ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

স্মার্টকার্ড কবে পাবে? সারাদেশে দিতে হবে ৯ কোটি

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

স্মার্টকার্ড কবে পাবে? সারাদেশে দিতে হবে ৯ কোটি

শাহীন রহমান ॥ স্মার্টকার্ড বিতরণে তেমন গতি নেই। চুক্তি অনুযায়ী আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সারাদেশে ৯ কোটিরও বেশি ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেয়ার কথা। অথচ এখনও রাজধানীতেই বিতরণ শেষ করতে পারেনি। রাজধানীর ৫০ লাখ ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দিতে গত অক্টোবর থেকে শুরু হয়েছে বিতরণ। অথচ গত ৫ মাসে রাজধানীতে স্মার্টকার্ড বিতরণ হয়েছে মাত্র ৮ লাখের কিছু বেশি। কমিশন কর্মকর্তারা বলছেন, রাজধানীতে বিতরণ শেষ হওয়ার পর অন্যান্য সিটি কর্পোরেশনে স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু হবে। এরপর জেলা শহরে বিতরণ শেষে উপজেলা ইউনিয়ন পর্যায়ে স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে। কিন্তু গত ৫ মাসে রাজধানীর ৫ ভাগের এক ভাগের মধ্যে বিতরণ শেষ করতে পারেনি। গত অক্টোবরে রাজধানীর রমনা থানা ও উত্তরা থানায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু করে নির্বাচন কমিশন। মূলত, থানা নির্বাচন অফিসের মাধ্যমে ওয়ার্ডভিত্তিক এ বিতরণের কাজ চলছে। থানা নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে রাজধানীতে ৪র্থ ও পঞ্চম পর্যায়ে স্মার্টকার্ড বিতরণ চলছে। এর মধ্যে চতুর্থ পর্যায়ের বিতরণ শেষ হবে মার্চ মাসের দিকে। অপরদিকে পঞ্চম পর্যায়ে বিতরণ শুরু হয়েছে এ মাসের ১৯ তারিখ থেকে। এর বিতরণ কাজ শেষ হবে জুন মাসের দিকে। ঢাকা জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ শাহ আলম জানিয়েছেন, পঞ্চম দফায় স্মার্টকার্ড রাজধানীর উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ১৫ ওয়ার্ডে বিতরণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে উত্তর সিটির ১৫, ১৬, ১৭, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৩৫ ও ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড এবং দক্ষিণের ৪৮, ৫০, ৫১, ৫২, ৫৩ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে পর্যায়ক্রমে ৫ মে পর্যন্ত বিতরণ চলবে। এছাড়া ষষ্ঠ পর্যায়ে স্মার্টকার্ড বিতরণের জন্য বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছে। আগামী ৫ মার্চ থেকে এ দফায় স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু হবে। এ দফায় ঢাকা দক্ষিণের ১৩, ২৪, ২৫, ৪৯, ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে মধ্য জুন পর্যন্ত স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে। এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি প্রচার করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এলাকায় মাইকিং ও জনপ্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে নানাভাবে প্রচারণা চালানোর কথা জেলা নির্বাচন অফিস থেকে জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে যেখানে সারাদেশে ৯ কোটিরও বেশি ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড দেয়ার কথা সেখানে এখনও রাজধানী ঢাকাতেই বিতরণ কাজ শেষ করতে পারেনি। তারা বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রাজধানীতে এর বিতরণ কাজ শেষ হবে কি না, তা নিয়েই সন্দেহ রয়েছে। সরেজমিনে কয়েকটি কেন্দ্রে পরিদর্শনে দেখা গেছে, সকাল ৯টায় থেকে স্মার্টকার্ড বিতণের কথা থাকলেও মূলত পরে বিতরণ করা হচ্ছে। এ নিয়ে অভিযোগ করেও সমাধান হয়নি। তবে কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, কারিগরি ত্রুটি ও ১০ আঙ্গুলের ছাপ নেয়ার কারণে বিতরণে বিলম্ব হচ্ছে। কমিশনের কয়েক কর্মকর্তা জানান, ঢাকাতে এখনও বিতরণ কাজ সম্পন্ন করা যায়নি। মফস্বলের এবং ঢাকার বাইরে বিতরণে আরও বেশি সময় প্রয়োজন হবে। এ কারণে সঠিক সময়ে সারাদেশে ৯ কোটিরও বেশি ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেয়া সম্ভব নাও হতে পারে। তারা বলেন, সঠিক প্রচারের অভাবেই ভোটারদের কার্ড সংগ্রহে তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। ফলে সময় বেশি লাগছে। এছাড়া অনেকে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করে ঢাকা ছেড়ে চলে গেছেন, কেউবা আবার কর্মস্থলে থাকায় যথাসময়ে বিতরণ কেন্দ্রে আসেননি। তাই ঢাকার বিতরণ কার্যক্রম চলছে ঢিমেতালে। বিতরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, যারা কেন্দ্রে গিয়ে স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করতে পারেনি তাদের নির্বাচন অফিসে গিয়ে স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করতে হবে। তবে এ জন্য মাঠ পর্যায়ের বিতরণ শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্মার্টকার্ড পাওয়া না গেলে এ জন্য আবার বিতরণ শেষ হওয়া পর্যন্ত কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে। কয়েক ভুক্তভোগী অভিযোগ করেন ভোটার আইডি কার্ড সংশোধন, নাম, ঠিকানা ভোটার এলাকা পরিবর্তনের কারণে তাদের স্মার্টকার্ড দেয়া হয়নি। এ জন্য তাদের স্মার্টকার্ডও নির্বাচন অফিসে গিয়ে সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। আবার যারা আইডি কার্ড সংশোধন ও ভোটার এলাকা পরিবর্তন করেছেন স্মার্টকার্ডে তাদের ভুল রয়ে গেছে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মতিঝিল থানার এক কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর ঢাকার ৫০ লাখ ভোটারের স্মার্টকার্ড অনেক আগেই ছাপা হয়েছে। ফলে যারা পরে নাম-ঠিকানা সংশোধন করেছেন তাদের স্মার্টকার্ডে যেমন ভুল রয়েছে। একই কারণে তারা সংশোধিত ঠিকানায় গিয়েও স্মার্টকার্ড পাননি। তিনি বলেন, স্মার্টকার্ড বিতরণ শেষ হলে আগামী বছর থেকে ভুল সংশোধন করা হবে। তবে জরুরী ভিত্তিতে কেউ স্মার্টকার্ডে ভুল সংশোধন করতে চাইলে তাকে আপাতত স্মার্টকার্ড দেয়ার পরিবর্তে লেমিনেটিং করা জাতীয় পরিচয়পত্র দেয়া হবে। সংশোধনের কাজ শুরু হলে তখন এটা পরিবর্তন করে স্মার্টকার্ড দেয়া হবে। তিনি জানান, বিতরণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্মার্টকার্ড সংশোধন করা হচ্ছে না। আবার যারা স্মার্টকার্ড ছাপা হওয়ার পরে ভোটার এলাকা পরিবর্তন করেছেন তাদের আগের এলাকা থেকেই স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করতে হবে। সম্প্রতি সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে সংসদ কার্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আনিসুল হক এখন পর্যন্ত ৭ লাখ ৪৮ হাজার ৪২২ নাগরিককে স্মার্টকাড দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এ কর্মসূচীর আওতায় এখনও দেশের বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ে স্মার্টকার্ড বিতরণ শুরু হয়নি। বর্তমানে প্রথম পর্যায়ে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে স্মার্টকার্ড বিতরণ চলছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে দেশের অন্যান্য সিটি কর্পোরেশন এলাকায় স্মার্টকার্ড বিতরণের পরিকল্পনা রয়েছে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে দেশের অন্যান্য এলাকায় স্মার্টকার্ড বিতরণ করা হবে। তবে ইসি সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ জানিয়েছেন, ঢাকায় স্মার্টকার্ড বিতরণ কার্যক্রমের সিংহভাগ কাজ শেষ। শীঘ্রই ঢাকার বাইরে বিতরণে যাবে ইসি। কম সময়ে বেশি কার্ড বিতরণের লক্ষ্য বিবেচনায় নিয়ে কাজ এগিয়ে নেয়া হবে। গত বছরের ২ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির হাতে স্মার্টকার্ড তুলে দেয়ার মধ্য দিয়ে স্মার্টকার্ড বিতরণে কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। এর পরদিন ঢাকার রমনা ও উত্তরা এবং কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলায় পরীক্ষামূলকভাবে কার্ড বিতরণে যায় নির্বাচন কমিশন। সে সময় ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে ৫০ লাখ ভোটারকে স্মার্টকার্ড সরবরাহের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে সংস্থাটি। ইসির কর্মকর্তারা বলেন, গ্রামে স্মার্টকার্ড বিতরণে আরও বেশি সময় লাগতে পারে। কর্মজীবী অনেক গ্রামবাসীই এখন আর গ্রামে থাকেন না। তাই স্মার্টকার্ড বিতরণে আরও দেরি হবে। তিনি বলেন, বিতরণে বিকল্প পদ্ধতি চিন্তাভাবনা না করলে সঠিক সময়ে সবার হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে না। তিনি বলেন, স্মার্টকার্ড বিতরণে চোখের আইরিশ ও ১০ আঙ্গুলের ছাপ নেয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিতে নিজে হাজির থেকে স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এ কারণে একজনের কার্ড অন্য জনের কাছে দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। দেশে ৯ কোটি ভোটারের মধ্যে ১৮ মাসের মধ্যে স্মার্টকার্ড দিতে ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ২০১৫ সালের ১৪ জানুয়ারি চুক্তি করে ইসি। ২০১৬ সালের জুনে মেয়াদ শেষ হলেও কারিগরি ত্রুটির কারণে চার মাস উৎপাদন বন্ধ থাকায় স্মার্টকার্ড ছাপানোর কাজ শেষ করতে বিলম্ব হয়। তবে রাজধানীর ৫০ লাখ ভোটারের স্মার্টকার্ড ছাপানোর কাজ আগে শেষ হওয়ায় অক্টোবর থেকেই বিতরণ শুরু করেছে ইসি। চুক্তি অনুযায়ী এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই ৯ কোটিরও বেশি ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড পৌঁছে দিতে হবে। কিন্তু রাজধানীতে এখন পর্যন্ত এর বিতরণ কাজ শেষ না হওয়ায় নির্ধারিত সময়ে সারাদেশে ভোটারের হাতে স্মার্টকার্ড বিতরণ নিয়ে সন্দেহ রয়েছে খোদ নির্বাচন কর্মকর্তাদের মধ্যেই।
×