ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল, বেড়েছে জীবন যাত্রার মান

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল, বেড়েছে জীবন যাত্রার মান

তপন বিশ্বাস ॥ অতীতের তলাবিহীন ঝুড়ি হিসেবে খ্যাত বাংলাদেশ এখন স্বাবলম্বী দেশে পরিণত হয়েছে। দেশটি এখন বিশ্ব উন্নয়নের রোল মডেল। বিতাড়িত করেছে ক্ষুধা, দারিদ্র্য। শিক্ষার হার বেড়েছে ঈর্ষণীয়ভাবে। রাস্তা-ঘাট, রেমিটেন্সসহ সব ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের শতভাগ বেতন বাড়ানোসহ একের পর এক উন্নয়ন কর্মসূচীর কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। এমনকি বিশ্বব্যাংকের সহায়তা ছাড়াই পদ্মা সেতু মতো প্রকল্পের কার্যক্রমও দ্রুত গতিতে এগিতে চলেছে। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক সিদ্ধান্তে বদলে গেছে গ্রামীণ জনপদের ভাবধারা। বেড়েছে জীবনযাত্রার মান। ব্যক্তিগত পর্যায়ে মানুষ হয়ে উঠেছে স্বাবলম্বী। এক যুগ আগেও বাংলাদেশের গ্রাম অঞ্চলগুলোতে অর্ধাহারে, অনাহারে দিন কাটাত বড় একটি গোষ্ঠী। অধিকাংশ ঘরবাড়ি ছিল মাটির দেয়াল অথবা পাটকাঠি বা বাঁশের বেড়া আর খড়ের ছাউনিতে তৈরি। বর্তমানে গ্রামের সেই চিত্র আর নেই। অধিকাংশ বাড়িঘর দাঁড়িয়ে আছে ইট সিমেন্ট অথবা টিনের ওপরে। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, অশিক্ষা গ্রামাঞ্চল থেকে নির্মূলের পথে। যুদ্ধবিধ্বস্ত, দারিদ্র্যপীড়িত আর প্রকৃতির ভয়াবহ রোষের শিকার বাংলাদেশ স্বাধীনতা প্রাপ্তির ৪৬ বছরের প্রান্তে এসে অনেক হিসাব-নিকাশ ভবিষ্যদ্বাণী বদলে দিয়েছে। বদলে গেছে তলাহীন ঝুড়ির কথিত ভাবমূর্তিও। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা অর্জনের সময় কেবল অর্থনীতি-ব্যবসা বাণিজ্যেই নয়, আর্থ-সামাজিক নানা সূচকেই অনেক পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। স্বাধীনতার মাত্র চার বছরের মাথায় চরম দুর্ভিক্ষে অসংখ্য মানুষ মারা যায়। আর স্বাধীনতার পর গত চার দশকে বিদেশী রাষ্ট্রের শোষণমুক্ত বাংলাদেশ বেশ পুষ্ট হয়েছে। অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য ও মানবসম্পদ উন্নয়নে বহু পথ এগিয়েছে বাংলাদেশ। পদ্মা সেতুর মতো বৃহৎ প্রকল্প কোন ধরনের বৈদেশিক সহায়তা ছাড়াই নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছে। স্বাধীন দেশে ১৯৭২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে প্রথম যে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছিল, সেখানে বাংলাদেশ নিয়ে হতাশার কথাই ছিল বেশি। বিশ্বব্যাংক বলেছিল, সবচেয়ে ভাল পরিস্থিতিতেও বাংলাদেশ একটি নাজুক ও জটিল উন্নয়ন সমস্যার নাম। দেশের মানুষরা গরিব। মাথাপিছু আয় ৫০ থেকে ৭০ ডলার, যা গত ২০ বছরেও বাড়েনি। একটি অতি জনবহুল দেশ (প্রতি বর্গমাইলে জনসংখ্যা প্রায় এক হাজার ৪০০) এবং জনসংখ্যা আরও বাড়ছে (বছরে ৩ শতাংশ হারে জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধি) এবং দেশটির মানুষ অধিকাংশই নিরক্ষর (সাক্ষরতার হার ২০ শতাংশের কম)। স্বাধীনতার ঠিক পাঁচ বছর পর ১৯৭৬ সালে নরওয়ের অর্থনীতিবিদ জাস্ট ফ্যালান্ড এবং ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জে আর পারকিনশন ‘দ্য টেস্ট কেস ফর ডেভেলপমেন্ট’ নামের একটি গবেষণামূলক বইয়ে লিখেছিলেন, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে যদি এই দেশটি উন্নতি করতে পারে, তাহলে নিঃসন্দেহে বলা যায় পৃথিবীর যে কোন দেশ উন্নতি করতে পারবে। এর আগে ১৯৭৪ সালের ৩০ অক্টোবর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশকে ‘বটমলেস বাস্কেট’ বা ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ বলে অভিহিত করেছিলেন। সেই দেশের বর্তমান পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বিগত বছরের আগস্টে ঢাকা সফরে এসে বলে গেছেন, বাঙালী জাতির মেধা, পরিশ্রম আর একাগ্রতার মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যেতে একসঙ্গে কাজ করতে চায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অথচ এখন আস্থা ভিন্ন। বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রধান অর্থনীতিবিদ হিসেবে কৌশিক বসু গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ সফরে এসে বাংলাদেশের অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন। বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। ৬ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা বিরল বলেও মন্তব্য করেন তিনি। হেনরি কিসিঞ্জারসহ সব সমালোচকদের ভবিষ্যদ্বাণীকে মিথ্যা প্রমাণ করে বাঙালী জাতি সোনার বাংলা গড়ে তুলেছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে। মাতৃ স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ও শিশুমৃত্যুর হার কমিয়ে জাতিসংঘের স্বীকৃতি অর্জন করেছে। নারীর ক্ষমতায়নে বিশ্বের কাছে রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম জাতীয় বাজেট দেয়া হয় ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে। তৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ সেই সময় ৭৮৬ কোটি টাকার বাজেট দেন। ধীরে ধীরে সেই বাজেটের আকার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকায়। মোট দেশজ উৎপাদন, বিনিয়োগ, রাজস্ব, রফতানি আয়, রেমিটেন্স, রিজার্ভ সব ক্ষেত্রেই ঈর্ষণীয় সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুদ্ধবিধ্বস্ত ও দুর্ভিক্ষের মধ্য থেকেই বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতির সব সূচকে উন্নতি হয়েছে। তবে সার্বিক অর্থনীতির আরও উন্নতি করা সম্ভব ছিল। বিশেষ করে বিনিয়োগ ও রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে আরও উন্নতি হওয়া প্রয়োজন। বেশ কয়েক বছর ধরে বিনিয়োগে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি হলে অর্থনীতি অনেক দূর এগিয়ে যেত। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ মির্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, অর্থনীতির উন্নতি হবে এটাই স্বাভাবিক। তবে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যেভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে তা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। এক সময় যারা বাংলাদেশকে নিয়ে নানা সমলোচনা করত তারাই এখন প্রশংসা করছে। তারপরও বলতে হচ্ছে দেশের অর্থনীতির সূচকগুলোর আরও উন্নতি হওয়া উচিত ছিল। বিশেষ করে বিনিয়োগ, রফতানি ও রেমিটেন্স খাতে আরও অগ্রগতি হওয়া উচিত। পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক কর্মকর্তা আহসান এইচ মনসুর বলেন, দেশের অর্থনীতির সার্বিক অবস্থা বেশ উন্নতি হয়েছে। প্রবৃদ্ধি ভাল হচ্ছে। আর প্রবৃদ্ধির সঙ্গে কর্মসংস্থানের সম্পর্ক রয়েছে। যে কারণে কর্মসংস্থান পরিস্থিতিও বেশ উন্নতি হয়েছে। চলতি অর্থবছরে (২০১৬-১৭) শেষে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। তবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের মতে, অর্থবছর শেষে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ৩ শতাংশ অর্জিত হবেই হবে। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গত সাত অর্থবছর ধরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি বেশ ভাল অবস্থা রয়েছে। সর্বশেষ ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে প্রবৃদ্ধি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশে। এর আগের টানা পাঁচটি অর্থবছর প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপরে ছিল। এরমধ্যে ২০১০-১১ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৬ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ এবং ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। আর ২০০৯-১০ অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শুরু হয়েছিল মাইনাস ১৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ থেকে। ১৯৭৩ সালে তা দাঁড়িয়েছিল ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। পরের বছর ১৯৭৪ সালে প্রবৃদ্ধি হয় ৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৪৬৬ ডলার। ১৯৭১ সালে মাথাপিছু আয় ছিল ৫০ থেকে ৭০ ডলার। বর্তমান সরকার ক্ষমতা নেয়ার সময় ২০০৯ সালে ছিল ৭৫৯ ডলার। বর্তমান সরকারের এ আমলে মাথাপিছু এ আয় বেড়েছে ধারাবাহিকভাবে। ২০১০ সালে ৮৪৩ ডলার, ২০১১ সালে ৯২৮ ডলার, ২০১২ সালে ৯৫৫ ডলার, ২০১৩ সালে ১ হাজার ৫৪ ডলার, ২০১৪ সালে ১ হাজার ১৮৪ ডলার এবং ২০১৫ সালে ১ হাজার ৩১৬ ডলার মাথাপিছু আয় হয়। গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংকে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ১৫৪ কোটি ইউএস ডলার। সত্তরের দশকে দেশে রিজার্ভ ছিল ১০০ কোটি ডলারেরও কম। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৫২ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) তথ্যে দেখা গেছে, গত ডিসেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সাধারণ মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশে, যা তার আগের মাসে ছিল ৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য খাতে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে হয়েছে ৫ দশমিক ৪১ শতাংশ। আর খাদ্যবহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি কমে হয়েছে ৫ দশমিক ৩৩ শতাংশে। ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষে ১২ মাসের গড় ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছিল ৫ দশমিক ৯২ শতাংশ। জিডিপির অনুপাতে বর্তমানে বেসরকারী খাতের বিনিয়োগ ২২ দশমিক ০৭ শতাংশ। আর সরকারী খাতে ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। ১৯৭২ সালে মাত্র ৫৭৭ কোটি টাকার বিনিয়োগ ছিল। এখন সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ কোটি টাকার ওপরে। স্বাধীনতার ৪৪ বছরে বাংলাদেশে এই বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় ৮শ’ গুণ। বিদেশী বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের জন্য সম্ভাবনাময় ১৮ দেশের তালিকার মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বাজেট ঘোষণা করা হয় ১৯৭২-৭৩ সালে। ওই অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৮৫ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৩ হাজার ১৫২ কোটি টাকা। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে আয়কর, শুল্ক ও মূসক (ভ্যাট) খাতে ৯ হাজার ৫০৯ কোটি টাকার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৯ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে। এই আয় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৮৮ কোটি টাকা বা প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরের মূল বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় এক লাখ ৭৬ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। পরে তা কমিয়ে এক লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়। অর্থবছর শেষে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৫ হাজার ৫২৮ কোটি টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশে ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে রফতানি আয় ছিল মাত্র ৩৪ কোটি ৮৩ লাখ ইউএস ডলার। চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) প্রথম ৫ মাসে (জুলাই-নবেম্বর) রফতানি খাতে আয় হয়েছে ১ হাজার ৩৬৯ কোটি ৯ লাখ ৭০ হাজার ইউএস ডলার। তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৩০ শতাংশ বেশি। আগের বছরের তুলনায় রফতানি আয় বাড়লেও চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে রফতানি আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তা অর্জিত হয়নি। চলতি অর্থবছরের জুলাই-নবেম্বর সময়ে রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৪২৮ কোটি ৭০ লাখ ইউএস ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৫ মাসে প্রবাসীরা দেশে রেমিটেন্স পাঠিয়েছে ৫২০ কোটি ডলার। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল ১ হাজার ৪৯৩ কোটি ডলার। বর্তমানে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১ কোটি প্রবাসী বাংলাদেশী রয়েছেন। বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রফতানি শুরু হয় ১৯৭৬ সালে। সে সময় মাত্র ৬ হাজার ৮৭ শ্রমিক বিদেশে গমন করে। রেমিটেন্সের পরিমাণ ছিল মাত্র ৩৫ কোটি টাকা। ওই সময় মূলত সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, কাতার, ওমান, বাহরাইন, লিবিয়ায় জনশক্তি রফতানি হয়। ১৯৭৭ সালে ১৫ হাজার ৭২৫ জন শ্রমিক প্রবাসে গমন করে এবং তাদের পাঠানো রেমিটেন্স ছিল ১২৫ কোটি টাকা। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আকার ছিল ৩১৮ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের (২০১৬-১৭) জন্য ১ লাখ ১০ হাজার ৭০০ কোটি টাকার মূল এডিপি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সরকারী অর্থায়ন থেকে যোগান দেয়া হবে ৭০ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। আর বিদেশী সহায়তা পাওয়া যাবে ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরে সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে ব্যয় ১২ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) অর্থায়নে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতার প্রবণতা ক্রমহ্রাসমান হলেও এখনও উল্লেখযোগ্য অংশ বৈদেশিক সাহায্য হতে নির্বাহ করা হয়। ২০০৯-১০ অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল ৩০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরমধ্যে বৈদেশিক সাহায্যের মোট পরিমাণ ছিল ১২ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা, যা মোট এডিপি আকারের ৪২ দশমিক ১১ শতাংশ। গত অর্থবছরে (২০১৫-১৬) এডিপির আকার ছিল ১ লাখ ৯৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সাহায্যের মোট পরিমাণ ছিল ৩৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, যা মোট এডিপি আকারের ৩৪ দশমিক ১৬ শতাংশ। ১৯৭২ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৭০ ভাগ। চার দশকের ব্যবধানে তা কমে ১৮ দশমিক পাঁচ শতাংশে নেমে এসেছে। এ সময়ে চরম দারিদ্র্যের হার ৫০ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশে নেমে এসেছে।
×