ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

লালফিতায় বন্দী বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেতু

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

লালফিতায় বন্দী বঙ্গবন্ধুর  স্বপ্নের সেতু

নিজস্ব সংবাদদাতা, রূপগঞ্জ, ২৪ ফেব্রুয়ারি ॥ গুনে গুনে ১৪ বছর পার। মাত্র দুটি স্প্যান ঠায় দাঁড়িয়ে। পালন করা হয়েছে অবরোধ-মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচী। তবুও যেন কোথায় আটকে আছে নিয়তি! সেতুটির ভাগ্যের শিকে খুলছে না কিছুতেই। কতিপয় প্রভাবশালীর ক্ষমতার লালফিতায় বন্দী হয়ে আছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সেতুটি। আর স্বপ্ন নিয়ে প্রহর গুনছে রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠের ও রূপগঞ্জের লাখ মানুষ। এ সেতু নির্মাণ হলে এলাকার মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যেত। খুলে যেত সম্ভাবনার দুয়ার। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার সেতুবন্ধ তৈরি হতো। কমে যেত রাজধানী ঢাকার যানজট। একটি মাত্র সেতুর জন্য রূপগঞ্জসহ আশপাশের লাখ লাখ মানুষকে ১২ কিলোমিটার পথ ঘুরে রাজধানী ঢাকায় যেতে হয়। অথচ এ সেতুটি হলে মাত্র ২০ মিনিটে এলাকার বাসিন্দারা ঢাকায় যেতে পারবে। স্বাধীনতার পর থেকে সেতুটির কথা এলাকাবাসী শুনে এলেও গত ৪৬ বছরে এটির বাস্তবায়ন হয়নি। সেতুটি নিয়ে দু’দফায় টেন্ডারও হয়েছে। বুক ভরা আশা আর স্বপ্ন নিয়ে এখনও লাখ মানুষ সেতুটিকে ঘিরে বুক বেঁধে আছেন। সরেজমিনে ঘুরে ও এলাকার প্রবীণ লোকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকার সঙ্গে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগের জন্য স্বাধীনতার পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান রামপুরা-কায়েতপাড়া সড়ক ও বালু নদে সেতু নির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিলেন। ’৭৫ পরবর্তী বিভিন্ন সরকারের মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যরা এ সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। গত ৪৬ বছরে ঢাকার সঙ্গে সহজে যোগাযোগের জন্য বালু নদের রূপগঞ্জ অংশের চনপাড়া, ইউসুফগঞ্জ ও ভোলানাথপুরে তিনটি সেতু নির্মাণ করা হলেও এ সেতুটির ভাগ্যে বইছে বঞ্চনা। নারায়ণগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, প্রস্তাবিত রামপুরা-কায়েতপাড়া সড়কের বালু নদে সেতুর অনুমোদন হয় ২০০১ সালে। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে ৬ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে এ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু ২০০৩ সালে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের তত্ত্বাবধানে এক বছরের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার দায়িত্ব পান তৎকালীন ঠিকাদার জাহিদ হোসেন। গত ২০০৪-০৫ অর্থবছরে বরাদ্দ মেলে মাত্র ৫০ লাখ টাকা। এরপর আর কোন বরাদ্দ দেয়া হয়নি। ফলে দুটি স্প্যান নির্মাণের পর সেতুর নির্মাণ কাজ থমকে যায়। সূত্রটি আরও জানায়, নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় সেতুর অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করতে এখন অতিরিক্ত অর্থের প্রয়োজন। সেতুর জন্য নতুন করে সাড়ে সাত কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। তবে এখন কবে নাগাদ নির্মাণ কাজ শুরু হবে তা অনিশ্চিত। স্থানীয়রা জানান, সেতু নির্মাণে প্রয়োজনীয় জমি হুকুম দখল করা হয়নি। জমি মালিকদের পরপর দুটি নোটিসও দেয়া হয়েছে। প্রস্তাবিত সেতুর দু’পাশের জমির মালিকরা ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় সেতু নির্মাণে বিরোধিতা করেছে। এ নিয়ে হাইকোর্টে মামলাও চলমান রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, সেতুটি নির্মাণ হলে রূপগঞ্জসহ রাজধানী ঢাকার উপকণ্ঠের খিলগাঁও, সবুজবাগ, ডেমরা ও আশপাশের কয়েক লাখ মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরে যাবে। খুলে যাবে সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। তৈরি হবে নতুন নতুন শিল্পকারখানা ও গার্মেন্ট শিল্প। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থানের। সেতুটি নির্মিত হলে কাঁচপুর ও সুলতানা কামাল সেতুর যানজট কমে যাবে। দেশের উত্তরাঞ্চল সিলেট, ভৈরব, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদীসহ ১০ জেলার যানবাহন অতি সহজে ভুলতা দিয়ে কায়েতপাড়া হয়ে রাজধানী রামপুরায় প্রবেশ করতে পারবে। খামারপাড়া এলাকার অশীতীপর বৃদ্ধ আউয়াল আলী বলেন, ’৭১ সালের পরে বাসাবো মাঠে এক জনসভায় শেখ মুজিব রামপুরা-কায়েতপাড়া রাস্তা আর বালু গাঙ্গে (নদে) বিরিজ (সেতু) কইরা দিব কইছিল। কত সরকার আইলো-গেলো আমাগো স্বপ্ন পূরণ অইলো না। শেখ মুজিব বাইচ্যা থাকলে এ বিরিজ হগলতের আগে অইতো। স্থানীয় সংসদ সদস্য গাজী গোলাম দস্তগীর (বীরপ্রতীক) সেতু মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দফতরে দৌড়ঝাঁপ করছেন। আশা করা যাচ্ছে খুব শীঘ্রই আশার আলো দেখা যাবে। সংসদ সদস্য গাজী গোলাম দস্তগীর বলেন, বালু নদের সেতুটি হলে রূপগঞ্জের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ খুব সহজ হবে। আর কায়েতপাড়া ইউনিয়নবাসীর জন্য এ সেতু স্বপ্ন।
×