ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

লেখক সৃষ্টিতে ভূমিকা অনন্য

প্রকাশিত: ০৪:৫১, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

লেখক সৃষ্টিতে ভূমিকা অনন্য

বাংলা সাহিত্যের দর্শন ও শিল্প-সাহিত্যগুণের বিচারে কিছুটা কমতি থাকলেও লেখক সৃষ্টিতে তাদের চিন্তা-চেতনার বিকাশ ঘটায় লিটলম্যাগ। লিটল ম্যাগাজিনের লেখকরা সাধারণত তরুণ ও সংগঠনভিত্তিক সমষ্টিগত হয়ে থাকে। মূলত সংগঠনের উদ্যোগেই বেশিরভাগ লিটলম্যাগ প্রকাশিত হয়। সংগঠনের সভাপতি বা সম্পাদক নিজেই প্রকাশকের ভূমিকা পালন করে। ক্ষুদ্র প্রকাশনা সংগঠন বা ব্যক্তি উদ্যোগে লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশিত হলেও এর আবেদন একেবারে কম নয়। কখনও কখনও সংগঠনের মুখপত্র হিসেবেও লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়ে থাকে। সারা বছর ধরেই মাঝে মধ্যে লিটলম্যাগ প্রকাশিত হয়। তবে বইমেলা উপলক্ষে প্রকাশনার মাত্রাটা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বিশেষ করে একুশের চেতনায় লিটলম্যাগের প্রকাশনা একটু বেশিই চোখে পড়ে। একুশ উপলক্ষে মফস্বল শহরে লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয় বিষয়ভিত্তিক এবং বর্ধিত কলেবরে। এ দেশে ষাটের দশকে লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশের আন্দোলন শুরু হলেও লিটলম্যাগের শেকড় দেশের বাইরে। নানা সমস্যা মোকাবেলা করে মফস্বল শহর অঞ্চলের লিটলম্যাগ প্রকাশকরা টিকে আছে কোনমতে। সাহিত্য অঙ্গনে লিটলম্যাগের যে আবেদন নেই, তা বলা যাবে না। সাধারণত তরুণ লেখকদের সাহিত্যকর্ম শুরু হয় লিটল ম্যাগাজিনের মাধ্যমে এবং এ থেকেই লেখক-কবি-সাহিত্যিকের সৃষ্টি হয় বলা চলে। পাঠক সৃষ্টিতেও লিটল ম্যাগাজিনের ভূমিকা রয়েছে। পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় এবং বড় বড় প্রকাশনার ভিড়ে লিটলম্যাগের প্রকাশনা ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। নিতান্তই সাহিত্যানুরাগী বা সাহিত্য পাগল না হলে লিটলম্যাগ প্রকাশ পায় না। সমাজের অধিকাংশ শিক্ষিত মানুষ জানে না লিটলম্যাগ কী? তবে না জানার কারণে সাধারণ মানুষকে ঢালাওভাবে অভিযোগ করা সমীচীন নয়। লিটল ম্যাগাজিনের গুরুত্ব সর্বসাধারণের মধ্যে পরিচিত করার দায়িত্ব যাদের, তারা অনেকটা পিছিয়ে। তবুও যে লিটলম্যাগ প্রকাশনা বন্ধ হয়ে গেছে তা নয়। নানা প্রতিকূলতার মাঝেও ধীরে ধীরে অব্যাহত রয়েছে লিটল ম্যাগাজিনের যাত্রা। স্বল্প পরিসরে হলেও এ যাত্রা থেমে থাকেনি এবং থাকবে না-যতদিন তরুণ লেখকদের তারুণ্য আছে। কারণ লিটলম্যাগ তরুণ লেখকদের দর্শন, শিল্প-সাহিত্য কর্মে হাতেখড়ি দেয়। সুতরাং তাদের উদ্যোগেই লিটলম্যাগ টিকে থাকবে। এ প্রত্যাশা মফস্বল শহরের লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশকদের। ৫০-এর দশক থেকে ২০১৬ পর্যন্ত মাদারীপুরে ৪৫ সাহিত্য সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। এ সকল সংগঠনের মাধ্যমে বহু সঙ্কলন বা লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়েছে। যার অধিকাংশ ছিল একুশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক। এসব লিটল ম্যাগাজিনে লেখালেখি করে জন্ম নিয়েছে অনেক কবি-সাহিত্যিক। ১৯৫২ সালের পরবর্তী-স্বাধীনতা আগ পর্যন্ত যে কটি সাহিত্য সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে তার কোনটিই আজ টিকে নেই। স্বাধীনতা-পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে যেগুলোর আত্মপ্রকাশ ঘটেছে তারও প্রায় সিংহভাগ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অস্তিত্ব সঙ্কটের মধ্যে কোন রকমে টিকে আছে সামান্য কটি সংগঠন। এ সকল সংগঠন থেকে কখনও কখনও অনিয়মিত কিছু লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশিত হয়। ১৯৮৭ সালে ভাষাসৈনিক অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, অধ্যাপক এস.এম ওয়াহিদুজ্জামান, অধ্যাপক খন্দকার মিজানুর রহমান, আনিসুর রহমান, সুবল বিশ্বাস ও সুব্রত দাসের চেষ্টায় ‘সন্দীপন’ সাহিত্য সংস্থার আত্মপ্রকাশ ঘটে। ভাষাসৈনিক অধ্যাপক মতিয়ার রহমান ছিলেন সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। ১৯৯০ সালে অধ্যাপক খন্দকার মিজানুর রহমানকে সভাপতি, আনিসুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক ও সুবল বিশ্বাসকে সাহিত্য সম্পাদক নির্বাচিত করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। এ সংগঠন থেকে ‘সন্দীপন’ নামে ত্রৈ-মাসিক লিটলম্যাগ প্রকাশ করা হতো। এতে প্রাধান্য পেয়েছে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক লেখা। এছাড়া প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ভাঁজপত্র এবং সঙ্কলন বা লিটল ম্যাগাজিন প্রকাশিত হতো। প্রকাশিত হতো একুশের সঙ্কলন ‘চিন্ময় রক্তপাত’ স্বাধীনতা সঙ্কলন ‘স্বদেশ আমার’ বিজয় দিবস সঙ্কলন ‘বিজয়ের প্রসন্ন প্রহর’। যা ছিল সংগঠনের নিয়মিত প্রকাশনা। ১৯৮৮ সালে মাদারীপুর সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক সংস্থা নামে সংগঠন আত্মপ্রকাশ করেই প্রকাশ করে ‘একুশের সংকলন’। এ সঙ্কলনের প্রতিটি লেখা ছিল একুশের চেতনাভিত্তিক ও মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার মননে সমৃদ্ধ। -সুবল বিশ্বাস, মাদারীপুর থেকে
×