ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

নিত্যপণ্যের বাজার অনেকটাই স্থিতিশীল

সিন্ডিকেটের কারসাজিতে কমছে না গরুর মাংসের দাম

প্রকাশিত: ০৫:১৫, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সিন্ডিকেটের কারসাজিতে কমছে না গরুর মাংসের দাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজির কারণে কমছে না গরুর মাংসের দাম। রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে মানভেদে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৪৯০-৫৪০ টাকায়। বেড়েছে খাসির মাংসের দামও। ৬৫০-৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি খাসির মাংস। গরু ও খাসির প্রভাব পড়েছে মুরগির বাজারেও। এখন ব্রয়লার ও দেশী মুরগির দাম বেড়ে গেছে। নিত্যপণ্যের বাজারে চাল, ডাল, আটা, ভোজ্যতেল এবং চিনির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। দাম কমে প্রতিকেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২-২৪ টাকায়। দাম বেড়ে ২০০-২১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি আমদানিকৃত রসুন। বাজারে উঠতে শুরু করেছে গ্রীষ্মকালীন সবজি। পটল, চিচিঙ্গা, বরবটি ও করল্লা পাওয়া যাচ্ছে কাঁচা বাজারে। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে নিত্যপণ্যের দরদামের এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এদিকে, গত এক বছরে ভোগ্যপণ্যের বাজারে মাংসের দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। কেজিতে প্রায় ১২০-১৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে গরুর মাংসের দাম। এক বছর আগে রাজধানীর বাজারগুলোতে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৩৮০-৪০০ টাকা কেজি দরে। সরকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্যমতে, গত এক বছরে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে ২৪ শতাংশ এবং ২৮ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে খাসির মাংস। ব্রয়লার মুরগির দাম অপরির্তিত থাকলেও দেশী মুরগির দাম বেড়েছে ৮ শতাংশ পর্যন্ত। এদিকে, গরুর মাংসের দাম বাড়ার পেছনে মাংস ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে গরু আমদানিকারক ও বিক্রেতাদের কারসাজি রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গরু, মহিষ, ছাগলসহ গবাদি পশুর দাম বাড়ার পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের বিরোধের জেরেই বাজারে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। আর ভারত থেকে আনা গরুর দাম বাড়ছে হুন্ডি সিন্ডিকেটের অপতৎপরতার কারণে। এছাড়া দেশের সবচেয়ে বড় স্থায়ী পশুর হাট গাবতলীকেন্দ্রিক অন্তত অর্ধশত হুন্ডি ব্যবসায়ী আছে, যারা গরুর ব্যাপারিদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভারতে পাচার করছে। গাবতলীর হাটে নির্ধারিত খাজনা বা হাসিলের চেয়ে বেশি টাকা আদায় করছে ইজারাদার। এ জন্য রসিদও দেয়া হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। যদিও মাংস ব্যবসায়ী হিসেবে তাদের কম টাকার খাজনা দেয়ার সুবিধা পাওয়ার কথা। ইজারাদার খাজনা বেশি হারে আদায় করলেও আগে চামড়া বিক্রি করে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারত ব্যবসায়ীরা। এখন চামড়ার বাজারে মন্দার কারণে সে পথও বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে পশু কেনার পর জবাই করে মাংস বিক্রির বদলে ব্যাপারিদের মতো জীবিত পশু সাধারণ ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছে মাংস ব্যবসায়ীরা। এদিকে, এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে গাবতলী হাটের ইজারাদার সিটি কর্পোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স ছাড়া মাংস ব্যবসায়ী সুবিধায় (কম খাজনায়) কাউকে গরু কিনতে দিচ্ছে না। হুন্ডি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটও ইজারাদারের পক্ষ নিয়েছে। এ অবস্থায় তাদের কাছে কোণঠাসা হয়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল মাংস ব্যবসায়ীরা। যদিও রাজধানীতে পাঁচ হাজারেরও বেশি মাংস ব্যবসায়ীর মধ্যে অনেকেরই ট্রেড লাইসেন্স নেই। পারিবারিক ব্যবসার লাইসেন্স পরে নবায়ন করেনি অনেকে। এসব কারণে বাজারে গরুর মাংসের দাম বেড়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে মাংস ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে এসব সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম। ওই সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হবে জানালেও দৃশ্যমান এখনও কিছু করা হয়নি। ফলে মাংসের দাম বেড়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্রুত মাংস ও গরু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়া সম্ভব না হলে আগামী রমজানে গরুর মাংসের দাম নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে, বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি পাওয়া যাচ্ছে। দাম একটু বেশি, তবে শীতকালীন সবজির সরবরাহ থাকায় স্থিতিশীল রয়েছে সবজির বাজার। বাজারে প্রতিকেজি কাঁচা মরিচ ৫০ টাকা, সাদা বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, কালো বেগুন ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়, প্রতিকেজি শিম ৩০-৩৫ টাকা। এছাড়া প্রতিকেজি করলা ৪৫ টাকা, শসা ৪০-৪৫ টাকা, আলু ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি পটল ৯০ টাকা, ঢেঁড়স ১০০ টাকা, ঝিঙ্গা ৮০ টাকা, চিচিঙ্গা ৭০ টাকা, কাকরোল ৫০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা এবং পেঁপে ১৫ টাকা থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
×