ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ইন্টারপোলের মাধ্যমে দ্রুত ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ১৯ আসামি এখনও পলাতক

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার ১৯ আসামি এখনও পলাতক

শংকর কুমার দে ॥ বহুল আলোচিত একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার অভিযুক্ত ৫২ আসামির মধ্যে এখনও ১৯ আসামিই পলাতক। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ইন্টারপোলের মাধ্যমে বিদেশে অবস্থানরত পলাতক এসব আসামিকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। চলতি বছরের একুশে আগস্ট আসার আগেই এই মামলার বিচার কাজ শেষ করে যাতে রায় ঘোষণা করা হয় সেই জন্য উদ্যোগ নিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে বর্বরোচিত ও ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালানো হয় বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের জনসভায়। এতে মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং মরহুম রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমানসহ মোট ২৪ জন নেতাকর্মী নিহত ও অপর ৫০০ জন আহত হন। শেখ হাসিনা আহত হলেও ওই হামলায় অল্পের জন্য প্রাণে রক্ষা পান। আওয়ামী লীগ দলকে নেতৃত্বশূন্য করতে দলের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলের প্রথম সারির নেতাদের হত্যার উদ্দেশ্যে প্রধান বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে এ ঘৃণ্য হামলা চালানো হয়। বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময়ে মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য জজ মিয়া নাটক সাজানো হয়। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে এসে এই মামলার পুনঃতদন্ত শেষে ৫২ জনের বিরুদ্ধে চার্জশীট প্রদান করা হয়। এর মধ্যে ১৯ জন এখনও পলাতক। যে ১৯ জন আসামি বিভিন্ন দেশে পলাতক রয়েছে, তাদের গ্রেফতারে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। পলাতক ১৯ আসামিরা হচ্ছে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান আছেন লন্ডনে, বিএনপি নেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন কায়কোবাদ ব্যাংককে, হানিফ এন্টারপ্রাইজের মালিক হানিফ কলকাতায়, মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন আমেরিকায়, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ারদার কানাডায়, বাবু ওরফে রাতুল বাবু ভারতে, আনিসুল মোর্সালীন এবং তার ভাই মুহিবুল মুক্তাকীন ভারতের কারাগারে এবং মাওলানা তাজুল ইসলাম দক্ষিণ আফ্রিকায় রয়েছে। জঙ্গীনেতা শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, মাওলানা আবু বকর, ইকবাল, খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে বদর, মাওলানা লিটন ওরফে জোবায়ের ওরফে দেলোয়ার, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) উপ-কমিশনার (পূর্ব) এবং উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) ওবায়দুর রহমান এবং খান সাঈদ হাসান বিদেশে অবস্থান করছেন তাদের বেশির ভাগই পাকিস্তানে রয়েছে বলে ধারণা করছেন গোয়েন্দারা। পলাতক অভিযুক্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব হারিস চৌধুরীর অবস্থান জানা যায়নি। পলাতকদের মধ্যে মাওলানা তাজউদ্দিন ও বাবু কারাবন্দী বিএনপি সরকারের সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ভাই। পিন্টুও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় অভিযুক্ত। সর্বশেষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২১ আগস্টের ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি মামলায় ২০০৮ সালের ১১ জুলাই প্রথম চার্জশীট দাখিল করা হয়। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু এবং ২১ জন হুজি নেতাকর্মীসহ ২২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দাখিল করা হয়। পরে নতুন করে তদন্তের পরে ২০১২ সালের ৩ জুলাই অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) ৩০ জনকে অভিযুক্ত করে পৃথক দুটি সম্পূরক চার্জশীট দাখিল করে। দুটি মামলায় মোট অভিযুক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫২। অভিযুক্তদের মধ্যে অন্যতম সাবেক মন্ত্রী এবং জামায়াতে ইসলামী সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার দ্বাদশ বার্ষিকীর প্রাক্কালে জাতীয় সংসদকে জানিয়েছেন বিচার প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের ২২২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে। অপর সাক্ষীদের সাক্ষগ্রহণ চলছে। বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এই মামলাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে তা নষ্ট করার চেষ্টা করেছিল যা আইনানুগ প্রক্রিয়ায় সংশোধন করে বর্তমানে সঠিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। আশা করা যায়, তদন্ত কর্মকর্তাদের সাক্ষ্য শেষ হলে মামলার বিচার কার্য দ্রুতই সম্পন্ন হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গণমাধ্যমকে বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ এ মামলায় পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের পক্ষ থেকে সব প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইনজীবী এ্যাডভোকেট সৈয়দ রেজাউর রহমান ইতোমধ্যেই বলেছেন, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা দুটি। একটি হত্যা মামলা ও অপরটি বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলা। ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলা দুটির বিচার কাজ একসঙ্গে চলছে। হত্যা মামলায় মোট আসামি ৫২ জন ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের মামলায় আসামি ৪১ জন। ৫২ আসামির মধ্যে ৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৮ জন জামিনে, ২৫ জন কারাগারে আছেন। আসামিদের মধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। বাকি ১৮ পলাতক আসামির অনুপস্থিতিতেই বিচার কাজ চলছে। একই সঙ্গে পলাতকদের দেশে ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টাও অব্যাহত আছে।
×