ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রাজাকার থেকে মুক্তিযোদ্ধা আদম আলী আজও উপেক্ষিত

প্রকাশিত: ০৪:৫৩, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

রাজাকার থেকে মুক্তিযোদ্ধা আদম আলী আজও উপেক্ষিত

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ সেদিন (১৯৭১ সালে) সর্বহারা নকশাল বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে নাম লিখিয়েছিলাম রাজাকারের খাতায়। মাত্র ১৫দিন রাজাকারের দলে থেকে মুক্তিযুদ্ধের ৯নং সেক্টরের গ্রুপ কমান্ডার নিজাম উদ্দিন আকনের সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে ৩৬টি বিভিন্ন অস্ত্র ও তিন পেটি গুলিসহ ৩০ স্থানীয় রাজাকার নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। দেশ স্বাধীনের পর একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সকল প্রকার কাগজপত্র থাকা সত্ত্বেও আজও আমার নাম মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়নি। বরং যাদের কারণে সেদিন (১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের প্রথমার্ধে) নামেমাত্র রাজাকারের দলে নাম লিখিয়েছিলাম তাদের উত্তরসূরিরা শেষ বয়সে আজও আমাকে হত্যার পরিকল্পনা করে আসছে। তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে কথাগুলো বলছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার থেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পাক সেনাদের সঙ্গে একাধিক সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে বীরত্বের ভূমিকা পালন করা বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বাটাজোর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের মৃত ফরমান সরদারের পুত্র অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক মোঃ আদম আলী সরদার (৭০)। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করি। আন্দোলন চলাকালীন কুখ্যাত সর্বহারা লিডার সিরাজ শিকদারের নেতৃত্বে গৌরনদী ও বাবুগঞ্জ উপজেলায় সর্বহারা দল গড়ে ওঠে। যার আঞ্চলিক প্রধানের দায়িত্বে ছিল হোসনাবাদ এলাকার জনৈক খসরু, আলাউদ্দিন প্যাদার পুত্র জাহাঙ্গীর, টুলু ও আধুনা গ্রামের সত্য দাস। তারা সর্বহারা দল গঠন করে ওই এলাকায় লুটপাটসহ ধনাঢ্য ও বুদ্ধিমান লোকদের নির্বিচারে হত্যা করে। তাদের ভয়ে ওই সময় এলাকার অসংখ্য মানুষ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এক পর্যায়ে তারা পূর্ব শত্রুতার জের ধরে আমাকেও (আদম আলী সরদার) হত্যার জন্য একাধিকবার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। আদম আলী সরদার বলেন, নিরুপায় হয়ে সর্বহারা সন্ত্রাসীদের হাত থেকে জীবন রক্ষার জন্য ১৯৭১ সালের আগস্ট মাসের শেষের দিকে রাজাকারের খাতায় নাম লিখিয়েছিলাম। ওইদলের সঙ্গে ১২দিন বাটাজোরে থাকার পর আমাকেসহ অন্যান্য রাজাকারকে থানায় পাঠিয়ে দেয়ার তিনদিন পর নিজাম উদ্দিন আকন ও আব্দুর রাজ্জাক ভারত থেকে প্রশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে দেশে আসেন। আমি অতিগোপনে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্নভাবে ৩০ রাজাকারকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অংশগ্রহণ করার আশ্বাস দিয়ে কৌশলে থানা থেকে ৩৬টি বিভিন্ন অস্ত্র, তিন পেটি গুলিসহ নিয়ে থানা থেকে পালিয়ে আসি।
×