ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পুনে টেস্ট

ও’কেফে ঘূর্ণিতে দিশেহারা ভারত!

প্রকাশিত: ০৫:০০, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

ও’কেফে ঘূর্ণিতে দিশেহারা ভারত!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ টানা ছয় সিরিজ জয়, ১৯ টেস্টে অপরাজিত ‘নাম্বার ওয়ান’ বিরাট কোহলির দল। গত দেড় বছরে ঘরের মাটিতে ভারতীয়দের সাফল্যের মন্ত্রÑ স্পিন ট্র্যাক বানাও, এরপর রবিচন্দ্রন অশ্বিন-রবীন্দ্র জাদেজার ভেল্কিতে প্রতিপক্ষকে বিষিয়ে তোলো। ক্রিকেটের মোড়লরা এবার যেন নিজেদের পাতা ফাঁদেই আটকে গেল। পুনে টেস্টের দ্বিতীয়দিনে অস্ট্রেলিয়ার ২৬০ রানের জবাবে ১০৫ রানে অলআউট কোহলির দল। শেষ ১১ রানের মধ্যে ৭ উইকেট নেই স্বাগতিকদের, নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এটাই ভারতের সবচেয়ে বড় ধসের ঘটনা। ৩৫ রান দিয়ে ৬ উইকেট নিয়েছেন স্টিভ’কেফেÑ ক্যারিয়ারের মাত্র পঞ্চম ম্যাচ খেলতে নামা অস্ট্রেলিয়ানের ঘূর্ণিতে দিশেহারা বিশ্বের সেরা ব্যাটিং-লাইন। ৪ উইকেটে ১৪৩ রানে দিন শেষ করা অসিদের লিড ২৯৮ রানের। স্মিথ ৫৯ ও মিচেল মার্শ অপরাজিত ২১ রানে। ও’কেফের অবিশ্বাস্য বোলিংয়ের সৌজন্যে দুইদিনেই কার্যত চালকের আসনে স্টিভেন স্মিথের দল। ৯ উইকেটে ২৫৬ রান নিয়ে শুরু করা অস্ট্রেলিয়া সকালে ৫ বলের মধ্যে ২৬০ রানে অলআউট হয়। স্রোতের বিপরীতে ৬৩ বলে ৬১ রান করে আউট হন মিচেল স্টার্ক। আট নম্বরে নেমে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় এ রান করেন তিনি। ভারতের হয়ে উমেশ যাদব ৪, অশ্বিন ৩ ও জাদেজা নেন ২ উইকেট। এরপর কোহলিরা ব্যাটিংয়ে নামলে দৃশ্যপটে অস্ট্রেলিয়ান বোলিং। যার শুরুটা করেন স্টার্ক। দুর্দান্ত স্পেলে চেতেশ্বর পুজারা (৬) ও কোহলিকে (০) ফিরিয়ে প্রতিপক্ষকে ৪৪/৩-এ পরিণত করেন তুখোড় এই বাঁহাতি পেসার। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০৪ ইনিংস পর শূন্য রানে আউট হন সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। এর আগে ২০১৪ সালে কার্ডিফে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওয়ানডতে ক্রিস ওকসের বলে ০ রানে আউট হয়েছিলেন কোহলি। ১৭৩ আন্তর্জাতিক ইনিংসে ০ রানে আউট না হয়ে রেকর্ডটা অবশ্য পূর্বসূরি রাহুল দ্রাবিড়ের দখলে। লোকেশ রাহুল ও অজিঙ্কা রাহানের ব্যাটে ধাক্কা সামলে উঠেছিল ভারত। লাঞ্চের আগে রান ছিল ৩ উইকেটে ৭০, এক পর্যায়ে ৪ উইকেটে ৯৪। তখনই মনোযোগ হারান দারুণ সব শটে হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেয়া রাহুল। ও’কেফেকে এগিয়ে এসে মারতে গিয়ে লংঅফে ডেভিড ওয়ার্নারের হাতে ক্যাচ দেন সর্বোচ্চ ৬৪ রান করা রাহুল। নিমিষে ৯৪/৮ থেকে ১০৫-এ অলআউট ভারত। ১১ রানের মধ্যে নেই ৭ উইকেট। যা দেশটির টেস্ট ইতিহাসে সেরা ধসের নতুন রেকর্ড। এর আগে ১৯৯০ সালে ক্রাইস্টচার্চে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১৮ রানে শেষ ৭ উইকেট হারিয়েছিল মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনের দল। শেষ ৭ উইকেটের ৬টিই নিয়েছেন ও’কেফে। ৪.১ ওভারের অবিশ্বাস্য স্পেলে মাত্র ৫ রান দেন ৩২ বছর বয়সী বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনার। ১৩.১-২-৩৫-৬, আগের ৪ টেস্টে ১৪ উইকেট পাওয়া ও’কেফে করেছেন ক্যারিয়ারসেরা বোলিং। ভারতের মাটিতে কোন ভিনদেশী বাঁহাতি স্পিনারের তৃতীয় সেরা বোলিং ফিগার এটি। রাহুলের ফেরার ওভারের চতুর্থ বলেই আজিঙ্কা রাহানে (১৩) দ্বিতীয় সিøপে হ্যান্ডসকম্বের তালুবন্দী হন। ওভারের শেষ বলে ঋদ্ধিমান সাহা (০) সাজঘরে কোন রান না করেই। সিøপে তার ক্যাচটি নেন অধিনায়ক স্মিথ। দুই ওভার পর ও’কেফে আবার আঘাত হানেন। লেন্থ বল সুইপ করতে গিয়ে বল মিস করে স্ট্যাম্পড হন জয়ন্ত জাদব (২)। নাম্বার ওয়ান টিমের শেষ দুটি উইকেটও পকেটে পুরেন ও’কেফে। রবীন্দ্র জাদেজা (২) আগ্রাসন দেখাতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে ক্যাচ তুলে দেন। ১৯৪৭ সালে স্যার ডন ব্র্যাডমানের অস্ট্রেলিয়ার কাছে ৫৮ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল লালা অমরনাথের ভারত। এছাড়া শতরানের আগে অস্ট্রেলিয়ার কাছে অলআউট হয়েছে আরও দুবার। ১৯৪৮ সালে ৬৭ ও ১৯৪৭ সালে ৯৮ রানে। সবমিলিয়ে পুনের ১০৫ রানের ইনিংস রয়েছে সর্বনিম্ন রানের তালিকায় পঞ্চম স্থানে। ২০০৪ সালে মুম্বাইয়ে রাহুল দ্রাবিড়ের দল গুটিয়ে গিয়েছিল ১০৪ রানেÑ কোহলির এই যা সান্ত¡না। স্কোর ॥ অস্ট্রেলিয়া প্রথম ইনিংস ২৬০/১০ (৯৪.৫; ওভার; রেনশ ৬৮, ওয়ার্নার ৩৮, স্মিথ ২৭, শন মার্শ ১৬, হ্যান্ডসকম ২২, মিচেল মার্শ ৪, ওয়েড ৮, স্টার্ক ৬১, ও’কেফে ০, লায়ন ০, হেজলউড ১*; ইশান্ত ০/২৭, অশ্বিন ৩/৬৩, জয়ন্ত ১/৫৮, জাদেজা ২/৭৪, উমেশ ৪/৩২) ও দ্বিতীয় ইনিংস ১৪৩/৪ (৪৬ ওভার; স্মিথ ৫৯*, রেনশ ৩১, মিচেল মার্শ ২১*, হ্যান্ডসকম্ব ১৯; অশ্বিন ৩/৬৮)। ভারত ১ম ইনিংস ১০৫/১০ (৪০.১ ওভার; বিজয় ১০, রাহুল ৬৪, পুজারা ৬, কোহলি ০, রাহানে ১৩, অশ্বিন ১, ঋদ্ধিমান ০, জাদেজা ২, জয়ন্ত ২, উমেশ ৪, ইশান্ত ২*; স্টার্ক ২/৩৮, ও’কেফে ৬/৩৫, হেজলউড ১/১১, লেয়ন ১/২১)। ** দ্বিতীয়দিন শেষে
×