ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প বাস্তবায়নে দিল্লীর মনোভাব ইতিবাচক

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প বাস্তবায়নে দিল্লীর মনোভাব ইতিবাচক

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প বাস্তবায়নে ঢাকার কাছে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে দিল্লী। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে খুব শীঘ্রই বাংলাদেশ ও ভারতের ওয়ার্কিং গ্রুপ আলোচনায় বসবে। গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত ওয়ার্কিং গ্রুপ একটি উপায় খুঁজে বের করবে। মন্ত্রণালয় সূত্র এসব তথ্য জানিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর দুই দিন সফর শেষে শুক্রবার ঢাকা ত্যাগ করেছেন। ঢাকা সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে। তবে দুই পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠকে গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্প বাস্তবায়নের গুরুত্ব তুলে ধরা হয় ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের কাছে। তবে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে ভারত। গঙ্গা ব্যারাজ প্রকল্পের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ রয়েছে। সে ওয়ার্কিং গ্রুপ শীঘ্রই বৈঠক করে এ বিষয়ে একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্তে আসবে বলে আশা করছে ঢাকা। সূত্র জানায়, দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবের মধ্যে বৈঠকে তিস্তা চুক্তির বিষয়টিও আলোচনা হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন হবে কি-না সেটা নিয়ে বৈঠকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এ লক্ষ্যে উভয়পক্ষের মধ্যে আরও আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হবে। ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের বৈঠকে উভয় দেশের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত নিবিড় সহযোগিতার সম্পর্ক আরও দৃঢ় করার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করা হয়। এ বিষয়ে একটি চুক্তি করারও প্রস্তাব রয়েছে ভারতের। এর আগে গত বছরের নবেম্বর মাসের শেষদিকে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিকর ঢাকা সফর করেন। সে সময় তিনি বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রতিরক্ষাবিষয়ক সহযোগিতার ক্ষেত্রে বড় ধরনের অগ্রগতির বিষয়ে জোর দেন। ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নতুন প্রতিরক্ষা সহযোগিতা কাঠামোর বিষয়ে একটি প্রস্তাব দেন। এ সহযোগিতা কাঠামোর অংশ হিসেবে সামরিক সরবরাহ বাড়ানো, প্রযুক্তি হস্তান্তর, প্রশিক্ষণ ও যৌথ মহড়ার আয়োজন করা হবে। দুই পররাষ্ট্র সচিবের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফরের আলোচ্যসূচী, সফরের তারিখ ও কর্মসূচী নিয়ে আলোচনা হয়। এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আমরা আশা করি একটি সফল সফর হবে, শুরুটা খুব ভাল হয়েছে। তবে এ সফরে কতগুলো চুক্তি হতে পারে জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বেশকিছু চুক্তি হবে। কতগুলো চুক্তি হবে সেটি এখন বলা যাচ্ছে না। তবে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক চুক্তি হবে। জয়শঙ্করের ঢাকা সফরের সময় আন্তঃযোগাযোগের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। নতুন নতুন ক্ষেত্রে দুই দেশ পরস্পরকে কিভাবে আরও সহযোগিতা করতে পারে, সেটাও আলোচনায় প্রাধান্য পায়। জয়শঙ্করের ঢাকা সফরের সময় জ্বালানি সহযোগিতা, কানেক্টিভিটি, বাণিজ্য, সীমান্ত বিষয়, কনস্যুলার বিষয়, রেলওয়ে, শিপিং ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। জয়শঙ্করের এ সফরের বিষয়ে ঢাকার ভারতায়ী হাইকমিশন এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ভারতের পররাষ্ট্র সচিব তার সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে দেখা করেন। পররাষ্ট্র সচিব প্রধানমন্ত্রীর কাছে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের ও এ অঞ্চলের সাম্প্রতিক উন্নয়নের কথা উল্লেখ করেন। তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাব্য ভারত সফরের প্রস্তুতিমূলক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। ভারতীয় হাইকমিশন আরও জানায়, উভয় দেশের পররাষ্ট্র সচিব দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার কথা পুনরায় উল্লেখ করেছেন। দুই পক্ষই ২০১৫ সালের জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকালে গৃহীত সিদ্ধান্তের চমৎকার বাস্তবায়নের বিষয়ে প্রশংসা করেন। উভয়পক্ষই নিরাপত্তা ও সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, ব্যবসা ও বাণিজ্য, বিদ্যুত, জ্বালানি, নৌ, রেলপথ ইত্যাদি দ্বিপক্ষীয় বিষয়ের সাম্প্রতিক বৈঠকগুলোতে গৃহীত সিদ্ধান্তের পর্যালোচনা করেন। উভয় পররাষ্ট্র সচিবই আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ে পারস্পরিক স্বার্থ নিয়ে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যক্ত করেন। বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর জাতীয় সংসদ ভবনে শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকের পর প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেস সচিব এম নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, এপ্রিলের প্রথমার্ধে প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে যাচ্ছেন। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর করার কথা ছিল ২০১৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর। তবে অনিবার্য কারণে ওই সফর স্থগিত করা হয়। ১০ ডিসেম্বর ভারতের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম জে আকবর ঢাকায় এসে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে শেখ হাসিনা ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে ভারত সফরের আগ্রহ প্রকাশ করেন। কিন্তু অনিবার্য কারণে তখনও সফরটি স্থগিত করা হয়। পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের আমন্ত্রণে জয়শঙ্কর বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসেন। ঢাকায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর সেদিনই সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হকের সঙ্গে বৈঠকে বসেন জয়শঙ্কর। সে সময় দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিব দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার বিভিন্ন দিক নিয়ে পর্যালোচনা করেন। তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রস্তাবিত ভারত সফর সম্পর্কেও আলোচনা করেন। বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে এক নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন জয়শঙ্কর। ভারত-চীনের কৌশলগত সংলাপে অংশ নেয়ার লক্ষ্যে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব চীনে গিয়েছিলেন। প্রথমবারের মতো এ সংলাপের আয়োজন করে ওই দুই দেশ। সেখান থেকে তিনি ঢাকায় আসেন। সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর শুক্রবার সকাল সোয়া দশটায় জেট এয়ারযোগে দিল্লীর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। এর আগে গত বছরের ১০ মে দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসেছিলেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর। সে সময় দুই দেশের মধ্যে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
×