ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পদ পাওয়ার জন্য চলছে জোর তদ্বির

উত্তর দক্ষিণ ভাগ করে গঠিত হচ্ছে বিএনপি মহানগর কমিটি

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

উত্তর দক্ষিণ ভাগ করে গঠিত হচ্ছে বিএনপি মহানগর কমিটি

শরীফুল ইসলাম ॥ উত্তর ও দক্ষিণ এই দুই ভাগে ভাগ করে ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের কাজ শেষ পর্যায়ে। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার অনুমোদনের পর শীঘ্রই এ কমিটি ঘোষণা করা হবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দেশে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু রাজধানীতে বিএনপিকে শক্তিশালী করতে পারে এমন নেতাদের প্রাধান্য দিয়ে কমিটি গঠন করা হচ্ছে। জানা যায়, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি হিসেবে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালামের নাম প্রায় চূড়ান্ত। তবে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়াও এ পদ পাওয়ার জন্য লবিং করছেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণে সাধারণ সম্পাদক হওয়ার তালিকায় যাদের নাম আলোচনায় আছে তারা হলেন, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী আবুল বাশার, ইউনুস মৃধা ও নবী উল্লাহ নবী। আর ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হতে পারে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা মেজর (অব) কামরুল ইসলাম অথবা এম এ কাইয়ুমকে। আবার বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়ালও এ পদ পেতে আগ্রহী বলে জানা গেছে। আর ঢাকা মহানগর উত্তরে সাধারণ সম্পাদক পদে যাদের নাম আলোচনায় রয়েছে তারা হলেন সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল আলীম নকী, আহসান উল্লাহ হাসান, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার ও মুন্সী বজলুল বসিত আঞ্জু। সূত্র মতে, শীঘ্রই ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হবে শুনে গুরুত্বপূর্ণ পদ প্রত্যাশী নেতারা লবিং-তদবির বাড়িয়ে দিয়েছেন। দলের সিনিয়র নেতাদের বাড়ি বাড়ি এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়েও লবিং করা হচ্ছে। আর হাইকমান্ডকে ম্যানেজ করতে বিভিন্ন মাধ্যমে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নেকনজরে থাকার চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া লন্ডন প্রবাসী বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের আশীর্বাদ পাওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানা গেছে। জানা যায়, কাকে কোন পদে দেয়া যায় এমন একটি তালিকা করে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ফাইল ওয়ার্ক করছেন। আর এ কাজে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের ক’জন সিনিয়র নেতাও খালেদা জিয়াকে সহযোগিতা করছেন। আর তারেক রহমানও তার ঘনিষ্ঠজনদের মাধ্যমে খোঁজখবর রাখছেন ঢাকা মহানগর বিএনপিতে কাকে কোন পদ দেয়া যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ঢাকা মহানগর বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের প্রতি দলের চেয়ারপার্সন ক্ষুব্ধ। কারণ, তিনি তাকে দিয়ে রাজধানীতে দল চাঙ্গা করার উদ্দেশ্যে সাবেক সভাপতি সাদেক হোসেন খোকাকে সরিয়ে মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়কের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু মির্জা আব্বাসের কর্মকা-ে তিনি হতাশ হয়েছেন। তাই দ্রুতই নতুন কমিটি ঘোষণা করতে চান খালেদা জিয়া। নতুন কমিটিতে বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস ও সদস্য সচিব হাবিব-উন নবী খান সোহেল এ দু’জনই বাদ পড়ছেন। এদিকে নতুন কমিটিতে থাকতে পারবেন না আঁচ করতে পেরে নিজেদের লোকদের প্রাধান্য দিয়ে আগেভাগেই মহানগরের বিভিন্ন ইউনিট কমিটি গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছেন বর্তমান কমিটির নেতারা। তবে তারা দলীয় হাইকমান্ডকে বোঝাতে চাচ্ছেন ঢাকা মহানগরের সর্বস্তরে কমিটি শক্তিশালী করতে কাজ করছেন তারা। তবে তাদের এ কাজকে ভালভাবে দেখছেন না বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির বাইরে থাকা নেতারা। ঢাকা মহানগর বিএনপির সাধারণ নেতাকর্মীরা দলের চেয়ারপার্সনের কাজে অভিযোগ করেছেন বর্তমান কমিটির নেতারা আন্দোলনে রাজপথেও থাকছেন না আবার সাংগঠনিক কার্যক্রমও এগিয়ে নিতে পারছেন না। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বর্তমান কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি ঘোষণা দেয়া হোক। তাদের এ অভিযোগ আমলে নিয়ে দ্রুত নতুন কমিটি ঘোষণার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানা গেছে। জানা যায়, ঢাকা মহানগর বিএনপিতে দীর্ঘদিন ধরেই মির্জা আব্বাস ও সাদেক হোসেন খোকার অনুসারীরা পরস্পরবিরোধী অবস্থানে থেকে দলীয় কর্মকা- চালিয়ে আসছে। মির্জা আব্বাস বর্তমান কমিটির আহ্বায়ক হওয়ার পর সাদেক হোসেন খোকার অনুসারীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। আর খোকা নিজেও চিকিৎসার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করতে থাকেন। এ অবস্থায় মির্জা আব্বাস তার অনুসারীদের নিয়ে দল চাঙ্গা করতে না পারায় ঢাকা মহানগর বিএনপির কর্মকা- ঝিমিয়ে পড়ে। ২০১৪ সালের ১৮ জুলাই মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও হাবিব উন নবী খান সোহেলকে সদস্য সচিব করে ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে ৬ মাসের মধ্যে সকল ইউনিট কমিটি পুনর্গঠন করে মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটির নির্দেশ দেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। কিন্তু সাদেক হোসেন খোকার অনুসারীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে মির্জা আব্বাস আর সংগঠনকে এগিয়ে নিতে পারেননি। এ ছাড়া বিভিন্ন মামলার আসামি হওয়ায় নিজেকে সেভ করতে তিনি অধিকাংশ সময়ই দলীয় কর্মকা- থেকে দূরে থাকেন বলে বিএনপি নেতাকর্মীরা বলাবলি করছেন। জানা যায়, বিএনপি চেয়ারপার্সনের নির্দেশনা অনুযায়ী গত কয়েক মাস ধরেই ঢাকা মহানগর কমিটি গঠনের কাজ করছেন দলের সিনিয়র এবং মহানগরের শীর্ষ নেতারা। তারা মেহানগর কমিটির পাশাপাশি সব থানা কমিটির দু’টি খসড়া তালিকা তৈরি করে বিএনপি চেয়ারপার্সনের কাছে জমা দিয়েছেন। মহানগরীর গুরুত্বপূর্ণ থানাগুলোর নেতৃত্বের জন্য যাদের বাছাই করা হয়েছে, তাদের মধ্যে অধিকাংশই সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর। এ ছাড়াও আন্দোলন সংগ্রামে দলীয় কর্মকা-ে যারা সক্রিয় ছিলেন তাদের প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে। তবে কমিটিতে শেষ পর্যন্ত কাদের নাম থাকবে আর কারা বাদ পড়বেন তা নির্ভর করছে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপর। এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, দেশব্যাপী সর্বস্তরে দল গোছানোর অংশ হিসেবে ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি গঠনের কাজ এগিয়ে চলেছে। শীঘ্রই ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। তবে এবার যোগ্য ও অভিজ্ঞদের দিয়ে ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি করা হবে।
×