঙিয়ে দিয়ে যাও‘ রবীন্দ্রসঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী বাঁধন কর্মকার। পরে ‘বসন্তে ফুল গাঁথল’ গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে শিল্পীরা। সমুদ্র শুভম ও দেবজ্যোতি করের দ্বৈতকণ্ঠে পরিবেশিত হয় ‘বসন্ত এলো এলো এলোরে‘ গানটি। ‘তোমার আনন্দ ওই এলো দ্বারে’ গেয়ে শোনান শ্রাবন্তী শোভনা। এরপর ‘সব দিবি কে সব দিবি পায়’ রবীন্দ্রসঙ্গীতের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পীরা। সমবেতভাবে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় বসন্ত উৎসব। অনুষ্ঠানে যন্ত্রাণুষঙ্গে তবলায় ছিলেন এনামুল হক ওমর ও স্বরূপ হোসেন। এসরাজ বাজিয়েছেন আশোক এবং মন্দিরায় ছিলেন দীপ কুমার রায়। নাচ, গান, আবৃত্তি আর শপথবাক্য পাঠে ষষ্ঠদশ মুক্তির উৎসব অনুষ্ঠিত ॥ নাচ, গান, আবৃত্তি আর শপথবাক্য পাঠের মধ্যদিয়ে মুক্তির উৎসব পালিত হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষাকেন্দ্র খেলার মাঠে শুক্রবার সকালে। শিক্ষা কর্মসূচীর আওতায় প্রতি বছরের ধারাবাহিকতায় এ উৎসবের আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। এবারের উৎসবের সেøাগান ‘আমাদের অঙ্গীকার অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ নির্মাণ’। উৎসবে বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্য, শিল্পী, সাহিত্যিক, গায়ক-গায়িকাসহ বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে। এতে অংশগ্রহণকারী দশ হাজারেরও অধিক ছাত্রছাত্রীকে শপথবাক্য পাঠ করানো হয়। ছায়ানটের শিল্পীদের কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও পতাকা উত্তোলনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। এরপর লিয়াকত আলী লাকীর লেখা ‘এ মাটি নয় জঙ্গীবাদের, এই মাটির মানবতার’ গানের সঙ্গে নৃত্যালেখ্য পরিবেশন করে স্পন্দনের শিল্পীরা। এরপর স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডাঃ সারওয়ার আলী। তিনি বলেন, ২১ বছর আগে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী প্রজন্মকে আমাদের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে যাত্রা শুরু করেছিল এই মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। আজ এই উৎসবে এসে আমরা আমরা সব পশ্চাৎপদতা, ধর্মান্ধতা থেকে দেশকে নিরাপদ রাখব। যারা ধর্র্মের অপব্যাখ্যা করে পবিত্র ধর্মকে সন্দেহজনক করে তুলছে, আসুন সেই আবর্জনাগুলোকে দহৃর করি। পরে ছাত্রছাত্রীদের শপথবাক্য পাঠ করান মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন আকরাম আহমেদ বীরউত্তম। শপথবাক্যে বলা হয় মুক্তির উৎসবের সামিল আমরা সকল নবীন-নবীনা শপথ গ্রহণ করছি যে যাঁদের আত্মদান ও বীরত্ব সংগ্রামের ফলে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, তাদের স্মৃতি আমরা বহর করব প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। মুক্তিযুদ্ধে যে অগণিত নারী নির্যাতিত হয়েছেন, আমরা তাদের শ্রদ্ধা জানাই। একইসঙ্গে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আজো যে নারী শিশু নির্যাতন ও সংহিংসতা ঘটছে তা আমরা রুখে দাঁড়াব। বাংলাদেশে বিজ্ঞানমনষ্ক যুক্তিবাদী উদার অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে আমরা দৃঢ়ভাবে কাজ করে যাব, শপথের পর জয় বাংলা সেøাগান দেয়। অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানাতে এসেছিলেন কথাশিল্পী মুহম্মদ জাফর ইকবাল। ঠা-ায় তার গলা বসে গিয়েছিল। জোরে কথা বলতে পারছিলেন না। উপস্থাপক রফিকুল ইসলামের সহায়তায় মুহম্মদ জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, আমার অনেক বন্ধু মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল নতুন এক দেশ উপহার দেবে বলে। তার একটি দেশ উপহার দিয়েছে। একটা যুদ্ধ হয়েছে, আজ তোমরা এক নতুন যুদ্ধ শুরু করেছ, সেই যুদ্ধ বাংলাদেশকে নতুন করে গড়ে তোলার। তিনি আরও বলেন, আমার বন্ধুরা যে স্বপ্ন দেখেছিল, তোমরা তাদের সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ উপহার দেবে। এটাই তোমাদের আমার চাওয়া। উৎসবে আগত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে ট্রাস্টি কবি রবিউল হুসাইন, জিয়াউদ্দিন আলী তারিক, মফিদুল হক, আক্কু চৌধুরী, এভারেস্টজয়ী নিশাত মজুমদার প্রমুখ। এরপর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয় সানিডেল স্কুল, ক্যালিক্স প্রিক্যাডেট স্কুল, দক্ষিণ খান আদর্শ বিদ্যালয়, আবদুল্লা মেমোরিয়াল হাই স্কুল, ইউনিসেপ স্কুল, বধ্যভূমির সন্তানদলের শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফেরদৌস আরা এবং কবিতা আবৃত্তি করেন কবি তারিক সুজাত। সবশেষে সঙ্গীত পরিবেশন করে জলের গানের শিল্পীরা। সমগ্র অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রফিকুল ইসলাম। জন্মদিনের আয়োজনে সেরা গান গাইলেন ফকির আলমগীর ॥ স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত গণসঙ্গীত শিল্পী ফকির আলমগীরের ৬৭তম জš§দিন ছিল ২১ ফেব্রুয়ারি। তার দুই দিন পর শুক্রবার আয়োজন করা হয় জš§দিনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। সংবর্ধিদ হওয়ার পাশাপাশি অনুষ্ঠানে তিনি একের পর এক কালজয়ী ২০টি বেশি সঙ্গীত পরিবেশন তিনি। জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে তার একক সঙ্গীতানুষ্ঠান ছাড়াও ছিল বিশেষ আলোচনা। মনোজ্ঞ এই আয়োজন করে জাতীয় জাদুঘর। দুই পর্বের সাজানো অনুষ্ঠানে প্রথম পর্বে ছিল বিশিষ্টজনদের আলোচনা ও সংবর্ধনা। এতে উপস্থিত ছিলেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। তিনি বলেন ‘ফকির আলম এমন মানুষ যিনি গানের মধ্য দিয়ে আকৃষ্ট করে। তার গান আমার কাছে ভাল লাগে। ভরাট কণ্ঠের অধিকারী এই শিল্পী আমাদের অভিভূত করে তেমনি দেশের মানুষের মধ্যে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। যখনই গণসঙ্গীত কথা উঠে, তখনই ভেসে উঠে ফকির আলমগীরের নাম। ‘কৃষ্ণচূড়ার রাঙা ভালোবাসা নিয়ে এসো এক নতুন পৃথিবীর গড়ি’ সেøাগান ধারণ করে প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী এই অনুষ্ঠানের সূচনা হয় গণসঙ্গীত সমন্বয় পরিষদের ৭০ জন শিল্পীর পরিবেশনায় জাতীয় সঙ্গীত ও উদ্বোধনী সঙ্গীত ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে’ পরিবেশনে মধ্য দিয়ে। এরপর অনুষ্ঠানে অতিথি ও সংবর্ধিত শিল্পীর সম্মানার্থে ‘আলো আমার আলো, আলোয় ভুবন ভরা’ গানের সঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করে স্পন্দন। অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বটি ছিল মূল আকর্ষণ। এ পর্বে ফকির আলমগীর তার সেরা ২০টি গান পরিবেশন করেন। এ সময় তিনি অনুভূতি প্রকাশ করে বলেন ‘আমার জীবনে অনেক গেয়েছি। তবে আজকের গানগুলো বিশেষ তাৎপর্যময়। কারণ এই গানগুলো আমার প্রাণ। শ্রোতাদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। সে জন্য পছন্দে শীর্ষে থাকা এমন গান দিয়ে অনুষ্ঠানটি সাজানো হয়েছে। দুরন্তের আয়োজনে বর্ণমালা উৎসব ॥ শিশু-কিশোর পত্রিকা দুরন্ত’র আয়োজনে শুক্রবার অনুষ্ঠিত হলো বর্ণমালা উৎসব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে আয়োজিত এ উৎসবে সহযোগিতা করে বাঘমামা।
×