ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিলেটে সাংস্কৃতিক উৎসব

প্রকাশিত: ০৪:৫০, ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

সিলেটে সাংস্কৃতিক উৎসব

‘বেঙ্গল ফাউন্ডেশন’ কর্তৃক আয়োজিত দশ দিনব্যাপী বর্ণাঢ্য সাংস্কৃতিক উৎসব শুরু হয়েছে সিলেটে। ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এই মনোমুগ্ধকর আয়োজন বাঙালী সংস্কৃতি চর্চার এক অনবদ্য মিলনমেলা। ‘বেঙ্গল ফাউন্ডেশনে’র নানামাত্রিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইতোমধ্যে ঢাকায় পরিবেশিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি ঢাকার বাইরে এত বড় উৎসব এই প্রথম শুরু করেছে। দশ দিনব্যাপী উৎসবে যে বিচিত্রমুখী কর্মসূচী প্রণয়ন করা হয়েছে তা যেমন আনন্দ এবং তৃপ্তিদায়ক, একইভাবে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে এর তাৎপর্যও সুদূরপ্রসারী। হাসন রাজার দেশ সিলেটের সাংস্কৃতিক এবং নৈসর্গিক বৈভব যেমন আকর্ষণীয় এবং বৈচিত্র্যসমৃদ্ধ, একইভাবে হযরত শাহজালালের মাজারকে ঘিরেও রয়েছে এক নির্মল অনুভব এবং আধ্যাত্মিক চেতনা। সব মিলিয়ে সিলেটের যে আত্মিক এবং পারিপার্শ্বিক রূপমাধুরী তারই বিশুদ্ধ আবহে এই সাংস্কৃতিক অভিযোজন চা শিল্পে সমৃদ্ধ এই শহরটিকে নতুন মাত্রা দিয়েছে বললে অত্যুক্তি হয় না। সংস্কৃতি যে কোন দেশের ঐতিহ্য এবং সম্পদ। শুধু তাই নয়, শক্তি আর গতিও বটে। আর এই ধরনের সাংস্কৃতিক আয়োজন দেশ ও মানুষকে সমৃদ্ধ করবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে যে বিরাট আয়োজনে এই সাংস্কৃতিক অভিযাত্রাটির পথ পরিক্রমা শুরু হলো তা দেশের জন্য শুভযোগ এবং মঙ্গল যাত্রার এক বিশিষ্ট উদ্দীপনা। এত বড় অনুষ্ঠানটির সূচনালগ্নে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আরও উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা এবং চেয়ারপার্সন ফজলে হাসান আবেদ। বিশিষ্ট জনদের কথায় উঠে আসে সংস্কৃতি কিভাবে মানবতার মুক্তি এবং মানুষের কল্যাণে তার সমস্ত শুভ কর্মকে নিবেদন করে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে উদ্দীপ্ত করে এবং উগ্র মৌলবাদকে সমূলে উৎখাত করতে সুস্থ সংস্কৃতি চর্চার কোন বিকল্প নেই। সংস্কৃতির নানামাত্রিক অঙ্গন, গীত, নৃত্য, বাদ্য তো আছেই, তার সঙ্গে একাত্ম করা হয় ঐতিহ্যিক ধারায় চলে আসা বিভিন্ন চিত্রশিল্পীর শৈল্পিক এবং নান্দনিক দ্যোতনা। নাটক আর চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর মতো উপভোগ্য আয়োজন অগণিত দর্শক-শ্রোতাকে মুগ্ধতার জায়গায় নিয়ে যাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। দেশ-বিদেশের জ্ঞানী-গুণীর মিলনমেলায় এত বড় উৎসবের আকর্ষণকে আরও বাড়িয়ে দেবে বললে বেশি বলা হবে না। এই সাংস্কৃতিক সম্মিলনটি দেশের সংস্কৃতির সমৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। সংস্কৃতি যেমন মানুষের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে, একইভাবে মানবিক মূল্যবোধকেও ভেতর থেকে জাগিয়ে তোলে। সংস্কৃতির মিলন ধারায় মানুষে মানুষে ভেদাভেদ নির্মূল হয়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে যে একাত্মতার বন্ধন সুদৃঢ় হয় তা সমাজ সভ্যতার এক অনুপম সম্পদ। বিশ্বজুড়ে যে অস্থিরতা এবং উন্মাদনা সবাইকে যেভাবে উদ্বিগ্ন এবং উৎকণ্ঠার মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে সাংস্কৃতিক সুস্থতা সেখানে যৌক্তিক কোন প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিজ্ঞজনদের ধারণা। উদ্ভূত বিভিন্ন সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে সংস্কৃতি চর্চার অবাধ গতি সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে এ আশা করাই যায়। ঢাকার বাইরে এই ধরনের উৎসব শুধু সিলেটেই নয়, দেশের অন্য গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতেও আয়োজন করা আবশ্যক। এতে জনগণের জীবনে যে শুদ্ধতা আর স্নিগ্ধতা বয়ে আনবে এর কোন বিকল্প আর হতে পারে না। সংস্কৃতি চর্চা ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে যেমন এক সুতায় বেঁধে দেয়, তেমনি সর্বমানুষের মধ্যেও নিয়ে আসে মিলনের ঐকতান। যে বিভেদ আর ব্যবধানে মানুষ মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে যায়Ñ বন্ধন আলগা হয় তা কখনই সমাজ সংসারকে সংহত করতে পারে না। সভ্যতার ভিতও মজবুত হয় না। আর তাই আর্থ-সামাজিক আর রাজনৈতিক মুক্তির অপরিহার্য শর্ত হিসেবে সাংস্কৃতিক মুক্তিকেও বিবেচনায় আনতে হবে। অপসংস্কৃতির সমস্ত বন্ধন জাল ছিন্ন করে সুস্থ সংস্কৃতির ধারা অবারিত করতে হবে।
×